কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার এমপি বলেছেন, আওয়ামী লীগের মুল ভিত্তি হচ্ছে অসাম্প্রদায়িকতা। আমি বঙ্গবন্ধুর কর্মী, শেখ হাসিনার কর্মী। আমিও বিশ্বাস করি, রাষ্ট্র সবার, ধর্ম যার যার। দীর্য ৫০ বছরের রাজনৈতিক জীবনে দলমত ধর্মবর্ণ নির্বিশেষে মানুষের জন্য কাজ করেছি। কয়েকদিন আগে কুমিল্লা জেলা প্রশাসক পূজা উদযাপন নিয়ে একটি সভা ডেকেছিল । আমি সেই সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে বলেছিলাম, মাদকমুক্ত পূজা চাই। মদ খেয়ে পূজা মণ্ডপে কেউ আসতে পারবে না। আমি মাদকমুক্ত শুধু পূজা নয়, সেদিন আমি আরও বলেছিলাম, আমি মাদকমুক্ত কুমিল্লা মহানগর গড়তে চাই। সন্ত্রাসমুক্ত কুমিল্লা গড়তে চাই, চাঁদাবাজমুক্ত কুমিল্লা গড়তে চাই। ইভটিজিং মুক্ত কুমিল্লা গড়তে চাই। একটা চক্র ফেসবুক স্ট্যাটাস দিয়ে বলে, আমি নাকি মৌলবাদী। মাদকের বিরুদ্ধে কথা বলা কি আমার অপরাধ?
নেত্রী ২০৪১ সাথের সুন্দর বাংলাদেশের ঘোষণা দিয়েছেন। একমাত্র মাদক আমাদের সুন্দর কাজ নষ্ট করে দিতে পারে। তাই আবারও বলছি, মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করতে হবে।
যারা হিন্দু সম্পতি দখল করে খেয়েছে, আজকে তারা কুমিল্লার নতুন করে চক্রান্তে নেমেছে। তারা নির্বাচন আসলেই সাইনবোর্ড ব্যবহার করে। কোন রকম ছাড় দেওয়ার সুযোগ নেই। ৫০ বছরের রাজনীতিতে কুমিল্লায় অভিভাবকের দায়িত্ব পালন করেছি। সকল পূজায় নেতা-কর্মীদের নিয়ে পাহারাদারের দায়িত্ব পালন করেছি। বাবরী মসজিদ নিয়ে যখন গন্ডগোল হয় সেদিন আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় ছিল না। আমি পৌরসভার চেয়ারম্যান ছিলাম, সেদিন কাউন্সিলদেরকে, নেতা-কর্মীদের ঐক্যবদ্ধ করে শিফটিং ডিউটি করে ২৪ ঘন্টা হিন্দুদের মন্দির পাহারা দিয়েছি।
আমি গণমানুষের রাজনীতি করি। কুমিল্লা রিকশাওয়ালা থেকে শুরু করে অনেক সাধারণ মুসলিমের জানাযায় গিয়েছি। তেমনি অনেক হিন্দুদের দাহতেও গিয়েছি। ঠাকুরপাড়ায় শ্মশানে আমাকে গুলি করা হয়েছিল। যারা সেদিন গুলি করেছিল তারা আজ হিন্দু বৌদ্ধ খিস্টান ঐক্য পরিষদের পক্ষ নিয়েছে। আমি নাকি মৌলবাদী? যখন শ্যামল চন্দ্রের বাবা ননী চন্দ্রের রক্তের প্রয়োজন হয়েছিল আমার গায়ের রক্ত দিয়ে দিয়ে তাকে বাঁচিয়েছিলাম। সেদিন হিন্দু বৌদ্ধ ঐক্য পরিষদের কাউকে দেখেনি। ১৩ তারিখ নাকি তারা কুমিল্লায় কর্মসূচি দিয়েছে। কুমিল্লার হিন্দুরা যদি কর্মসূচি পালন করেন কোন আপত্তি নেই। কিন্তু বাহির হইতে ভাড়া করে লোক আনলে প্রতিহত করা হবে। ছাড় দেওয়া হবে না। আজ শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক চক্রান্ত চলছে। নির্বাচনকে সামনে রেখে আমেরিকা স্যাংশন দিচ্ছে। এ মূহুর্তে যখন শেখ হাসিনার পক্ষে জাতীয় ঐক্যের প্রয়োজন সেই সময়ে একটি মহল আমাদের মধ্যে ফাটল ধরানো চেষ্টা করছে। ঐক্য বিচ্ছিন্ন করতে চাইছে। আমি হিন্দু বৌদ্ধ ঐক্য পরিষদের নেতৃবৃন্দকে আহবান জানাচ্ছি কুমিল্লা এসে বাস্তব চিত্র দেখে যান। আপনাদের স্ট্যাটমেন্ট প্রত্যাহার করুন।
গতকাল মঙ্গলবার (১০ অক্টোবর) রাতে নগরীর দক্ষিণের চৌয়ারা ঈদগাহ মাঠে আয়োজিত কুমিল্লা মহানগর ২৭ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের ত্রি বার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বীর মুক্তিযোদ্ধা আ ক ম বাহাউদ্দীন বাহার এমপি এসব কথা বলেন।
হাজী বাহার এমপি আরও বলেন, জাতিকে মুক্তি দিতে বঙ্গবন্ধু যৌবনের ১৪ বছর জেলে কাটিয়েছেন। আমিও যৌবনের সময়গুলো কুমিল্লার মানুষের কল্যাণে কাটিয়েছি।
২০১৮ সাথে নির্বাচনে আগমুহূর্তে সিটি করপোরেশনের দক্ষিণের ৯ ওয়ার্ড আমার নির্বাচনী এলাকায় যুক্ত করে দিলেন। যে এলাকায় মানুষের সাথে আমার যোগাযোগ ছিল না। আমি গণমানুষের জন্য রাজনীতি করি। দীর্ঘ দিন বঞ্চিত দক্ষিণের মানুষ, তাই তাদের কে গ্রহণ করে নিয়েছিলাম। সিটির দক্ষিণের মানুষ এখন অভিভাবকহীন নয়, দক্ষিণের কোন কাজ আর বাকি থাকবে না। এ অর্থ বছরে এই ২৭ নং ওয়ার্ডেই ২৮ কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ হবে।
হাজী বাহার এমপি আরও বলেন, শেখ হাসিনা আমাদের জাতির মাথা উঁচু করে দিয়েছেন। আমরা এখন আর মিসকিনের জাতি নয়। বরং যাদের কাছ থেকে আমরা স্বাধীনতা ছিনিয়ে এনেছি সেই পাকিস্তান আজ অকার্যকর মিশকিন জাতিতে পরিণত হয়েছে। সৌদি আরবের মানুষ এক সময় বাঙালীদের মিসকিন বলতো, আর এখন বলে সাদিক (বন্ধু)। বাংলাদেশের উন্নয়ন দেখে তাদের ধারনা পরিবর্তন হয়েছে। চারিদিকে তাকিয়ে দেখেন উন্নয়নের এক অনন্য আলামত চলছে। ২০৪১ সালের সুন্দর বাংলাদেশের। আজ নেত্রী পদ্মা সেতুর উপর দিয়ে রেল যাতায়াতের উদ্বোধন করেছেন। ২৮ তারিখ কর্ণফুলী টানেলের উদ্বোধন করবেন। এ মাসজুড়ে চলছে শুধু মেগা প্রকল্পের উদ্বোধন। সবাই দোয়া করবেন শেখ হাসিনা কে যেন মহান আল্লাহ শতায়ু দান করেন। তাহলে শেখ হাসিনার হাতেই নির্মাণ হবে ৪১ এর বাংলাদেশ।
কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. তাহসিন বাহার সূচনার প্রাণবন্ত উপস্থাপনা ও ২৭ ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহবায়ক কাউন্সিল আবুল হাসান এর সভাপতিত্বে সভায় বক্তব্য রাখেন মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ নূরুর রহমান, জগন্নাথপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মামুনুর রশীদ মামুন।
সম্মেলনে কাউন্সিলর আবুল হাসান কে সভাপতি ও আবুল হোসেন মজুমদার দুলাল মাষ্টার কে সাধারণ সম্পাদক করে ২৭ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের ৬৯ সদস্যের নতুন কমিটির নাম ঘোষণা করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা আ ক ম বাহাউদ্দীন বাহার এমপি।