শিশুশ্রম নিরসনে সবাইকে আরও সচেতন হতে হবে: প্রধানমন্ত্রী

আনলাইন ডেস্ক।।

শিশুদের স্বাভাবিক বিকাশ ও শিক্ষার সুযোগ নিশ্চিত করাসহ শিশুশ্রম নিরসনে প্রত্যেককে নিজ নিজ অবস্থান থেকে আরও সচেষ্ট হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজ বুধবার ‘বিশ্ব শিশুশ্রম প্রতিরোধ দিবস’ উপলক্ষো মঙ্গলবার (১১ জুন) দেওয়া এক বাণীতে তিনি এ কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, শিশুশ্রম নিরসনে একযোগে কাজ করার এখনই সময়। এসডিজি ৮.৭ অর্জনে শিশুশ্রমের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সকলকে এগিয়ে আসতে হবে। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্বাস করতেন আজকের শিশুরাই আগামী দিনের ভবিষ্যৎ, শিশুরাই তার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়ে তুলবে। এই ভাবনা থেকেই জাতিসংঘ শিশু সনদের ১৫ বছর আগে ১৯৭৪ সালে তিনি জাতীয় শিশু নীতি প্রণয়ন করেন।

তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের শিশু, নারী ও অনগ্রসর অংশসহ প্রতিটি মানুষের জীবনমান উন্নয়ন, কর্মের স্থিতিশীলতা, শ্রমজীবী মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং শ্রমজীবী মানুষের কল্যাণ ও অধিকার সংরক্ষণকে বিশেষ গুরুত্ব দেন। তার নেতৃত্বে বাংলাদেশ ১৯৭২ সালে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থাতে (আইএলও) যোগ দেয়। শিশু শিক্ষার বিকাশ নিশ্চিত করতে তিনি প্রাথমিক শিক্ষাকে জাতীয়করণ করেন।

শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের সংবিধানে শিশুসহ সকল নাগরিকের মৌলিক অধিকারকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। সংবিধানের ২৮(৪) অনুচ্ছেদে নারী, শিশু ও সমাজের অনগ্রসর অংশের অগ্রগতির জন্য বিশেষ বিধান প্রণয়নের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশের সংবিধান ও জাতির পিতার আদর্শ অনুসরণ করে আওয়ামী লীগ সরকার বাংলাদেশে শিশু শ্রম প্রতিরোধে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করেছে।

তিনি বলেন, শ্রমজীবী শিশুদের ঝুঁকিপূর্ণ কাজ থেকে প্রত্যাহারের লক্ষ্যে আমরা ‘জাতীয় শিশুশ্রম নিরসন নীতি-২০১০’ প্রণয়ন করেছি। এ নীতি বাস্তবায়নে জাতীয় শিশুশ্রম কল্যাণ পরিষদ, উপজেলা শিশুশ্রম পরিবীক্ষণ কমিটি, জেলা শিশুশ্রম পরিবীক্ষণ কমিটি এবং বিভাগীয় শিশুশ্রম কল্যাণ পরিষদ গঠন করা হয়েছে। শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় শিশুদের জন্য ৪৩টি কাজকে ঝুঁকিপূর্ণ কাজ হিসেবে চিহ্নিত করে তা গেজেট আকারে প্রকাশ করেছে।

তিনি বলেন, এ পর্যন্ত ১ লাখ ৯০ হাজার শিশুকে ঝুঁকিপূর্ণ কাজ হতে প্রত্যাহার করা হয়েছে। আইএলও কনভেনশন অনুযায়ী শিশুশ্রম নিরসনের লক্ষ্যে ২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘শিশুশ্রম নিরসন ও পুনর্বাসন প্রকল্প’ নামে মেগাপ্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে যা এবছর শেষ হবে। গৃহকর্মে শিশুশ্রম নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে প্রণয়ন করা হয়েছে ‘গৃহকর্মী সুরক্ষা ও কল্যাণ নীতি-২০১৫’।

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্য অনুযায়ী আমরা দেশকে সকল ধরনের শিশুশ্রম থেকে মুক্ত করার লক্ষ্যে জাতীয় কর্মপরিকল্পনা ২০২১-২৫ প্রণয়ন করেছি এবং এটি বাস্তবায়নে কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের সরকার ‘জাতীয় শিশুনীতি-২০১১’, ‘শিশু আইন-২০১৩’, ‘বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন-২০১৭’ প্রণয়ন করেছে। এ ছাড়া সুবিধা বঞ্চিত শিশুদের পুনর্বাসন এবং বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের বিকাশে কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের বছরের শুরুতে বিনামূল্যে নতুন বই প্রদান করা হচ্ছে। প্রায় শতভাগ শিশু আজ স্কুলে যাচ্ছে।

শেখ হাসিনা বলেন, আমরা শিশু ও তাদের পরিবারের সহায়তায় বিভিন্ন ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। এর মধ্যে রয়েছে শিশু সুরক্ষা ব্যবস্থা শক্তিশালীকরণ, শিশু সংবেদনশীল সামাজিক সুরক্ষা নীতি প্রণয়ন এবং পারিবারিক আয় বৃদ্ধির মাধ্যমে সমাজ ভিত্তিক শিশু সুরক্ষা ব্যবস্থাকে উন্নত করা। এ ছাড়া শিশুশ্রম নিরসনে আমরা বেসরকারি খাতগুলোকে সম্পৃক্ত করেছি। সহিংসতা ও শোষণ থেকে শিশুদের সুরক্ষা সম্পর্কে নিয়োগদাতাদের প্রশিক্ষিত করার বিষয়টিতে আমরা অগ্রাধিকার দিয়েছি।

আজ বুধবার বিশ্ব শিশুশ্রম প্রতিরোধ দিবস। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য হল ‘শিশুশ্রম বন্ধ করি, প্রতিশ্রুতি রক্ষা করি।’

সএ্র/বিডি২৪লাইভ
একে/অননিউজ২৪

আরো দেখুনঃ