কুমিল্লার লাকসামে প্রায় শত বছরের একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম বন্ধ করার ঘোষনার প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছে সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থী,অভিভাবক এবং শিক্ষকরা।
রোববার দুপুরে লাকসাম পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে এ মানববন্ধন করা হয়।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, ১৯২৭ সালে লাকসাম পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ বিদ্যালয়ে একটি প্রাথমিক শাখা খোলা হয়। লাকসাম পৌর এলাকায় সবচেয়ে বড় ও জনবহুল ৪ নং ওয়ার্ডে কোন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় না থাকায় স্থানীয়দের দাবীর পেক্ষিতে এ বিদ্যালয়টিতে প্রাথমিক শাখার কার্যক্রম চলে আসছিলো। সম্প্রতি প্রাথমিক শাখাটি বন্ধের জন্য একটি মহল ষড়যন্ত্র করে আসছে।
এ সময় মানববন্ধনে বক্তব্য দেন প্রাথমিক শাখার শিক্ষক শর্মিলা দাস, অভিভাবক খালেদ মোশাররফ, নাসরিন আক্তার, তৃতীয় শ্রেনীর শিক্ষার্থী আয়েশা সিদ্দিকা প্রমুখ।
তৃতীয় শ্রেনীর শিক্ষার্থী আয়েশা সিদ্দিকা বলেন, আমরা এ স্কুলে থাকতে চাই, পড়তে চাই। আমরা আমাদের প্রাণের প্রতিষ্ঠান বন্ধ চাইনা।
খালেদ মোশাররফ সুমন নামে এক অভিভাবক বলেন, এ প্রাথমিক শাখায় আমার বাবা লেখাপড়া করেছে, আমি করেছি। এখন আমার সন্তানকে ভর্তি করিয়েছি। এ প্রতিষ্ঠানটি বন্ধের জন্য স্থানীয় কিছু কুচক্রী মহল তাদের কিন্ডার গার্ডেন ব্যবসার জন্য এটি বন্ধ করার ষড়যন্ত করছে।
নাসরিন আক্তার নামে এক অভিভাবক বলেন,লাকসাম পৌর এলাকার সবচেয়ে জনবহুল এলাকা ৪ নম্বর ওয়ার্ড। এখানে কোন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নেই। সন্তানদের লেখাপড়া করাতে হলে অনেক দুরের স্কুলে পাঠাতে হবে। আমাদের সন্তানদের বিষয়টি বিবেচনা করার জন্য অনুরোধ করছি।
প্রাথমিক শাখার দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষক শর্মিলা দাস বলেন, নামমাত্র মাসিক বেতনে আমরা বিদ্যালয়টি পরিচালনা করে আসছি। শিক্ষার্থীদের দেওয়া বেতন দিয়ে শিক্ষদের সম্মানী দেওয়াও কষ্টকর। একটি সেবামূলক প্রতিষ্ঠানটি বন্ধের জন্য বলা হয়েছে, ফলে এ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ক্ষতিগ্রস্থ হবে।
লাকসাম পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক রসরাজ দাস বলেন,বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার পর থেকেই প্রাথমিক শাখার কার্যক্রম চলে আসছে। মাঝখানে এটি বন্ধ হয়ে যায়। পরে স্থানীয়দের দাবীর প্রেক্ষিতে ২০২৩ সালে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি সভা করে এটি পূনরায় চালু করা হয়। বর্তমানে প্রাথমিক শাখায় ৮৫জন শিক্ষার্থী রয়েছে। কিছু ব্যাক্তির অভিযোগের প্রেক্ষিতে জেলা শিক্ষা অফিস ও শিক্ষা বোর্ড আমাদের মৌখিকভাবে প্রাথমিক শাখার কার্যক্রম বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে।
মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড এর বিদ্যালেয় পরিদর্শক রীতা চক্রবর্তী বলেন, স্থানীয় কিছু ব্যাক্তির অভিযোগের প্রেক্ষিতে আমি বিদ্যালয় প্রধানকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছি। বিদ্যালয় বন্ধ করার বিষয়ে কিছু বলিনি। এছাড়া প্রাথমিক শাখাটির কোন অনুমোদন নেই তাই তাদের অনুমোদন নেওয়ার জন্য পরামর্শ দিয়েছি।
লাকসাম পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কাউছার হামিদ বলেন, বিদ্যালয় বন্ধের বিষয়ে লিখিত কোন অভিযোগ আমার কাছে আসেনি। এখানে প্রাথমিক শাখা থাকলে তো কোন সমস্যা দেখছি না। শিক্ষার প্রসারে ভূমিকা রাখবে এটাই বড় বিষয়।
জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ রফিকুল ইসলাম বলেন, একটি হাই স্কুলে তো প্রাথমিক শিক্ষার কার্যক্রম চলতে পারেনা। প্রাথমিক শাখার কার্যক্রম আলাদা ভবনে পরিচালনা করুক। এ বিষয়টি আমরা তাদের মৌখিকভাবে জানিয়েছি।