সুখি হতে মনের সন্তুষ্টি প্রয়োজন,অর্থকড়ি নয়!

নিজস্ব প্রতিবেদন।।

সমাজে ধনী,গরিব,সুখী,অসুখী, বিভিন্ন ধাঁচের মানুষের বসবাস।তবে বর্তমানে সুখী মানুষ খুঁজে পাওয়া সোনার পাথর বাটির মতো। সকলেই সুখী হতে পারে না। তবে সুখী হতে পয়সা লাগে না। নিজের ইচ্ছা থাকলে অবশ্যই সুখী হওয়া সম্ভব।

নিজের যতটুকু আছে তন্মধ্যে সন্তুষ্ট থাকলে, আনন্দ খুঁজে পেলে সুখী হওয়া কঠিন কিছু না। সুখ একটা আপেক্ষিক ব্যাপার। তবে মনে রাখতে হবে, ধনবান ব্যক্তি হলেই সুখী হওয়া যাবে, তা নয়। ছোট কুটিরেই সুখ লাভ করা যায়।

অনেকেরই ধারণা টাকা পয়সা হলেই জীবনে অনেক সুখ সমৃদ্ধি আসবে, অনেক প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব হিসেবে পরিচিতি পাওয়া যাবে সকলের কাছে। এবং মনে করে থাকেন অর্থ দিয়ে যে কোনো কিছুই কিনে ফেলা যাবে। অর্থ ক্ষণিকের সুখ দিতে পারে ঠিকই কিন্তু সব সময় সব কিছু অর্থ দিয়ে বিবেচনা করা সম্ভব নয়। এবং জীবনের সব কিছুই অর্থ দিয়ে কিনে ফেলাও সম্ভব হয় না কখনো।

অর্থ দিয়ে সম্মান ও শ্রদ্ধা কেনা যায় না, কেউ কিনতে পারেন নি। আপনার অর্থের বিনিময়ে জনসম্মুখে মানুষকে ভয় দেখিয়ে হয়তো সম্মানের নাটকটি পেতে পারেন কিন্তু মানুষের মনে মধ্যে নিজের জন্য সম্মান ও শ্রদ্ধার উদ্রেক করতে পারবেন না কখনোই। আপনার সামনে যদি আপনাকে সম্মান ও শ্রদ্ধা করে সেটি হবে ভয়। অন্য কিছুই নয়। অর্থ দিয়ে কেউই কখনো নিজের সম্মান ও শ্রদ্ধা কিনতে পারেন না। ভালোবাসা এবং মায়ামমতা সম্পূর্ণই মানবিক এবং মানসিক ব্যাপার। আপনি জোর করে নিজের অর্থ দিয়ে অন্য কারো মনে নিজের জন্য ভালোবাসা এবং মায়ামমতার সৃষ্টি করতে পারবেন না। ভালোবাসা এবং মায়ামমতার সাথে শুধুমাত্র ভালোবাসারই বিনিময় হয় অর্থের নয়।

অর্থ দিয়ে আরও যে জিনিসটি কিনতে পারবেন না তা হলো জীবনের সুখ। আপনি যতো অর্থের মালিকই হন না কেন জীবনে সুখি হতে এই অর্থের আসলেই কোনো মূল্য নেই। জীবনে সুখি হতে প্রয়োজন মনের সন্তুষ্টি এবং মানসিক প্রশান্তি যা অর্থ নিয়ে আসতে পারে না। অনিদ্রায় রাত পার হয়ে যায়, চোখে ঘুমের লেশমাত্র নেই। অনেক ডাক্তার-কবিরাজ এবং ওষুধ পথ্য করতে পারবেন আপনি টাকা দিয়ে কিন্তু চোখে ঘুম আনতে পারবেন না একেবারেই।

ঘুমের সাথে শারীরবৃত্তীয় নানা বিষয়ের সাথে মনের দিকটিও সম্পর্কিত। আর মনের সাথে সম্পর্কিত কোনো বিষয়ই অর্থ দিয়ে কেনা সম্ভব নয়। টাকা পয়সা দিয়ে আরও যে জিনিসটি কিনতে পারবেন না তা হলো ফেলে আসা সময়। আপনি জীবনে যতই চেষ্টা করুন না কেন, যাই করুন না কেন কখনোই ফেলে আসা সময় ফিরিয়ে আনতে পারবেন না। আপনি বিপুল সম্পদের মালিক হলেও যা চলে যায় তা ফিরিয়ে আনা আপনার পক্ষে সম্ভব নয়।

মেধা ও প্রতিভা

আপনি অর্থ দিয়ে অনেক ডিগ্রি এবং নানা সৃজনশীল পণ্য কিনতে পারবেন কিন্তু যা কিনতে পারবেন না তা হলো মেধা ও প্রতিভা। টাকা পয়সার সাথে যার কোনো সম্পর্কই নেই। আপনার অর্থ প্রতিপত্তি না থাকলেও আপনি হতে পারবেন বিপুল মেধা ও প্রতিভার অধিকারী শুধুমাত্র আপনার নিজের যোগ্যতায়। চারপাশের সহজলভ্য নানা সাক্ষ্য-প্রমাণ থেকে মনে হতে পারে যে, টাকায় সুখ কেনা যায়? কিন্তু গবেষণায় প্রমাণ পাওয়া গেছে, আইফোনের সর্বশেষ মডেলটি কিনতে পারলেই শুধু নিজেকে সুখী করা সম্ভব নয়। বরং অন্য লোকদের সহায়তার জন্য টাকা ব্যয় করতে পারলেই প্রকৃত সুখ মেলে!

এমআরআই স্ক্যান করানো হয় উদারতামূলক কাজের সময় মস্তিষ্কের কোন অংশ বেশি সক্রিয় ছিল। এতে দেখা গেছে, মস্তিষ্কের ‘টেম্পোরো-প্যারিয়েটাল জাংশন’ নামের একটি অংশ; স্নায়ুবিজ্ঞানীদের মতে এই অংশটি উদারতার সঙ্গে যুক্ত এবং ‘ভেন্ট্রাল সেরিয়েটাম’ নামের আরেকটি অংশ আছে; যেটি সুখানুভূতির সঙ্গে যুক্ত। গবেষণায় দেখা গেছে লোকে যখন উদারতামূলক সিদ্ধান্ত নেয় তখন মস্তিষ্কের এই দুটি অঞ্চলই উচ্চ সক্রিয় হয়ে ওঠে।

মানুষের স্বভাবই হলো উদার হওয়া। তবে এটাও সত্য যে, আত্মস্বার্থ একটি তীব্র আবেগের বিষয়। কিন্তু আত্মস্বার্থ আমাদেরকে অতটা সুখী করতে পারেন না যতটা সুখী হই আমরা অন্যকে দান করতে পেরে বা সহায়তা করতে পেরে।এমনকি বাচ্চাদের নিয়ে করা একটি গবেষণায়ও দেখা গেছে, বাচ্চারও অন্যদের কাছ থেকে নেওয়ার মধ্যে নয় বরং অন্যদেরকে দেওয়ার মধ্যেই বেশি সুখ পায়।

অন্যান্য গবেষণায় দেখা গেছে, স্বেচ্ছাসেবামূলক কর্মকাণ্ডে লোকে বেশি সুখ পায়। অন্যদের জন্য নিঃস্বার্থভাবে ব্যয় করতে পারলেই লোকে বেশি সুখ অনুভব করেন। নানা সংস্কৃতি এবং অর্থনীতিতেই এটা সত্য বলে প্রমাণিত হয়েছে। আর সুখবরটি হলো সুখ অনুভব করার জন্য আপনাকে খুব বেশি অর্থ ব্যয় করতে হবে না। অন্যের জন্য সামান্য অর্থ ব্যয় করলেই আপনি সুখ পাবেন। আর নৈতিকভাবেও শুধু দান করাটাই ঠিক কাজ কেননা এটি আপনাকে বেশি সুখী করবে।

আয়েশা আক্তার/অননিউজ24

আরো দেখুনঃ