আবদুস সাত্তার, নড়াইল।।
নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার নোয়াগ্রাম ইউনিয়নের বাড়ীভাঙ্গা গ্রামের রফিকুল লস্কালের জীবন জীবিকার স্বপ্ন এখন পুকুরে ও রাস্তায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। বাবা হারা রফিকুল স্ত্রী, দুটি ছেলে সন্তান ও বিধবা মাকে নিয়ে দুবেলা দুমঠো ডাল-ভাত খেয়ে বেঁচে থাকার নতুন আশা নিয়ে মাত্র ৪দিন আগে বাড়ি সংলগ্ন রাস্তার পাশে চায়ের দোকান চালু করেছিলেন। অর্থনৈতিক দৈন্যতার কারনে পাকা বা টিনের ঘর করতে পারেননি। বিধায় পাটকাঠির চালা দিয়ে দোকানটি তৈরি করেছিলেন ।
জানাগেছে, সোমবার (৬ নভেম্বর) ভোর সকালেই বাড়ীভাঙ্গা গ্রামের মাতুব্বার ছাকা মোল্যার ছেলে সোহেল মোল্যা, মকছুদ মোল্যার ছেলে রিফাত মোল্যার নেতৃত্বে ২০/২৫জনের একটি দল লাঠি, সোটা দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে হানা দেয় তার দোকানে। রফিকুলের সব স্বপ্ন কিছুক্ষণের মধ্যে গুড়িয়ে দেয়া হয়। চায়ের কাপ, পান, বিস্কুট সবকিছু ভেঙ্গে ফেলা হয়। চেয়ার, খাট সবকিছু ফেলে দেয়া হয় পাশের পুকুরের মধ্যে। রফিকুল গ্রাম্য দলাদলির সাথে জড়িত না থাকলেও এমন নিষ্ঠুরতা থেকে সে রক্ষা পায়নি।
রফিকুল জানান, গ্রামে দলাদলি থাকলেও সে কোন দলাদলির সাথে যুক্ত না। সোমবার সকালে হঠাৎ বাড়ীভাঙ্গা গ্রামের ছাকা মাতুব্বর ও তার ছেলে সোহেল মোল্যার নেতৃত্বে ২০/২৫ জন লাঠি সোটা ও ধারালো অস্ত্র নিয়ে তার দোকানে এসে ভাংচুর করে। এসময় দোকানের মালামাল নষ্ট করে ফেলে এবং খাটসহ মালামাল পাশের পুকুরে ফেলে দেয়। এসময় তাকে লাঠি দিয়ে মারধর করে আহত করে।
রফিকুল আরো জানান, কয়েক মাস আগে রাজধানীতে কাজের সন্ধানে গিয়েছিলেন। সেখানে কাজ জুটলেও সামান্য আয় দিয়ে সংসারের খরচ যোগাতে পারেনি। কিছুদিন আগে বাড়িতে ফিরে আসে। বাড়িতে এসে কোন উপায়ান্ত না পেয়ে বাড়ির সামনের রাস্তায় পাটকাঠির ছাবড়া দিয়ে চা, পান বিক্রি শুরু করেন। টাকার অভাবে একটি টিনের ঘরও তৈরি করতে পারেনি।
রফিকুলের মা রিজিয়া বেগম জানান, ১৪ বছর আগে তার স্বামী মারা গেছে। সামান্য জমিজমা যা আছে তা বন্ধক দেওয়া। বড় ছেলে কিছুদিন আগে দেশের বাইরে গেছে। ছোট ছেলে রফিকুলের স্ত্রী ও ২টি ছেলে সন্তান রয়েছে। তার স্ত্রী ও দুটি ছেলের মুখে একটু খাবার জোটাতে চায়ের দোকান দেয়া হয়েছে। টাকার অভাবে টিন দিয়ে চালা দিতে পারেনি। এতিম ছেলেটির এই দোকানটি এতো নিষ্ঠুরভাবে ভেঙ্গে দিয়ে তাদের পরিবারে খাবার জুটবে কিভাবে তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন।
এদিকে ছাকা মোল্যার গ্রæপের লোকজন সোমবার সকালে প্রতিপক্ষ মোশাররফ শেখের নদীতে ভেশাল কেটে ফেলা ফেলেছে। এছাড়া বাড়ীভাঙ্গা গ্রামের সৈয়দ বুলবুল আলীর বাড়িতে গিয়ে হুমকী ধামকি দেয়া হয়। এছাড়া প্রতিপক্ষের কয়েকটি বাড়িতে গিয়ে হুমকী-ধামকি দেয়া হয় বলে ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন।
এ ব্যাপারে মাতুব্বর ছাকা মোল্যা বলেন, ঘটনাস্থলে আমি ছিলাম না। ঘটনার পর আমি শুনেছি। ছেলেপেলেরা ঘটনাটি ঘটিয়েছে। আগামীতে এমন ঘটনা আর যাতে আর না ঘটায় ছেলেপেলেদের নিষেধ করেছি। ’
এ ব্যাপারে লোহাগড়া থানার এস আই উজ্জ্বল বলেন, ‘খবর শোনার পর ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। এ বিষয়ে ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারটি অভিযোগ দিলে ্আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
এফআর/অননিউজ