দেশের সবচেয়ে উত্তরের জেলা দিনাজপুরের হিলিতে খানিকটা আগে ভাগেই পড়তে শুরু করেছে শীত। যার কারনে শীতের মৌসুম শুরু হওয়ায় উঠতে শুরু করেছে শীতকালীন সবজি। এতে করে বাজারে সররবাহ বেড়ে যাওয়ায় সপ্তাহের ব্যবধানে অধিকাংশ শীতকালীন সবজির দাম অর্ধেকে নেমেছে। দাম কমায় স্বস্তি ফিরতে শুরু করেছে নিন্ম আয়ের মানুষজনের মাঝে। সামনের দিনে সবজির দাম আরো কমবে বলে দাবী ব্যবসায়ীদের।
সরেজমিন হিলি বাজার ঘুরে দেখা যায়, বাজারে সবদোকানেই শীতকালীন সবজির ভালো সররবাহ রয়েছে। যার কারনে দাম কমে অর্ধেকে নেমেছে। একসপ্তাহ পুর্বে বেগুন ৫০ থেকে ৬০টাকা বিক্রি হলেও বর্তমানে তা কমে ২০ থেকে ২৫টাকা বিক্রি হচ্ছে। পোটল ৪০ টাকা বিক্রি হলেও তা থেকে কমে ২০টাকা, শিম পুর্বে ১২০ থেকে ১৬০টাকা বিক্রি হলেও তা থেকে কমে ৮০টাকা, ফুলকপি পুর্বে ১০০ টাকা কেজি বিক্রি হলেও তা থেকে কমে ৬০টাকা, বাধাকপি পুর্বে ৫০ থেকে ৬০টাকা বিক্রি হলেও বর্তমানে তা থেকে কমে ৩৫ থেকে ৪০টাকা,মুলা পুর্বে ৪০টাকা বিক্রি হলেও বর্তমানে তা থেকে কমে ২০টাকা, ঢেড়শ পুর্বে ৬০টাকা কেজি বিক্রি হলেও বর্তমানে তা থেকে কমে ৪০টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। তবে মৌসুম শেষের দিকে হওয়ায় করলার দাম কিছুটা বেশী পুর্বে ৪০ থেকে ৬০টাকা কেজি বিক্রি হলেও বর্তমানে তা বেড়ে ৬০ থেকে ৮০টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।
হিলি বাজারে সবজি কিনতে আসা ভ্যান চালক খালেদ হোসেন বলেন, আমি সারাদিন ভ্যান চালিয়ে ৩ থেকে ৪শ টাকা আয় করি। এর মধ্যে চাল কিনতেই অর্ধেক টাকা শেষ হয়ে যায়। বাকি টাকা দিয়ে ভর্তা ভাত খাওয়ার জন্য যে কিছু সবজি কিনবো তার উপায় ছিলনা। এককেজি বেগুন ৬০টাকা দাম, যে মুলা আগে মানুষ খেতোনা ফেলে দিত৫/১০টাকা দাম ছিল সেই মুলা পর্যন্ত ৪০টাকায় উঠে গিয়েছিল যার কারনে কিনতে পারছিলাম না। আর বাকি থাকলো ফুলকপি বাধাকপি ও শিম এত দাম ছিল যে এগুলো কেনা তো দুরের কথা ভয়ে দাম পর্যন্ত শুনতে চাইতামনা আর খাওয়া তো দুরের কথা ছিল। সবধরনের সবজির দাম বাড়তি ছিল এতে করে খুব কষ্ট করে দিনাতিপাত করতে হয়েছিল। বর্তমানে সবজির দাম কমতে শুরু করেছে এতে করে অন্তত দুবেলা ভর্তা ভাত খেয়ে বাঁচতে পারবো।
হিলি বাজারে সবজি কিনতে আসা রেবেকা সুলতানা বলেন, আমার স্বামী ঢাকায় একটি কোম্পানিতে নৈশপ্রহরির কাজ করেন। সে যে টাকা পাঠাতেন আগে জিনিসপত্রের দাম কমছিল তাতে করে তার মধ্যেই কমবেশী করে পণ্য কিনে ছেলে মেয়ে নিয়ে চলতে পারতাম। কিন্তু যে হারে সবজির দাম বেড়ে গিয়েছিল তাতে করে কাঁচা তরিতরকারি কিনতেই বাজেটের টাকা সব শেষ হয়ে যেত অন্য কিছু ক্রয় করা সম্ভব হচ্ছিলনা। খুব কষ্ট করে পণ্যের পরিমান কমিয়ে চলতে হচ্ছিল। বর্তমানে বাজারে শীতকালীন সবজির দাম অর্ধেকে নেমেছে এতে করে আমাদের মত মানুষদের কিনতে সুবিধা হচ্ছে। দাম যেন এমন থাকে তাহলে আমাদের মত মানুষজন চলতে পারবে।
হিলি বাজারের সবজি বিক্রেতা আব্দুল মালেক বলেন, কিছুদিন আগে থেকেই শীতকালীন বিভিন্ন সবজি বাজারে উঠতে শুরু করেছিল। সেসময়ে পরিমানে কম থকায় দাম বাড়তি ছিল। বর্তমানে শীতকালীন মৌসুম শুরু হওয়ায় আশেপাশের অঞ্চলের কৃষকরা ক্ষেত থেকে শীতকালীন সবজি তুলতে শুরু করেছেন। এতে করে বাজারে শীতকালীন সবজির সরবরাহ পুর্বের তুলনায় দ্বিগুন বেড়েছে। যার কারনে শীতকালীন সবধরনের সবজির দাম অর্ধেকে নেমেছে। সবজির দাম কমায় ক্রেতারা যেমন খুশি তেমনি আমাদের বেচাকেনা ভালো হওয়ায় আমরাও খুশি। যত দিন যাবে তত দেশের অন্যান্য অঞ্চলের কৃষকরা তাদের ক্ষেতে লাগানো সবজি উত্তোলন শুরু করবে এতে করে বাজারে শীতকালীন সবজির সররবাহ আরো বাড়বে এতে করে দাম কমে আসবে।
হাকিমপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ নূর-এ আলম বলেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম যেন অহেতুক কেউ বাড়াতে না পারে সেজন্য আমরা নিয়মিতভাবে বাজার মনিটরিং করি। কেউ যদি কোন পণ্যের দাম বাড়ায় সেটি প্রমানিত হলে তার বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করে অর্থদন্ড প্রদান করা হবে।