আসছে রমজান। হাতের নাগালে দাম! এ যেন আর সম্ভব হচ্ছে না নিত্যপণ্যের বাজারে। সেই সঙ্গে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়ছে হুহু করে। পরিকল্পনা করে করতে হবে বাজার সদাই। না হলে নগর জীবনে হিমশিম খেতে হবে। বাজার করুন বাজেট করে।
পাকা গৃহিণী হতে গেলে শুধু ঘরকন্নার কাজ জানলেই চলে না। সেইসঙ্গে সংসার সামলানোর দক্ষ ব্যবস্থাপনা থাকা দরকারি। কারণ নিত্যপণ্যের দাম যেভাবে হু-হু করে বাড়ছে, তাতে হরহামেশা বাজেটের দফারফা হয়ে যায়। তাই খরচের লম্বা ফর্দ আয়ত্তে রাখা অগ্নিপরীক্ষার চেয়ে কম কিছু নয়। ফলে একটু বুদ্ধি করে চলা প্রয়োজন। আসন্ন রমজানে বাজেট ঠিকঠাক রাখা মুশকিল মনে হতে পারে অনেকের। তবে চোখ-কান খোলা রেখে একটু বুদ্ধি করে চললেই পেয়ে যেতে পারেন সমাধান। রমজানের বাজেট তৈরির কিছু সহজ টিপস রইল এখানে।
পণ্যের তালিকা করুন
কেনাকাটার জন্য বাজারে যাওয়ার আগে ফ্রিজ ও কিচেন শেলফ দেখে বুঝে নিন কী কী প্রয়োজন। এরপর সেগুলো তালিকা করে নিন। এতে একদিকে যেমন সব পণ্যের মনে রাখতে সুবিধা হয়, তেমনি বাড়তি কিছু কেনা হয় না। তা ছাড়া সময়ও বাঁচে।
একসঙ্গে বেশি পরিমাণে কিনুন
রমজানে যেসব জিনিস প্রায় প্রতিদিনই লাগে, সেগুলো একসঙ্গে এবং বেশি পরিমাণে কিনে নিন। যেমন চিনি, ছোলা, বুটের ডাল, মসুর ডাল, তেল, মুড়ি ইত্যাদি। একসঙ্গে বেশি পরিমাণে কিনলে কিছুটা হলেও দাম কমে মেলে। আর অল্প পরিমাণ কেনার জন্য বারবার দোকানে না যাওয়াই ভালো। এতে অনেক অপ্রয়োজনীয় জিনিস কেনা হয় এবং সময় জলে যায়।
ইউনিট প্রাইস দেখে কিনুন
নিত্যপণ্য কেনার সময় ইউনিট প্রাইস দেখে কিনুন। অর্থাৎ দামের পাশাপাশি পরিমাণ দেখুন। হয়তো কোনো পণ্য ১০০ গ্রামের দাম ৪০ টাকা। কিন্তু একই পণ্য অন্য কোনো ব্র্যান্ড ৪৫ টাকায় ১২৫ গ্রাম দিচ্ছে। এ ক্ষেত্রে সেটি কিনলে সাশ্রয় বেশি হবে।
ছাড়ের সময় কিনুন
ক্রেতাদের মনোযোগ কাড়তে সাধারণত দোকানের মাঝের শেলফ কিংবা সামনের দিকে দামি জিনিস রাখা হয়। তাই কিছু কেনার আগে একই পণ্য অন্য ব্র্যান্ড কত দামে দিচ্ছে অথবা কোনো বাড়তি ছাড় আছে কি না খোঁজ নিন। ইদানীং সব গ্রোসারি শপ সপ্তাহের নির্দিষ্ট দিন বা নির্দিষ্ট সময়ে বিশেষ কিছু ছাড় দেয়। সেই অনুযায়ী কেনাকাটার চেষ্টা করুন। ইদানীং বড় বড় গ্রোসারি শপে ডিসকাউন্ট কার্ড থাকে, যেগুলো ব্যবহার করে অতিরিক্ত ছাড় পাওয়া যায়। সেই কার্ড ব্যবহার করতে পারেন।
তবে ছাড়ে জিনিস কিনলে বেশি সুবিধা পাওয়া যায় বলে ধারণা অনেকের। তাই তারা একসঙ্গে একগাদা জিনিস কিনে ফেলেন। আগে ভেবে দেখুন আদৌ সেটা লাগবে কি না এবং যতটা কিনছেন তার পুরোটা ব্যবহার করা যাবে কি না। প্রয়োজন না থাকলে শুধু শুধু কিনে অযথা টাকার অপচয় করা মোটেও বুদ্ধিমত্তার কাজ নয়।
বাজারে যাওয়ার সময় হিসাব করে সীমিত টাকা রাখুন। এতে অতিরিক্ত জিনিস কেনার ব্যাপারে আপনাআপনি সচেতনতা কাজ করবে। কেনাকাটার সময় নগদ টাকা ব্যবহার করুন। ক্রেডিট বা ডেবিট কার্ড ব্যবহার করলে অতিরিক্ত ছাড় আছে কি না জেনে নিন।
বেছে নিন পুষ্টিকর খাবার
জাঙ্ক ফুড কম কেনা ভালো। কারণ, এগুলো শরীরের জন্য ক্ষতিকর এবং দামও বেশি। সারা দিন রোজা রাখার পর অপুষ্টিকর খাবারের জন্য টাকা ব্যয় না করে ব্রাউন রাইস, অলিভ অয়েল ইত্যাদি পুষ্টিকর খাবারে বিনিয়োগ করুন।
রেডি টু কুক এড়িয়ে চলুন
ব্যস্ত জীবনে সময়ের কথা ভেবে অনেক কিছু রেডি টু কুক কেনার হিড়িক দেখা যায়। এসব জিনিসের দাম তুলনামূলক বেশি হয় এবং স্বাস্থ্যের জন্য ভালো নয়। ফলে যতটা সম্ভব এ ধরনের খাবার কম কেনার চেষ্টা করুন। দোকান থেকে কাটা পণ্য কিনলে খরচ বেশি পড়ে। খুব বেশি প্রয়োজন না থাকলে বাড়িতে এনে সেগুলো কাটুন।
অনলাইন কেনাকাটায় খেয়াল রাখুন
বাড়ি ও অফিস সামলে নিজের হাতে বাজার করার সময় অনেকেরই থাকে না। তাই অনলাইনে তারা ঘরের সদাইপাতি কিনে থাকেন। তবে এ ক্ষেত্রেও চোখ-কান খোলা রাখতে হয়। কোন প্ল্যাটফর্মে দাম কম এবং কত ছাড় আছে কিংবা ডেলিভারি বা শিপিং চার্জ ভালোভাবে দেখে নিন। ব্যস, এসব ব্যাপার মাথায় রাখলেই রমজানের বাজেট থাকবে আয়ত্তে। ফলে অনায়াসে কেনাকাটা হবে, পকেটও বাঁচবে!
ফরহাদ/অননিউজ