বিশ্বকাপে ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা স্বপ্নের ফাইনাল এখনও পর্যন্ত হয়নি। বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্ব এমনভাবে সাজানো হয়, যেন দুই দল ফাইনালে মুখোমুখি হতে পারে এবং তেমনটা হলে সেটা হবে ফুটবল বিশ্বের জন্য এক স্মরণীয় এবং ঐতিহাসিক ঘটনা।
তবে, বিশ্বকাপের ইতিহাসে অন্য কোনো পর্বে দেখা হলেও, স্বপ্নের ফাইনালে ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা কখনোও মুখোমুখি হয়নি। এবারও সম্ভাবনা রয়েছে, সর্বোচ্চ সেমিফাইনালে দেখা হওয়ার। তবে, ব্রাজিল সুপারস্টার নেইমার জানালেন, বন্ধু মেসিকে বলে এসেছেন- ফাইনালে দু’জনের দেখা হবে এবং মেসিদের হারিয়েই বিশ্বকাপ জিতবে ব্রাজিল।
বিশ্বকাপের আর মাত্র তিনদিন বাকি। এর আগে বৃটিশ পত্রিকা টেলিগ্রাফের সঙ্গে এক এক্সক্লুসিভ সাক্ষাৎকারে মজা করেই এ কথা বলেন নেইমার। হাসি-ঠাট্টার মধ্যেই একে অপরকে এমন কথা বলেছেন বলে জানিয়েছেন ব্রাজিল তারকা।
বিশ্বকাপে জি গ্রুপে রয়েছে ব্রাজিল। গ্রুপসঙ্গী সুইজারল্যান্ড, সার্বিয়া এবং ক্যামেরুন। ব্রাজিলের বিশ্বকাপ অভিযান শুরু হবে ২৪ নভেম্বর, বৃহস্পতিবার নোভাক জোকোভিচের দেশ সার্বিয়ার বিরুদ্ধে।
টেলিগ্রাফের সাথে সাক্ষাৎকারে ব্রাজিলিয়ান তারকা মেসির সঙ্গে সম্পর্ক এবং বিশ্বকাপ নিয়ে দু’জনের চিন্তা-ভাবনা সম্পর্কে বলেছেন, ‘আমরা এমনিতে বিশ্বকাপ নিয়ে বেশি কথা বলি না; কিন্তু মাঝে মাঝে আমরা হাসি-ঠাট্টা করি। যেমন, ফাইনালে যদি আমাদের লড়াই হয়, তাহলে কী হবে? আমি তো মেসিকে বলেছি, আমিই চ্যাম্পিয়ন হব আর তোমার বিরুদ্ধে জিতব। এই নিয়ে দু’জনে হাসাহাসিও করেছি।’
প্যারিস সেন্ট জার্মেইয়ে দুই সতীর্থ এমবাপে এবং মেসিকে নিয়ে নেইমার বলেন, ‘মেসি এবং কিলিয়ান এমবাপের পাশে খেলতে পারাটা দারুণ অভিজ্ঞতা। ওরা দু’জনেই অসাধারণ ফুটবলার। আর মেসিকে তো অনেক আগে থেকেই বিশ্বের সেরা ফুটবলার বলা হয়।’
ফ্রান্সের তারকা ফুটবলার এমবাপের প্রশংসাও করেন নেইমার। তিনি বলেন, ‘কিলিয়ান তরুণ ফুটবলার। সে ক্রমশ উন্নতি করে চলছে। নিজের দক্ষতা সবার সামনে তুলে ধরছে। সে আরও উন্নতি করবে। দারুণ ফুটবলারদের পাশে খেলাটা আমি সব সময়ই পছন্দ করি। তাহলে জেতার সুযোগ বেড়ে যায়।’
সাক্ষাৎকারে নেইমার পরিষ্কার জানিয়েছেন, বিশ্বকাপ জেতাটা তার জীবনের সবচেয়ে বড় স্বপ্ন এবং কাতারে সে স্বপ্ন সফল করতে চান তিনি। নেইমারের কথায়, ‘আমার সবচেয়ে বড় স্বপ্ন হল বিশ্বকাপ জেতা। যখন থেকে বুঝতে শিখেছি, ফুটবল খেলাটা কী, তখন থেকেই আমার স্বপ্ন বিশ্বকাপ জেতা। সেই স্বপ্ন সফল করার আরেকটা সুযোগ পাচ্ছি। আশা করছি, এবার স্বপ্নটা সফল হবে।’
তিতের অভিনব অনুশীলন
এদিকে, বিশ্বকাপ শুরুর আগে অভিনব অনুশীলনে নজর কাড়লেন ব্রাজিল কোচ তিতে। ইতালির তুরিনে চলছে ব্রাজিলের বিশ্বকাপ ক্যাম্প শিবির। সেখানেই ফুটবলারদের বল নিয়ন্ত্রণ দক্ষতা বাড়াতে তিতে নতুন পদ্ধতি চালু করেছেন। ফুটবলারদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, যে কোনো পরিস্থিতিতে উড়ে আসা বলকে এক সুযোগে নিয়ন্ত্রণে এনে নিখুঁত পাস দিতে হবে সতীর্থদের।
৩০ মিটার উঁচুতে লাগানো হয়েছে একটি বিশেষ ড্রোন, যা ঘুরছে পুরো মাঠে। কোচ বাঁশি বাজানোর পরেই সেই ড্রোন থেকে প্রচণ্ড গতিতে নেমে আসছে বল। নেইমারসহ ব্রাজিল দলের বাকি ফুটবলারদের বলা হয় সেই বল প্রথম সুযোগেই নিয়ন্ত্রণে এনে নিমেষে পাস বাড়াতে।
এই পদ্ধতির অনুশীলনে সবার মন জয় করে নেন নেইমার। অনায়াস ভঙ্গিতে ডান পায়ে সেই বল নিজের নিয়্ন্ত্রণে নিয়ে ফেলেন। যা দেখে সতীর্থরা ছুটে এসে তাকে ঘিরে উল্লাসে মেতে ওঠেন।
তবে ব্যর্থও হয়েছেন অনেকে। টটেনহ্যাম তারকা রিচার্লিসন বলের গতি বোঝার আগেই তা মাটিতে আছড়ে পড়ে উপরের দিকে উঠে যায়। ম্যানইউ তারকা অ্যান্টোনিও ব্যর্থ; কিন্তু নেমারের মতোই সফল হয়েছেন রিয়াল মাদ্রিদ তারকা ভিনিসিয়ুস জুনিয়র এবং এডার মিলিতাও।
তবে এই অভিনব অনুশীলনের মধ্যেও চাপা দুশ্চিন্তা রয়ে গেছে ব্রাজিল শিবিরে। অনুশীলনে ডিফেন্ডার মারকুইনহোস ছিলেন না মঙ্গলবার। যা নিয়ে রীতিমতো জল্পনা শুরু হয়েছে। শোনা যাচ্ছে, তার চোট আছে; কিন্তু কী চোট, সেটা কেউ বলছেন না।