কুমিল্লার মুরাদনগরের শ্রীকাইল ইউনিয়ন স্বাস্থ্য উপকেন্দ্র একসময় ছিল গ্রামীণ মানুষের চিকিৎসার আশ্রয়স্থল। আজ সেটি নিছক এক "তালাবদ্ধ নীরব দালান"। ৬টি পদের একটিতেও জনবল নেই। ফলে প্রায় ৩৫ হাজার মানুষ প্রাথমিক চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত।
ভূতাইল গ্রামের সুজন মুন্সি বৃদ্ধ বাবাকে নিয়ে সকালবেলা দৌড়ে আসেন কেন্দ্রে। জ্বর ও শ্বাসকষ্টে কাতর বাবার চিকিৎসার আশায় ছিলেন তিনি। কিন্তু ফটকে এসে চোখে পড়ে ঝুলন্ত তালা।
তিনি ক্ষোভ ভরা কণ্ঠে বলেন,
"শত শত রোগী চিকিৎসা না পেয়ে ফিরে যায়। ডাক্তার নাই, বাউন্ডারি নাই, ভবনগুলো ভগ্নদশায় পড়ে আছে।"
চিকিৎসা কেন্দ্রের ৬টি পদই শূন্য। তবে অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার মাজহারুল ইসলাম সপ্তাহে মাত্র দুই দিন সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত রোগী দেখেন।
বাকি পাঁচ দিন পুরো স্বাস্থ্যকেন্দ্র তালাবদ্ধ থাকে।
মাজহারুল ইসলাম বলেন,
"গড়ে প্রতিদিন প্রায় ১০০ রোগী আসে। সপ্তাহে দুই দিন বসে এতো মানুষ সামলানো সম্ভব নয়। নতুন জনবল নিয়োগই একমাত্র সমাধান।"
শ্রীকাইল ইউনিয়ন স্বাস্থ্য উপকেন্দ্রের অচলাবস্থা শুধু একটি সরকারি ভবনকে তালাবদ্ধ করেনি, এটি ৩৫ হাজার মানুষের স্বাস্থ্যসুরক্ষাকে প্রতিদিন ঝুঁকির মুখে ঠেলে দিচ্ছে।
স্থানীয় তাজুল ইসলাম জানান, "এখান থেকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ১৫ কিলোমিটার, আর জেলা শহর ৫০ কিলোমিটার দূরে। গুরুতর অসুস্থ রোগীদের সময়মতো হাসপাতালে নিতে না পেরে অনেকের জীবন ঝরে যায়।"
স্বাস্থ্যকেন্দ্র এখন দূষণের স্থানে পরিণত। ঝোপঝাড়ে ঢাকা ভবন, নেই বাউন্ডারি। নিরাপত্তাহীনতার কারণে এটি এখন উন্মুক্ত প্রস্রাব ও মলত্যাগের জায়গা। দুর্গন্ধে আশপাশের পরিবেশ অসহনীয় হয়ে উঠেছে।
অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক মফিজুল ইসলাম স্মৃতিচারণ করে বলেন, স্বাধীনতার আগে এটি দাতব্য প্রতিষ্ঠান ছিল। পরে ইউনিয়ন উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রে রূপ নেয়। কিন্তু আজ চিকিৎসক নেই, কার্যত বন্ধ হয়ে আছে।”
তিনি আরও বলেন, "এটি ছিলো আমাদের গ্রামের অতীতের গৌরব, বর্তমানের হতাশা।"
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সিরাজুল ইসলাম মানিক বলেন, "আমরা জনবল চাহিদা পাঠিয়েছি। নিয়োগ হলেই কেন্দ্রটি আবার সক্রিয় হয়ে উঠবে।"