ভারত ও মিয়ানমার সীমান্তে বাংলাদেশি নাগরিক হত্যা বন্ধে দেশের সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে প্রতীকী লাশ নিয়ে মিছিল করছেন হানিফ বাংলাদেশি নামে এক ব্যক্তি। তার এই কর্মসূচীর সাথে যুক্ত হয়েছে ঘুরছেন তিন যুবক।
গত ১৬ ফেব্রুয়ারি কক্সবাজারের টেকনাফ থেকে শুরু হওয়া এই মিছিলটি ২২ তম জেলা হিসেবে শনিবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে পঞ্চগড় শহরের শেরে বাংলা পার্কে পৌছায়। পরে সেখানে প্রায় আধাঁঘন্টা অবস্থান নিয়ে সীমান্ত হত্যা ও দেশে বিদেশী আগ্রাসন বন্ধে প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এর পরে তিনি সীমান্ত হত্যা ও বিদেশী অগ্রাসন বন্ধে পঞ্চগড় চৌরঙ্গী মোড় থেকে প্রতিকী মরদেহ নিয়ে একটি মিছিল বের করেন।
এ সময় হানিফ বাংলাদেশির সঙ্গে আসা তিন যুবক প্রতীকী লাশ নিয়ে দাঁড়িয়ে থেকে সীমান্তে হত্যা বন্ধে প্রতিবাদ জানান। তারা হলেন, এনইউ আহমেদ, সৌরভ হোসেন বেলাল ও মোহাম্মদ আরিফ হোসেন।
হানিফ বাংলাদেশি বলেন, ‘বাংলাদেশের প্রতিবেশী দুটি দেশ আছে। একটি ভারত ও অন্যটি মায়ানমার। এই দেশ দুটি সব সময় বাংলাদেশের ওপর আগ্রাসন চালাচ্ছে। মিয়ানমার ১২ লাখ রোহিঙ্গাকে অত্যাচার করে বাংলাদেশে পাঠিয়েছে। এসব রোহিঙ্গা নিজেরা মানববেতর জীবনযাপন করছে, বাংলাদেশের নানা রকম সামাজিক সংকট সৃষ্টি করছে। গত ৫ ফেব্রুয়ারি দেশটির অভ্যন্তরে যুদ্ধের কারণে মর্টার শেল বাংলাদেশে এসে পড়ে দুই বাংলাদেশি নিহত হয়েছে। ওই দেশটির ৩৩০ জন বিজিপি সহ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী দেশে অনুপ্রবেশে করেছে। তাদের বাংলাদেশ সরকার সম্মানের সাথে ফেরত পাঠিয়েছে। কিন্তু দুই বাংলাদেশি নিহতের ঘটনার দায় কে নেবে? অবশ্যই মিয়ানমার সরকারকে এই হত্যার দায় নিতে হবে। তা না হলে বাংলাদেশ সরকারকে এর দায় নিতে হবে।
হানিফ বাংলাদেশী আরো বলেন, ভারত সব সময় সীমান্তে নিরিহ মানুষকে পাখির মত গুলি করে হত্যা করছে। গত ২২ জানুয়ারী যশোরের শার্শা উপজেলার বেনাপোল ধান্যখোলা সীমান্তে বাংলাদেশের একজন বিজিবি সদস্যকে বিএসএফ গুলি করে হত্যা করেছে। গত ৪ মাসে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে ২১ জন বাংলাদেশী বিএসএফ এর গুলিতে নিহত হয়েছেন। বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনের হিসেবে ২০১০ সাল থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ১ হাজার ২৭৬ জন বাংলাদেশীকে বিএসএফ হত্যা করেছে আর বাহিনীটির গুলিতে আহত হয়েছেন অন্তত ১ হাজার ১৮৩ জন।
হানিফ বাংলাদেশী বলেন বাংলাদেশের জনগণ সব সময় প্রতিবেশি ও বন্ধু দেশ গুলোর সাথে ভালো সম্পর্ক রাখতে চায় কিন্তু প্রতিবেশী দেশ দুইটি বাংলাদেশের সাথে সব সময় বৈরি আচরণ করে। সীমান্তে বাংলাদেশিদের হত্যার পরে বলা হয় এরা গরু চোর চোরাকারবারি। হতে পারে এরা গরু চোর চোরাকারবারি। তহালে তাদের আইনের আওতায় এনে বিচার করা হোক। গুলি করে হত্যা করবে কেন?। ভারত যদি তাদের দেশের পাচারকারিদের দমন করে তাহলে বাংলাদেশের পাচারকারিরা এমনিতে বন্ধ হয়ে যাবে। স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশে রাষ্ট্র ক্ষমতায় যখন যে দলই এসেছে, সে দলই দীর্ঘ মেয়াদে ক্ষমতায় থাকার জন্য দেশের মানুষের আর্ত মর্যাদা বিসর্জন দিয়ে বিদেশিদের দ্বারস্থ হয়েছেন।
শাসকদের এই দুর্বল নতজানুর কারণে ভারত ও মিয়ানমার সব সময় বাংলাদেশের উপর আগ্রাসন চালিয়ে যাচ্ছে, বিদেশী অন্য দেশ গুলো বাংলাদেশের অভ্যন্তরিন বিষয়ের উপর খবরদারি করার সাহস পাচ্ছে। ৩০ লক্ষ শহিদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীন দেশের মানুষ কখনও কোন দেশের আগ্রাসন দাদাগিরি মেনে নেয়নি আমাদের বিগত প্রজন্ম। নতুন প্রজন্মও কোন দেশের আগ্রাসন মেনে নেবেনা। বাংলাদেশের মানুষ আর্ত মর্যাদা নিয়ে বিশ্বের দরবারে মাথা উচ্ছু করে বাঁচতে চায়।
হানিফ বাংলাদেশী এই কর্মসূচিতে আমারা দেশবাসীর সার্বিক সহযোগিতা কামনা করে দেশের সচেতন মানুষদের এই কর্মসূচীতে অংশ গ্রহণ করার আহবান জানান।
গত ১৬ ফেব্রুয়ারি কক্সবাজার জেলার টেকনাফ উপজেলার জিরোপয়েন্টে শুরু হওয়া প্রতীকী লাশের মিছিল সারা দেশ ঘুরে আগামী ২৬ ফেব্রুয়ারি যশোরের বেনাপোল সীমান্ত গিয়ে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে বলে জানান হানিফ বাংলাদেশি।
এফআর/অননিউজ