আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ এমপি বলেছেন, আজকে আমাদের সমাজে চরম নৈতিকতার অবক্ষয়। মানুষের মধ্যে শ্রদ্ধাবোধ, আস্থা নেই। মানুষের নীতি-নৈতিকতা ও সততা আস্তে আস্তে শেষ প্রান্তে চলে এসেছে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দর্শনের সঙ্গে লালনের দর্শনের অদ্ভুত মিল আমরা খুঁজে পাই। লালনের বাণী ও দর্শন সমাজের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে হবে। লালনের দর্শন ধারণ করে আমাদের সোনার মানুষ হতে হবে, সুন্দর সমাজ গড়ে তুলতে হবে। শনিবার রাতে কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার ছেঁউড়িয়ায় আধ্যাত্মিক সাধক ফকির লালন শাহের মাজার প্রাঙ্গণে তিন দিনব্যাপী লালন স্মরণোৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
মাহবুব উল আলম হানিফ হানিফ আরো বলেন, লালন শাহের একাডেমিক ব্যাকগ্রাউন্ড ছিল বলে জানা যায়নি। অথচ সেই মানুষটি মানুষের বিবেক জাগ্রত করার জন্য অসংখ্য বাণী দিয়ে গেছেন। প্রতি বছর লালন স্মরণোৎসব ও তিরোধান দিবস উপলক্ষে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। লালন শাহের জীবন ও বাণী নিয়ে অনেক আলোচনা হয়, লালনের গান-বাজনা হয়। বাস্তবে আমরা কতটুকু ধারণ করতে পারছি ? এখানে হাজার হাজার লালন ভক্ত উপস্থিত আছেন। আপনার এখান থেকে যেটা ধারণ করছেন, লালনের দর্শন জানতে পারছেন, সেটা সবার মাঝে প্রচার করতে হবে, ছড়িয়ে দিতে হবে।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মাদ সাইদুল ইসলাম। সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় এবং লালন একাডেমির আয়োজনে অনুষ্ঠানে প্রধান আলোচক হিসেবে আলোচনা করেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপ উপাচার্য ড. মো. শাহিনুর রহমান। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কুষ্টিয়া-১ আসনের সংসদ সদস্য আ. কা. ম. সরওয়ার জাহান বাদশা, কুষ্টিয়া-৪ আসনের সংসদ সদস্য সেলিম আলতাফ জর্জ, কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার খাইরুল আলম প্রমুখ।
আলোচনা সভা শেষে লালন মঞ্চে শুরু হয় লালন একাডেমির শিল্পী ও দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত বাউল শিল্পীদের অংশগ্রহণে লালন সঙ্গীতানুষ্ঠান।
লালন স্মরণোৎসব উপলক্ষে লালন শাহের মাজার প্রাঙ্গণ, মাঠ, কালি নদীর পাড় ঘেঁষে বসেছে দূর-দূরান্ত থেকে আসা ভক্ত-অনুসারীদের খন্ড খন্দ দল। সেখানে ভিড় জমাচ্ছে হাজার হাজার মানুষ। গুরু-শিষ্য, ভক্ত-অনুসারী আর দর্শনার্থীদের পদচারণায় মুখরিত মাজার প্রাঙ্গণ।
দূরদূরান্ত থেকে আসা ভক্ত-অনুসারীদের খন্ড খন্দভাবে দলবদ্ধ হয়ে লালন ফকিরের গান গাইছেন। দিনরাত গান ছাড়াও তারা লালন ফকিরের বাণী নিয়ে একে অপরের সঙ্গে আলোচনা করছেন। অনেকে আবার লালনের মত ও পথের দীক্ষা নিচ্ছেন।
প্রসঙ্গত, মরমি সাধক ফকির লালন শাহ জীবদ্দশায় দোল পূর্ণিমার রাতে শিষ্যদের নিয়ে সাধুসঙ্গে বসতেন। তারই ধারাবাহিকতায় সাঁইজির তিরোধানের এত বছর পরও কালীগঙ্গার ধারে প্রতি বছর দিবসটি ঘিরে পালিত হয়ে আসছে এই উৎসব। দোল পূর্ণিমার রাতে প্রতি বছর আড়ম্বপূর্ণ অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে কুষ্টিয়ার ছেঁউড়িয়ার আখড়াবাড়িতে লালন স্মরণোৎসব পালন করা হয়।