ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার সুলতানপুর ইউনিয়নের রিকসা চালক স্বপন মিয়া হত্যাকান্ডের ঘটনায় সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফিরোজুর রহমান ও তার পুত্র সুলতানপুর ইউপি চেয়ারম্যান শেখ ওমর ফারুকের বিরুদ্ধে অপপ্রচার ও মিথ্যা মনগড়া বক্তব্য প্রদানের প্রতিবাদে ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেছেন উপজেলা চেয়ারম্যান ফিরোজুর রহমান।
মঙ্গলবার দুপুরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেসক্লাবে এই সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে ফিরোজুর রহমান স্বপন হত্যাকান্ড বিষয়ে সত্য অনুসন্ধ্যানের জন্য সাংবাদিকদের প্রতি আহবান জানান। লিখিত বক্তব্যে ফিরোজুর রহমান বলেন, তিনি দীর্ঘ ২৫ বছর সুলতানপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন। বর্তমানে সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান তার ছেলে ওমর ফারুক বর্তমানে সুলতানপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
তিনি বলেন, সুলতানপুর ইউনিয়নের হাবলাউচ্চ গ্রামের বাসিন্দা ও সাবেক চেয়ারম্যান মতিউর রহমান তার জীবদ্দশায় দুইবার চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করে তার কাছে পরাজিত হন। এই পরাজয়ের গ্লানি থেকে মতিউর রহমানের পরিবারের লোকজন সব কিছুতেই তার বিরোধীতা করে। এরই ধারাবাহিকতায় রিকসা চালক স্বপন মিয়া হত্যাকান্ডকে কেন্দ্র করে প্রয়াত মতিউর রহমানের পরিবারের লোকজন তিনি ও তার ছেলের বিরুদ্ধে উঠে পড়ে লেগেছে। তাদের বিরুদ্ধে এলাকায় অপপ্রচার চালাচ্ছে। ফিরোজুর রহমান আরো বলেন, স্বপন মিয়া হত্যাকান্ডের ঘটনায় ইতিপূর্বে গ্রেপ্তার হওয়া শফিকুল ইসলাম হৃদয়ের ১৬৪ ধারার জবানবন্দিতে বিষয়টি অনেকটাই স্পষ্ট। কিন্তু তারপরও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে সামনে রেখে তাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে।তিনি বলেন, হত্যা ঘটনায় স্বীকারোক্তি দেয়া শফিকুল ইসলাম হৃদয়ের মা সুলতানপুর ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত নারী সদস্য ইসরাত জাহান সংবাদ সম্মেলন করে যে বক্তব্য দিয়েছেন সেটি বানোয়াট, নির্জলা মিথ্যা। অপর দিকে একই ঘটনায় গ্রেপ্তার হওয়া সাধন চৌধুরীর ভাই মতিলাল চৌধুরী সংবাদ সম্মেলনে যে বক্তব্য নিয়েছেন তাও বাস্তব বিবর্জিত এবং স্বপন মিয়া হত্যকান্ডে আমার ও আমার ছেলের কোনো ধরনের সম্পৃক্ততা নেই। সিআইডির তদন্তেও বিষয়টি স্পষ্ট হয়েছে। কিন্তু আসন্ন ইউপি নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রতিপক্ষ আমাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে। তিনি হত্যাকান্ড বিষয়ে সত্য অনুসন্ধ্যানের জন্য সাংবাদিকদের আহবান জানান।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সুলতানপুর ইউনিয়ন পরিষদের ৯জন সদস্য ও ২ জন নারী ইউপি সদস্য ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন সুলতানপুর ইউনিয়ন হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি রতন লাল দে, সাধারণ সম্পাদক পুন্ন্য চন্দ্র রায়, বলাই দাস, জসিম উদ্দিন প্রমুখ। উল্লেখ্য, গত ২৬ মে রাতে সদর উপজেলার সুলতানপুর ইউনিয়নের হাবলাউচ্চ গ্রামের রিকসা চালক স্বপন মিয়া এলাকার বার আউলিয়া বিলে মাছ ধরতে গেলে একটি সংঘবদ্ধ চক্র তাকে খুন করে। স্বপন মিয়া তার পরিবার পরিজন নিয়ে গত প্রায় ২০ বছর ধরে হাবলাউচ্চ গ্রামের প্রয়াত চেয়ারম্যান মতিউর রহমানের বাড়িতে আশ্রিত হিসেবে বসবাস করে আসছিলেন। এ ঘটনায় নিহতের স্ত্রী রোকেয়া বেগম গত ৮ জুন ইউনিয়নের চার গ্রামের (বিরামপুর, ঈশাননগর, হাবলাউচ্চ ও শিলাউর) গ্রামের ২৭ জনের বিরুদ্ধে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
পরে পুলিশ মামলাটি তদন্ত করার জন্য সিআইডির কাছে হস্তান্তর করলে সিআইডি মামলার তদন্ত কাজ শুরু করে। এক পর্যায়ে সিআইডি বিরামপুর গ্রামের শফিকুল ইসলাম হৃদয় নামে এক যুবককে গ্রেপ্তার করে। গত ২০ আগষ্ট গ্রেপ্তারকৃত শফিকুল ইসলাম হৃদয় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেন। পরে হৃদয়ের পরিবারের পক্ষ থেকে জোরপূর্বক নেয়া জবানবন্দি বাতিল চেয়ে আদালতে আবেদন করলে আদালত আবেদনটি আমলে নেন।
আহসানুজ্জামান সোহেল/অননিউজ24।।