সুস্বাস্থ্য কোনটি?

একজন শিক্ষার্থ ীভালো রেজাল্টের সমস্ত টিপস অনুসরণ করে পরীক্ষার জন্যে তৈরি হতে লাগলেন। কিন্তু এর মধ্যে হঠাৎ একদিন খুব অসুস্থ হয়ে পড়লেন। পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ডাক্তার বললেন কিডনিতে মারাত্মক ইনফেকশন হয়েছে। জরুরি ভিত্তিতে হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে। পরীক্ষা দূরে থাক, বিছানা ছেড়ে ওঠাই এখন সম্ভব না। কী হলো তখন? সব প্রস্তুতি, ভালো রেজাল্টের সব স্বপ্ন ভেস্তে গেল। এ থেকে উপলব্ধি করা যায় ওই শিক্ষার্থ ী দীর্ঘ দিন ধরেই সুস্বাস্থ্যের অধিকারী ছিলেন না। প্রকৃতপক্ষে সুস্বাস্থ্য একটি পরিপূর্ণ ধারণা।

কেবল রোগ-অক্ষমতার অনুপস্থিতিই সুস্বাস্থ্য নয়। সুস্বাস্থ্য হচ্ছে শারীরিক, মানসিক, সামাজিক ও আত্মিক সুখ ও প্রাণ-প্রাচুর্য। মাংস বা পেশী নয়, সুস্বাস্থ্যের মানদণ্ড হলো কর্মক্ষমতা- আমি কতক্ষণ কাজ করতে পারি, কাজ করে আমি ক্লান্ত হই কি না; আমি কতক্ষণ হাঁটতে পারি, হেঁটে আমি ক্লান্ত হই কি না; কয় রাত আমি জাগতে পারি? জেগে আমি ক্লান্ত হই কি না। অর্থাৎ ক্লান্তিহীন জীবন, যে জীবনে অবসাদ নেই, ডিপ্রেশন নেই, সেটাই সুস্বাস্থ্য। আর এই দৃষ্টিভঙ্গিই হলো সুস্বাস্থ্যের জন্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। সুস্বাস্থ্য তাই দেহনির্ভর নয়। কিন্তু দেহ-আশ্রয়ী অর্থাৎ দেহকে বাদ দিয়ে সুস্বাস্থ্য হবে না। একজন সফল শিক্ষার্থী হতে হলে মেনে চলুন নিচের স্বাস্থ্যাভ্যাসগুলো : দ্রুত হজম হয়ে যায় বলে ফল এবং কাঁচা সবজিকে বলা হয় ইন্সট্যান্ট এনার্জির উৎস। বলা হয় একটি কলা খেলে আপনি পাবেন ৫ সেট টেনিস খেলার শক্তি। প্রতিদিনের খাবারে তাই রাখুন নানারকম মৌসুমি ফল এবং সালাদ। মস্তিষ্ক গঠনে প্রোটিনের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। তাই প্রোটিন আছে এমন খাবারগুলো বিশেষভাবে খান। প্রতিদিন একটি ডিম খান। ডালকে বলা হয় জীবন্ত প্রোটিনের উৎস। ডাল খান প্রচুর পরিমাণে।

দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়বে। বাদামে আছে প্রচুর ভিটামিন ও প্রোটিন। চীনাবাদাম, পেস্তাবাদাম, কাজুবাদামসহ সবধরনের বাদাম খান প্রচুর পরিমাণে। দিনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খাবার হলো আপনার সকালবেলার নাশতা। কারণ প্রায় ১০ ঘণ্টারও বেশি সময় না খেয়ে থাকার ফলে আপনার দেহ এখন খাবার গ্রহণের জন্যে পুরোপুরি তৈরি। তাই কর্নফ্লেকস, বিস্কুট বা পাউরুটির বদলে রুটি-পরোটা বা ভাতের মতো ভারী খাবারই নাশতার জন্যে খাওয়া উচিত।

খাওয়ার পর যদি ঘুমঘুম ভাবের সমস্যায় ভোগেন, তাহলে অল্প করে বারবার খান। কিন্তু ডায়েটিং এর প্রচারণায় প্রভাবিত হবেন না। শারীরিক গড়নে প্রতিটি মানুষই অনন্য। আদর্শ ওজন, আকার বা গড়নের নামে শরীরের বিশেষ মাপের প্রাণান্ত চেষ্টা অর্থহীন। জাঙ্কফুড, ফাস্টফুড, সফট ড্রিংকস্ খাওয়ার অভ্যাস বর্জন করুন। হজম করতে সময় লাগে বলে এ জাতীয় খাবার ক্লান্তি ও অবসাদ নিয়ে আসে, কমিয়ে দেয় মনোযোগের ক্ষমতা। মসলাদার, বিষাক্ত রাসায়নিক উপাদানের ব্যবহার এবং প্রক্রিয়াজাত হবার বিপদের কথা বাদই দিলাম।

আমাদের দেহের দুই-তৃতীয়াংশই পানি দ্বারা গঠিত। কোষ্ঠকাঠিন্য ও মাথাব্যথা ছাড়াও পানিশূন্যতার ফলে দৈহিক অবসাদ এবং ঘুমঘুম ভাব দেখা দিতে পারে। তাই পিপাসা না পেলেও প্রতিদিন ৬-৮ গ্লাস পানি পান করুন। সুস্থ থাকার জন্যে শারীরিক শ্রম গুরুত্বপূর্ণ। এজন্যে ব্যায়াম করুন। হাঁটুন। বাসায় নিজের কাজগুলো নিজেই করুন। আর বজ্রাসন, পদ্মাসন, গোমুখাসন- কোয়ান্টাম ব্যায়ামের এ আসনগুলো মনোযোগ ও স্মৃতিশক্তিকে বাড়াতে সহায়ক। ৬-৭ ঘণ্টা ঘুমই একজন ছাত্র/ছাত্রীর জন্যে যথেষ্ট। সকাল সকাল ওঠার চেষ্টা করুন। আরামসে দিনের কাজগুলো করার সুযোগ আপনি বেশি পাবেন।

এফআর/অননিউজ

আরো দেখুনঃ