সদস্য সাথোয়াইপ্রু চৌধুরী খুঁটির জোর নিয়ে নানা প্রশ্ন?
খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি:

খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের দাপুটে সদস্য সাথোয়াইপ্রু চৌধুরী। এক সময় ধার দেনা নিয়ে চললেও এখন তিনি বেশ দাপুটে ঘুরছে। জুলাই-আগস্ট বিপ্লব পরবর্তী খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পান। তারপর থেকে যেন সাথোয়াইপ্রু চৌধুরী নিজেকে ভোল পাল্টে দাপুটেগিরি বনে যান। মারমা সম্প্রদায়ের লোকদের সাথে প্রতারণাসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে তার নামে।
বিভিন্নসুত্রের তথ্যে জানা যায়, মানিকছড়িতে মারামা সম্প্রদায়ের সংগঠন করা কয়েকজন থেকে নানা অজুহাত দেখিয়ে বিভিন্ন সময়ে টাকা নিতেন। কখনো ঢাকায় যাবার বলে আবার কখনো সাংগঠনিক কাজ বা ব্যক্তিগত ছাড়াও অর্থ সহায়তার নামে টাকা ধার নিতেন। কিন্তু পরবর্তীতে ধার নেয়া টাকা আর পরিশোধ করেননি সাথোয়াইপ্রু চৌধুরী।
মানিকছড়ির অনেক মারমা যুবক নাম প্রকাশে অভিযোগ করেন, সাথোয়াইপ্রু চৌধুরী সদস্য হবার পর থেকে বেশ বদলেছেন। যাদের থেকে তিনি টাকা নিয়েছেন তাদের সাথেও কোনরকম যোগাযোগ রাখেন না। তাদের এখন পাত্তা দিচ্ছেন না। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ সদস্য হওয়ার পর থেকে সাথোয়াইপ্রু জেলা পরিষদের সদস্য হবার পর থেকে নামে বেনামে প্রকল্পে ও খাদ্যশস্য বরাদ্দ নিয়েছেন। কিন্তু এসব প্রকল্প ও খাদ্য শস্য লুটপাট করেছেন বলে অভিযোগ করেন। ভুক্তভোগীদের কয়েকজনের অভিযোগের তথ্য সংগ্রহে রয়েছে প্রতিবেদকের কাছে। নিরাপত্তার স্বার্থে অভিযোগকারীদের নাম প্রকাশে অনুরোধ থাকায় তাদের থেকে পাওয়া অভিযোগগুলো সংরক্ষণে রাখা হয়েছে।
মানিকছড়ি থেকে প্রাপ্ত অভিযোগের ভিত্তিতে জানা যায়, সদস্য হওয়ার পর থেকে নিজেকে বিভিন্নভাবে আধিপত্য বিস্তার করতে থাকেন সাথোয়াইপ্রু চৌধুরী। কখনো কখনো বিএনপির ত্যাগী নেতা হিসেবেও পরিচয় দেন তিনি। বিএনপির নাম ভাঙিয়ে প্রকল্প ও খাদ্যশস্য বরাদ্দে আধিপত্য দেখান সাথোয়াইপ্রু।
একটি সুত্রে প্রাপ্ত তথ্যে অভিযোগ ওঠে, সাথোয়াইপ্রু চৌধুরী মানিকছড়িতে মারমা ওয়েলফেয়ার সংগঠনের নাম বিভিন্ন সময় দান অনুদান নিয়েছেন। সেই টাকাও আত্মসাৎ করেছেন মারমা কয়েকজন যুবক। অভিযোগকারীরা সাথোয়াইপ্রু চৌধুরীর ভয়ে এই প্রতিবেদকের কাছে নাম প্রকাশ না করতে একাধিকবার অভিযোগ করায় নাম প্রকাশ করা হয়নি। তবে প্রতিবেদকের কাছে অডিওসহ অভিযোগ নিয়ে তথ্য প্রমাণ সংরক্ষণে রয়েছে।
অভিযোগকারীরা জানান, সাথোয়াইপ্রু জেলা পরিষদের সদস্য হওয়ার আগে কোনরকম করে ঘুরেফিরে থাকতেন। মানিকছড়ি ছাড়াও মহালছড়ির দিকে সময় কাটাতেন। তার কাজই হচ্ছে পরিচিতজনদের কাছ থেকে ধার ধুর নিয়ে চলতেন।
মানিকছড়িতে অস্তিত্বহীনতার সংকটে পড়ে সাথোয়াইপ্রু চৌধুরী খাগড়াছড়িতে আসেন। আর্থিক অস্বচ্ছল থাকা সাথোয়াইপ্রু জেলা পরিষদের সদস্য হওয়ার পর থেকে বনে যান বিশাল গেইমলার। পরিষদের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব নিয়ে এগারো মাসের মাথায় সাথোয়াইপ্রু চৌধুরীর দাপুটে কর্মকাণ্ড ও চলাফেরায় পরিবর্তন আসায় অনেকের মনে নানা প্রশ্নের দেখা দিয়েছে। অবৈধ ভাবে আয় উর্পাজন করা টাকা দিয়ে খাগড়াছড়ি বিভিন্ন এলাকায় একর কে একর জায়গায় ক্রয় করেছে।
পরিষদ সূত্রে জানাগেছে, সাথোয়াইপ্রু চৌধুরী’র তার বিশস্ত সহকারী চিংহ্লা চৌধুরীকে দিয়ে চাঁদাবাজী ও অনিয়ম, নামে বেনামে প্রকল্পে ও খাদ্যশস্য বরাদ্দ নেন।
আবার অনেকেই বলছেন, সাথোয়াইপ্রু চৌধুরী উগ্র ও সাম্প্রদায়িক ব্যক্তি। সদস্য হওয়ার পর থেকে তার উগ্রতা যেন আরোও বেড়েছে। এমন অবস্থায় অনেকে ক্ষোভের সাথে বলছেন সাথোয়াইপ্রু চৌধুরীর দাপুটে হওয়ার খুঁটির জোর কোথায়?
এদিকে, সাথোয়াইপ্রু চৌধুরীর বিরুদ্ধে উঠা বিভিন্ন অভিযোগ নিয়ে জানতে তার মুঠোফোনে কল দিলে তিনি পার্বত্য নিউজের খাগড়াছড়ি ব্যুরোকে ফোনে অশোভন আচরণ করেন। প্রতিবেদককে ধমক দিয়ে দোসর, চাঁদাবাজ ও সাম্প্রদায়িক ইস্যুতে জড়িয়ে হেয় করার হুমকি দেন সাথোয়াইপ্রু চৌধুরী। একপর্যায়ে দেখে নেয়ারও হুমকি দিয়ে আঞ্চলিক একটি সংগঠনের ভয় দেখান।
বিষয়টি খাগড়াছড়ি সাংবাদিক ইউনিয়নের সদস্যরা জানতে পেরে সাংগঠনিকভাবে একটি বিবৃতি দেন। বিবৃতিতে সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি শাহরিয়ার ইউনুসকে জেলা পরিষদের সদস্য সাথোয়াইপ্রু চৌধুরীর হুমকির বিষয়ে নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান।পার্বত্য জেলা পরিষদ খাগড়াছড়ি। জুলাই-বিপ্লব পরবর্তী সময়ে গঠিত পরিষদ অস্থির সময় পার করছে। এর কারণ হচ্ছে কয়েকজন সদস্য নিজেদের শেষ ঠিকানা এবং ইন্টেরিম পিরিয়ড তাদের জন্যে আলাদিনের চেরাগ হিসেবে ধরা দিয়েছে। পরিষদে যোগদান করার পর থেকে কয়েকভাবে সুবিধা নিয়ে ভাগিয়ে নিচ্ছেন কোটি কোটি টাকার প্রকল্প। দূর্গম এলাকা, আত্মীয় স্বজনসহ জড়িয়ে দিয়ে নিরীহ পাহাড়ি প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মানুষের রক্ত চুষে নিচ্ছে।
সদস্যদের কয়েকজন দেদারসে, বুক ফুলিয়ে যা মন চায় তা করে যাচ্ছে। কয়েকমাস যাবত এ নিয়ে বেশ লেখালেখিও হয়েছে। তদন্তও চলমান। দুদকের অভিযানও হয়েছে। বিগত সময়ের দুদকে কয়েকটি জমাকৃত অভিযোগও তদান্তাধীন।
খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের সদস্যদের কোন বিষয়ে তথ্য চাওয়া বা জানা যাবে না? সমালোচনা করা যাবে না?? করলেই সাম্প্রদায়িক ইস্যু এবং উগ্রতাসহ রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক ভয় দেখায়।
জাতিগত সংগঠনের পরিচয়, পার্বত্য উপদেষ্টার পরিচয় এবং সেনাবাহিনীর নাম ব্যবহার করে এরা সাধারণ মানুষ তথা জেলার নাগরিকদের ধোঁকা দিচ্ছে।
এসব বিষয়গুলো নিয়ে স্ব স্ব অবস্থান থেকে প্রতিবাদ করা প্রয়োজন সবার।
চাল, গম ও ফাঁক ফোঁকর কাজের সমন্বয়কারী এবং একটি রাজনৈতিক দলের নাম ব্যবহার করে এক সদস্য ইতিমধ্যেই চরম উগ্রতা দেখাচ্ছে।
আরেক সদস্য নামে বেনামে পরিবার থেকে শুরু করে উন্নয়ন প্রকল্প গিলে খাচ্ছে। কিছু জানতে চাইলে পার্বত্য উপদেষ্টার ক্ষমতার প্রভাব দেখায়। হুমকি, ধামকি দিয়ে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করতে পায়তারা করার ধমক দেন।
তদের বিষয়ে তদন্ত হওয়া দরকার। রাজনৈতিক পরিচয় দেয়া সদস্যের আদ্যপান্ত জানা দরকার।
কথিত ও জনশ্রুতি রয়েছে উগ্র সাম্প্রদায়িক হিসেবে পরিচিত সাথোয়াইপ্রু মারমা। তার এক ঘনিষ্ঠজনের সহায়তায় চাল গমের বাণিজ্য এবং একটি আঞ্চলিক সংগঠনের সাথে নিয়মিত সখ্যতা গড়ে তুলেছেন। তাদের নামেও প্রকল্প তুলে ভোগ করছে সাথোয়াইপ্রু।
এবারের উন্নন প্রকল্পে সাথোয়াইপ্রুর নামে কয়েক কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ বরাদ্দ হয়েছে। অথচ বাকী দুই/তিনজন সদস্যদের বরাদ্দ নেই। কি অবাক!
এদিকে, সাথোয়াইপ্রু বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে লেখা হলে তা ছড়িয়ে পড়ে। এরপর অনেকেই নানাভাবে সদস্য সাথোয়াইপ্রু চৌধুরীর নামে বেনামে প্রকল্প বাস্তবায়নের নামে অনিয়ম এবং খাদ্যশস্য লুটপাট নিয়ে বিস্তর অভিযোগ আসতে। যা তথ্য প্রমাণ সংরক্ষণে রাখা হয়েছে প্রতিবেদকের কাছে।