সমালোচনায় পড়া পঞ্চগড়ের মিতু-তুষ্ণা সুযোগ পেলো অনূর্ধ্ব-১৫ দলে

পঞ্চগড় প্রতিনিধি।।

ক্লাস নবম শ্রেণীতে পড়া দুই বান্ধবী নুসরাত জাহান মিতু ও তৃষ্ণা রানী রায়ের স্বপ্ন বড় খেলোয়াড় হবে। জাতীয় দলে খেলার পাশাপাশি দেশের নাম উজ্জল করবে। অতপর ট্রাইল শেষে নিজ স্বপ্ন বাস্তবায়ন করলো দেশের সর্ব উত্তরের প্রান্তিক জেলা পঞ্চগড়ের ১৪ বছর বয়সী এই দুই মেয়ে।

অনেক ছোট বয়স থেকে খেলাধুলার প্রতি আগ্রহ তাদের। দুই বান্ধবী স্কুলের ক্লাস শেষে বাড়ি ফিরে খেলতে যেত মাঠে। খেলার জন্য বাড়ি থেকে বের হলে মাঝে মধ্যেই রাস্তাঘাটে স্থানীয় লোকজনের মুখে শুনতে হতো নানা সমালোচনা কথা। অন্যদিকে লোকের মুখের শোনা কথায় কিছুটা থমকে যাওয়া এ দুই খেলোয়াড়কে উৎসাহ দিয়েছেন স্থানীয় প্রশিক্ষক বিপুল। এক সময় প্রশিক্ষককেও শুনতে হয়েছে নানান কথা। এবার অনুষ্ঠেয় অনূর্ধ্ব-১৫ দলে খেলবে পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার মেয়ে ও বোদা পাইলট বালিকা স্কুল অ্যান্ড কলেজের নবম শ্রেণির এ দুই ছাত্রী।

পঞ্চগড়ের বোদা ফুটবল একাডেমির প্রশিক্ষক মোফাজ্জল হোসেন বিপুল বলেন, জাতীয় দলের অংশগ্রহণকারী নুসরাত জাহান মিতু পঞ্চগড়ের বোদা পৌরসভার কলেজপাড়া এলাকার রব্বানীর মেয়ে ও তৃষ্ণা রানী রায় একই পৌরসভার ভাসাইনগর এলাকার উমের রায়ের মেয়ে। বৃহস্পতিবার (২৮ অক্টোবর) দুপুরে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বিএফএফ) থেকে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে মৌখিকভাবে তাদের দলের নেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে। তবে এর আগে তারা ট্রায়ালের জন্য ঢাকায় গেলে গত ২৬-২৭ অক্টোবর ট্রায়ালে উত্তীর্ণ হয়ে বর্তমানে ফেডারেশনে অবস্থান করছে, থাকবে আগামী ২২ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। এ পর্যন্ত আসতে তাদের অনেক কিছু সহ্য করতে হয়েছে। নানান রকম কটূক্তি হজম করে তাদের প্রশিক্ষণ দিয়েছি। এ জন্য তাদের অভিভাবকদের সহযোগিতা ছিল। তারা সহযোগিতা না করলে আমি তাদের এ জায়গায় পৌঁছে দিতে পারতাম না।

অনূর্ধ্ব-১৫ জাতীয় দলে সুযোগ পাওয়া নুসরাত জাহান মিতুর বাবা রব্বানী বলেন, ছোট থেকেই ফুটবল খেলার প্রতি আগ্রহ ছিল মেয়ের। স্বপ্ন ছিল একদিন জাতীয় দলে খেলবে। মেয়েকে খেলায় পারিবারিকভাবে যতটুকু সম্ভব সমর্থন দিয়েছি। তবে মাঝে মধ্যে মেয়েটাকে মানুষের কিছু কথা শুনতে হয়েছে। তবে আজ মেয়ের স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। একই কথা জানান তৃষ্ণা রানী রায়ের বাবা উমেরও।

জানা গেছে, স্থানীয় প্রশিক্ষক মোফাজ্জল হোসেন বিপুলের কাছ থেকেই মিতু ও তৃষ্ণার এ পথ চলা। বিপুল প্রমীলা ফুটবলকে এগিয়ে নিতে ছুটে চলেন গ্রাম থেকে গ্রামাঞ্চলে। নিজ উদ্যোগে গড়ে তোলেন বোদা ফুটবল একাডেমি। এ একাডেমিতে বালক, বালিকা উভয়ের কোচিং করানো হয়। জাতীয় ও স্থানীয়ভাবে বালক ও বালিকা দল ব্যাপক সুনাম অর্জন করে।

বোদা পাইলট বালিকা স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রধান শিক্ষক রবিউল আলম সাবুল বলেন, মেয়ে দু’টি আমার বিদ্যালয়ের ছাত্রী। তাদের এ অর্জন আমার প্রতিষ্ঠানের জন্য অনেক সুনামের। আমি চাই মিতু ও তৃষ্ণার মতো পঞ্চগড় জেলার আরও খেলোয়াড় জাতীয় দলে খেলার সুযোগ পাক। এদিকে প্রশিক্ষক বিপুলের চেষ্টাও কম ছিল না। তার এসব কাজে সার্বক্ষণিক আমি সহযোগিতা করেছি।

বোদা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সোলেমান আলী বলেন, অনূর্ধ্ব-১৫ জাতীয় দলে মিতু ও তৃষ্ণা খেলার সুযোগ পেয়েছে। তাদের এ অর্জন এ উপজেলার সুনাম বাড়িয়েছে। আমি ব্যক্তিগতভাবে বোদা ফুটবল একাডেমির খোঁজ খবর রাখি। খেলোয়াড় তৈরির ক্ষেত্রে আমার সহযোগিতা সব সময় থাকবে।

আরো দেখুনঃ