কুসিক নির্বাচনকে পুঁজি করে এখন কুমিল্লার নির্বাচনী মাঠে ‘মৌসুমী রিপোর্টার’দের পদচারনায় সাধারণ মানুষ আর সম্ভাব্য প্রার্থীরা প্রতিনিয়ত ধোকায় পড়ছেন আর সম্মানি বাবদ টাকা পয়সাও হারাচ্ছেন।
এদিকে মনোনয় জমা দেয়ার প্রথম দিবস থেকে আজ অব্দি ওই সকল তথাকথিত ‘মৌসুমী সাংবাদিকরা বেশ বহাল তবিয়তে নির্বাচনী মাঠকে উত্তপ্ত করে রেখেছেন। এদের কোনো শিক্ষা বা সাংবাদিক প্রশিক্ষণ নেই বললেই চলে। কালে ভদ্রে প্রেস ক্লাবের সহযোগিতায় কিংবা অন্য কোন মাধ্যমে দু’চারটি ওয়ার্কসপে প্রশিক্ষণের সার্টিফেকেট তারা সংগ্রহ করেছে। এর চেয়ে বেশি নয়। তাদের নেই কোনো জানা পিআইবি থেকে সাংবাদিকতায় প্রশিক্ষণ। এরা শুধু মক্কেল পাকড়াও করার ধান্দাবাজী টা বেশ পারদর্শী। এই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ভাড়া করা ক্যামেরা আর একটি ‘বোম্ব’ (মাইক্রোফোন) যোগাড় করে লগো সেঁটিয়ে পাবলিকের কাছে হাজির হতে দেখা যায়। অনেক সময় সরকারি-বেসরকারী অনুষ্ঠানে এদের দাপট এমনভাবে পরিদর্শন করে মনে হয়-এরা ন্যাশনাল চ্যানেলের একেক জন মহারথি। মিডিয়াতে তাদের প্রচন্ড সুনাম আছে। অথচ বিন্দুমাত্র এ সবের ধারে কাছেও নেই তারা। কুমিল্লা ইদানিং কয়েকটা মেয়ে সাংবাদকর্মীর দেখা মিলে। এদের নিয়ে মুখোরোচক অনেক শব্দ কানে ভেসে আসে।
রাতে বেরাতে দিনে দুপুরে সার্বক্ষণিক মোবাইল ফোনে লাইভ প্রোগামের নামে টাকা হাতিয়ে নেয়ার বিজনেসটা বেশ ভালোভাবে রপ্ত করেছে। সাথে থাকে একটা অখ্যাত চ্যানেলের বোম্ব। যা দেখে মানুষ খুব সহজেই বিশ্বাস করে ধোকা খায়। ওই সকল উঠতি নব্য সাংবাদিকর্মীর নামে যারা মাঠ গরম করে রাখছে তাদের কোনো বৈধতা নেই। একটা ‘ডোমেইন’ কেউ কেউ যোগার করতে পারলেও অনেকের ওয়েবসাইড অস্থায়ী ভাবে ফেস বুক পেইজ ব্যবহার করে আসছে-যা সরকারি নীতিমালার বাইরে। যে-যেভাবে পাড়ছেন চুটিয়ে সাংবাদিকতার নামে হাল্কা ব্যবসা করে যাচেছ এই নির্বাচনকে সামনে রেখে। এই মওসুমটা হয়তো জুন পর্যন্ত চলবে। কেননা নির্বাচনের শেষে এদের আর দেখা মিলবে না। মিশে যাবে আগে যেমন ছিলো- তেমনই, সেই কাতারে।
তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ওই সকল নারী পুরুষ সাংবাদিকদের তোড় জোড়ে সিনিয়র অনেক সংবাদকর্মী আর ন্যাশনাল চ্যানেলের জেলা প্রতিনিধিরা পুরোপুরি অসহায় হয়ে পড়েন। মনে মনে ক্ষোভ প্রচুর তাদের। কি থেকে কি হয়ে গেলো এ শহরে। কুমিল্লার মিডিয়া এমন ছিল না।
নতুন ধান্দায় এসে কাজ করছে-সাংবাদিকার প্লাটফর্ম থেকে। এ জন্য কেউ কিছুই বলছেন না। যাদের বৈধতা আছে তারা চুপচাপ শুধু দেখে যাচ্ছেন- অসহায় তারা। কিছুই করার নেই। কেননা তাদের দল অনেকভারী। অনেকে মনে করছেন-এই সকল মোবাইল ফোন কেন্দ্রীক ধান্দাবাজ সংবাদকর্মী নামধারীদেরকে এখনই ঝেটিয়ে বিদায় করা উচিত। এদের মাঝে কয়েকটা উঠতি বয়সী মেয়ে আছেন - যাদের আচরণ অনেকের কাছে সন্দেহজনক। তারা আবার প্রচন্ড দাপটে অনেক স্বনামধন্য ব্যক্তিদের পাশে দাড়িয়ে নিজেদের ছবি পোস্ট করে বৈধতা আনার বৃথা চেষ্টা করছেন। হর হমেশায় তারা নিজেদেরকে অনেক প্রভাবশালী সংবাদকর্মী জাহির করলেও-যারা ওদেরকে চেনে-তারা ভালোভাবেই জানে ওরা কারা।
তাদের শিক্ষা - দীক্ষা আর মিডিয়াতে কত বছরের বাস্তব অভিজ্ঞতা? তা কিন্তু অনেকেই জানেন না। তাদের লেবাস, গলায় কার্ড ঝুলিয়ে, হাতে বোম্ব নিয়ে সর্বাক্ষণিক এ পাড়া থেকে ও পাড়া। এ অফিস থেকে ওই অফিস-সর্বত্রই তাদের বিচরণ। সবচাইতে মজার বিষয় জেলা প্রশাসনের মিডিয়া সেলের তালিকায় তাদের নাম না থাকলেও এরা বরাবর হাজির হয়ে যায় ওইসব অনুষ্ঠানে। প্রশাসনের কর্মকর্তারা বুঝলেও তারা কিছুই করেন না। এদের বিষয়ে এখনই সঠিক সিদ্ধান্ত আর পদক্ষেপ নেয়া উচিৎ বলে অনেকের মনে করেন।
ভূক্তভোগী অনেকেই বলেন, রূপ কথার উপরে থাকা কুমিল্লা প্রেস ক্লাব থেকে যারা শুরু করেছিলেন তাদের মাঝে আজ অনেকেই নেই। নেই নতুন প্রেস ক্লাবের সভাপতি অধ্যক্ষ আবদুল ওহাব, পাশাপাশি রেজাউল করিম শামীম, বাকীন রাব্বি, নজরুল ইসলাম বাবুল, নুরুর রহমান বাবুল, সৈয়দ নুরুর রহমান, নওশাদ কবীরসহ সিনিয়র জার্নালিস্ট গোলাম মোস্তফা চৌধুরী, ফলকের আফতাব আহমেদ, নিরীক্ষণের মোহাম্মদ উল্লাহসহ অনেকেই আজ নেই। তাঁরা থাকলে আজ চিৎকার করে বলতেন কুমিল্লার সাংবাদিকদের চরিত্র কি এমনই।
সেই প্রজন্মের সাথে এ প্রজন্মের ডিজিটাল সাংবাদিকদের অনেক ব্যবধান। এখানে সিনিয়র আর জুনিয়রদের থোড়াই কেয়ার করা হয়। এসব নিয়ে বাদ প্রতিবাদ করার কেউ নেই, শোনারও কেউ নেই। অনেকেই আশাবাদী কুমিল্লা প্রেসক্লাবকে কেন্দ্র করে এখন যারা নেতৃত্ব দিচ্ছেন কিংবা আগামীতে গঠনতন্ত্রভাবে যারা নেতৃত্ব দিতে আসবেন, তাদের প্রতি অনেক শ্রদ্ধা রয়েছে। এ ক্ষেত্রে মাননীয় এমপি বীর মুক্তিযোদ্ধা হাজী আকম বাহাউদ্দিন বাহারের নেতৃত্বে একটি সফল কমিটির মধ্যদিয়ে কুমিল্লা সাংবাদিকদের মাইলস্টোন নির্ণয় করা হবে বলে আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করতে চাই।