শীতের হিমেল হাওয়া বইছে। সবজির জমিতে ব্যস্ত চাষি। মাচায় ঝুলছে সারি সারি শসা। কেউ শসা সংগ্রহ করছেন, আবার কেউবা সেই শসাগুলো এক স্থানে স্তূপ করছেন। অন্যদিকে পাইকাররা মেপে মেপে গাড়ি বোঝাই করছেন।
কুমিল্লার সদর দক্ষিণ উপজেলার বলরামপুর গ্রামের যুবক কাজী আনোয়ার হোসেনের শসার জমিতে এমন দৃশ্য চোখে পড়ে। স্বল্পমেয়াদে ফলন পাওয়া যায় এমন উন্নত জাতের শসা চাষ করেছেন তিনি। মাত্র তিন মাসেই শসা বিক্রি করে তিনি ৩ লাখ টাকা আয় করেছেন। শসার এমন আশাতীত ফলনে আনোয়ারের চোখে-মুখে ফুটে আছে হাসির ঝিলিক। এর আগেও কৃষক আনোয়ার হলুদ তরমুজ ও মরুর ফল সাম্মাম চাষ করে সফলতা অর্জন করে বেশ আলোচনায় আসেন। মুদি দোকানি থেকে আনোয়ার এখন কৃষি উদ্যোক্তা, কৃষিতেই তিনি তার জীবনের সচ্ছলতার দুয়ার খুলেছেন।
আনোয়ার হোসেন বলেন, তিনি ১৮০ শতক জমিতে শসার বীজ রোপণ করেছেন। চারা যখন মাটি ভেদ করে আকাশে উঁকি দেয় তখন মাচা তৈরি করেন। ধীরে ধীরে বেড়ে উঠে শসাগাছ। মাচায় আঁকড়ে ধরে ফুল দেয় গাছগুলো। সেই ফুল থেকে শসা হয়। আনোয়ার আরও জানান, জমি তৈরি, বীজ সংগ্রহ ও সার মিলিয়ে তার খরচ হয়েছে ১ লাখ টাকা।
এ পর্যন্ত ৪ লাখ টাকার শসা বিক্রি করেছেন, খরচ ১ লাখ বাদ দিয়ে তার ৩ লাখ টাকা লাভ হয়েছে। পোকামাকড় দমনে সেক্স ফেরোমন ও আলোর ফাঁদ তৈরি করেছেন। কীটনাশক ব্যবহার করেন না। তাই তার শসাগুলো স্বাস্থ্যের জন্য নিরাপদ।
নগরীর রাজগঞ্জ বাজারের পাইকার ময়নাল হোসেন জানান, গত এক মাসে অনেক বিয়ে-শাদির অনুষ্ঠান ছিল। শসার বেশ চাহিদা রয়েছে। ক্রেতারা দুই-তিন মণ করে শসার অর্ডার করত, আনোয়ারকে জানাতাম। পরে তার জমি থেকে ৪০ টাকা কেজি দরে শসা এনে ৫০ টাকা দরে আমরা বিক্রি করতাম। এদিকে তার দেখাদেখি আশ-পাশের যুবকৃষকেরাও শসা চাষে আগ্রহ প্রকাশ করেন।
কুমিল্লা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. মিজানুর রহমান জানান, ‘আনোয়ার হোসেন একজন কৃষি উদ্যোক্তা। নতুন কৃষি ফসল উত্পাদনে আনোয়ার কাজ করে যাচ্ছেন। চলতি বছরের শুরুতে তরমুজ ও সাম্মাম চাষ করে সফল হয়েছেন। আমরা তাকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে আসছি। আমরা কৃষির উন্নয়নে উদ্যোক্তা ও কৃষকদের সব ধরনের সহযোগিতা করে থাকি।