চলতি বিশ্বকাপে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়েই নকআউট পর্বের টিকিট পেয়েছিল পর্তুগাল। কিন্তু গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে দক্ষিণ কোরিয়ার কাছে তারা শেষ পর্যন্ত ২-১ গোলে হেরেই গিয়েছিল। ফলে রোনালদোর ক্যারিয়ারের শেষ বিশ্বকাপে নকআউট রাউন্ডে পর্তুগালের সামনে বেশ কঠিন চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করছিল। কারণ গত ম্যাচে তেমন আহামরি পারফরম্যান্স দেখাতে পারেনি ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোরা।
তবে ঠিক সময়েই জ্বলে উঠল ফার্নান্দো সান্তোসের দল পর্তুগাল। সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে শেষ ষোলোর ম্যাচে তরুণ তুর্কি গঞ্জালো রামোসের হ্যাটট্রিক এবং পেপে, লেয়ো ও গুয়েরেরোর একটি করে গোলে ৬-১ গোলের জয় পেয়েছে ২০১৬ ইউরো চ্যাম্পিয়নরা। এই জয়ে সুইসদের বিধ্বস্ত করে কাতার বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে চলে গেল ব্রুনো ফার্নান্দেজ-রোনালদোরা।
মঙ্গলবার (৬ ডিসেম্বর) দোহার লুসাইল আইকনিক স্টেডিয়ামে শেষ ষোলোর ম্যাচে শুরুর একাদশে রোনালদোকে দলে রাখেননি পর্তুগিজ কোচ সান্তোস। তার পরিবর্তে একাদশে সুযোগ পান গঞ্জালো রামোস। এদিন তাকে একাদশে রাখা নিয়ে আলোচনাও হচ্ছিল বেশ। তবে মাঠে নেমে সব আলোচনায় সব ঘি যেন ঢেলে দিলেন বেনফিকার এই স্ট্রাইকার।
ম্যাচের ১৭ মিনিটে তার গোলেই প্রথম লিড পায় পর্তুগাল। বাম পাশ থেকে হোয়াও ফেলিক্সের পাস থেকে বুলেট গতিতে শট নেন রামোস। যার সুবাদে সুইস গোলরক্ষকের মাথার উপর দিয়ে কোনাকুনি শট মুহূর্তেই জালের দেখা পেয়ে যায়। এতে গোটা দলের মধ্যে আত্মবিশ্বাস আরও বেড়ে যায়।
ওদিকে শুরুতেই গোল খেয়ে ম্যাচে ফিরতে মরিয়া হয়ে ওঠে সুইসরা। কিন্তু পর্তুগিজদের দারুণ রক্ষণভাগের কারণে সুযোগ তৈরি করে পেরে ওঠেনি। উল্টো ম্যাচের ৩৩ মিনিটে আবারও লিড পায় পর্তুগাল। ব্রুনো ফার্নান্দেজের নেওয়া কর্নার কিকে দারুণ এক হেড করে গোল করেন ৩৯ বছর বয়সী অভিজ্ঞ ডিফেন্ডার পেপে।
এই গোলে বিশ্বকাপের ইতিহাসে সবচেয়ে বয়স্ক ফুটবলার হিসেবে নকআউটে গোল করার রেকর্ড করলেন পেপে। এরপর সুইজারল্যান্ড কয়েকবার চেষ্টা করেও পর্তুগিজদের রক্ষণের তেমন পরীক্ষা নিতে না পারায় ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে থেকেই বিরতিতে যায় পর্তুগাল।
বিরতি থেকে ফিরে আরও ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠে রোনালদোবিহীন পর্তগাল। যার সুবাদে বিরতির সাত মিনিট পরেই নিজের দ্বিতীয় গোল করেন রামোস। দিয়েগো দালোতের বাড়ানো ক্রসে দারুণ ফিনিশিংয়ের মাধ্যমে জালের ঠিকানা খুঁজে নেন এই তরুণ। এতে পর্তুগালও ৩-০ ব্যবধানে এগিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালের পথে এগিয়ে যায়।
তবে এদিন যেন পর্তুগাল অন্য কিছু চিন্তা করে মাঠে নেমেছিল। দক্ষিণ কোরিয়ার বিপক্ষে শেষ মুহূর্তের হার পর্তুগিজদের আরও তাঁতিয়ে দিয়েছিল। যার কারণে এক গোলের রেশ কাটতে না কাটতেই আবারও গোল করে তারা। এবার রামোসের বাড়ানো পাস থেকে স্কোরবোর্ডে নাম লেখান রাফায়েল গুয়েরেরো।
ফলে চার গোলে পিছিয়ে থাকা সুইজারল্যান্ড ম্যাচ থেকে অনেকটাই ছিটকে যায়। তবে ৫৯ মিনিটে ম্যানুয়েল আকাঞ্জি একটি গোল করে সুইসদের হয়ে একটি গোল পরিশোধ করেন। কিন্তু সুইসদের এই গোলের আনন্দ বেশিক্ষণ স্থায়ী হতে দেননি গঞ্জালো রামোস।
৬৭তম মিনিটে পর্তুগালের হয়ে নিজের হ্যাটট্রিক পূরণ করেন ২১ বছর বয়সী এই তারকা। এই হ্যাটট্রিকে পেলের পর সবচেয়ে কমবয়সী ফুটবলার হিসেবে বিশ্বকাপের নকআউটে হ্যাটট্রিকের রেকর্ড করেন এই তরুণ। যা আবার মরুর বুকে বিশ্বকাপের প্রথম হ্যাটট্রিক।
এরপর ম্যাচের ৭৩ মিনিটে রামোসকে তুলে নিয়ে রোনালদোকে মাঠে নামান কোচ। মাঠে নেমে ৮৫তম মিনিটে একটি গোলও করে বসেছিলেন তিনি। তবে অফসাইডের কারণে গোলটি বাতিল করে দেন রেফারি। ম্যাচের একদম অন্তিম মুহূর্তে এসি মিলান তারকা রাফায়েল লেয়ো আরো একটি গোল করলে ৬-১ গোলের বিশাল ব্যবধানে জয় নিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে উঠে যায় পর্তুগাল।