কুমিল্লায় উৎসবমূখর পরিবেশে অনুষ্ঠিত হলো গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্যবাহী বিলুপ্তপ্রায় দাড়িয়াবান্দা খেলা। জেলার মুরাদনগর উপজেলার মোচাগড়া আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে এ খেলা অনুষ্ঠিত হয়। শুক্রবার সন্ধ্যায় বে-সরকারি স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান নব-উচ্ছাস যুব সংগঠন এই খেলার আয়োজন করেন।
যাত্রাপুর ইউপি চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদের সভাপতিত্বে উক্ত খেলায় প্রধান অতিথি ছিলেন, কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আলমগীর কবির।বিশেষ অতিথি ছিলেন, সমাজসেবক সাইফুল করিম খান ইমন, মুরাদনগর প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি হাবিবুর রহমান, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আরিফুল ইসলাম শাহেদ।
অন্যান্যের মধ্যে আরো উপস্থিত ছিলেন, মুরাদনগর প্রেসক্লাবের কোষাধ্যক্ষ মাওলানা আবু ইউসুফ, সাংবাদিক ফয়জুল ইসলাম ফয়সাল, ইউপি সদস্য আক্তার হোসেন, আনিসুজ্জামান দুলাল, সমাজ সেবক রুহুল আমিন, নাছির উদ্দিন, নব-উচ্ছাস যুব সংগঠনের সভাপতি ইমরান আহম্মেদ, সহ-সভাপতি গোলাম মোস্তফা, ওমর ফারুক, সাধারণ সম্পাদক আল-আমিন, সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম সারওয়ার প্রমুখ।
তিন রাউন্ডের খেলা উপভোগ করতে মাঠের চারপাশে ভিড় জমান শত শত উৎসুক লোকজন। খেলায় মোচাগড়া সেলিম মুন্সী একাদশকে হারিয়ে ভবানীপুর ইয়ং স্টার একাদশ' জয়লাভ করে। খেলার ধারাবিবরণীতে ছিলেন, নব-উচ্ছাস যুব সংগঠনের কোষাধ্যক্ষ গোলাম ছামদানী।প্রধান অতিথির বক্তব্যে কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আলমগীর কবির বলেন, ‘এ খেলার আয়োজন করায় এলাকার যুবসমাজকে ধন্যবাদ জানাই। যুবকেরাই আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। নিজেদের ঐতিহ্য ধরে রাখতে তাঁদেরই ভূমিকা রাখতে হবে।’
সভাপতির বক্তব্যে যাত্রাপুর ইউপি চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ বলেন, গ্রাম-বাংলার যে কয়েকটি প্রাচীন খেলা আছে, তার মধ্যে অন্যতম হলো দাড়িয়াবান্দা। খেলাটি এখন বিলুপ্তির পথে। মোচাগড়া গ্রামের মানুষ এখনো এই খেলাকে প্রাচীন ঐতিহ্য হিসেবে ধরে রেখেছে। দর্শকরা খেলাটি দেখে বেশ আনন্দ পায়।খেলার পৃষ্ঠপোষক মুরাদনগর প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি হাবিবুর রহমান বলেন, ক্রিকেট ও ফুটবল খেলায় সরকার এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো পৃষ্ঠপোষকতা করে থাকেন।
কিন্তু দাড়িয়াবান্দার মতো গ্রামীণ খেলাধুলায় কেউ সহজে এগিয়ে আসেন না। তাই দিন দিন দাড়িয়াবান্দা খেলা হারিয়ে যাচ্ছে। তিনি আরো বলেন, সরকারি ও বেসরকারি ভাবে সহযোগিতা পেলে দাড়িয়াবান্দা খেলা হয়ে উঠতে পারে বিনোদনের অন্যতম মাধ্যম। ওই সময় খেলোয়াড়রা গ্রামীণ এই খেলা টিকিয়ে রাখতে সরকার ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতা কামনা করেন।
খেলায় রেফারির দায়িত্বে থাকা মোচাগড়া আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের অফিস সহকারী জাহাঙ্গীর আলম জানান, আগে অনেক নামকরা দাড়িয়াবান্দা খেলোয়াড় ছিল। তাঁরা আশ-পাশের চার-পাঁচটি জেলায় গিয়ে খেলতেন।
গ্রামীণ খেলাটি দিনে দিনে হারিয়ে যাচ্ছে। তারপরও এই প্রজন্মের ছেলেরা দাড়িয়াবান্দাকে টিকিয়ে রাখতে চেষ্টা করে যাচ্ছে। আয়োজকেরা জানায়, ‘দাড়িয়াবান্দা একটা গ্রামীণ খেলা। এখন সবাই ডিজিটাল বিনোদনের প্রতি ঝুঁকছে। এতে গ্রামীণ খেলা ধুলা প্রায় বিলুপ্তির পথে।
গ্রামীণ ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে এই খেলার আয়োজন করা হয়েছে।’খেলা উপভোগ করতে আসা নানা বয়সী এমন ১০ জন দর্শক জানায়, প্রতিবছর অপেক্ষায় থাকি কখন দাড়িয়াবান্দা খেলা অনুষ্ঠিত হবে। প্রবীণদের কেউ কেউ খেলা দেখতে এসে কিছু সময়ের জন্য সেই কিশোর বয়সে হারিয়ে যান বলে জানান। এই প্রজন্মের যুবকদের কাছেও খেলাটি বেশ উপভোগ্য বলে জানান তারা।
আয়েশা আক্তার/অননিউজ24