সীমান্ত নিরাপত্তা ও নাব্য সংকটে চলতি পর্যটন মৌসুমে বন্ধ রয়েছে দেশের দ্বীপ উপজেলা টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিনে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল। এ অবস্থায় এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত হাজার হাজার মানুষ জীবন-জীবিকা নিয়ে চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছেন বলে জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। সেন্টমার্টিনের জনসাধারণের সবচেয়ে বড় আয়ের উৎস পর্যটনকেন্দ্রিক ব্যবসা। এই দ্বীপে যত বেশি পর্যটকের আগমন ঘটে, তত বেশি খুশি হন স্থানীয়রা।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, বাংলাদেশ-মিয়ানমার জলসীমার মাঝখানেই নাফ নদ। পর্যটন মৌসুমে নাফ নদ দিয়ে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন রুটে যাতায়াত করে পর্যটকবাহী জাহাজ। কিন্তু মিয়ানমারের অভ্যন্তরে চলমান সংঘাত ও নাফ নদে নাব্য সংকটে চলতি বছর বন্ধ রয়েছে জাহাজ চলাচল।
সম্প্রতি বঙ্গোপসাগর হয়ে কক্সবাজার-সেন্টমার্টিন রুটে একটি জাহাজ চলাচল করছে। এই জাহাজে প্রতিদিন সেন্টমার্টিন যাচ্ছে ৭০০-এর অধিক পর্যটক। এই অল্প সংখ্যক পর্যটকের আগমনে ব্যবসা-বাণিজ্যে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন দ্বীপে বসবাসকারী ব্যবসায়ীরা। টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌরুটে জাহাজ চলাচলের অনুমতি চেয়ে তারা ইতোমধ্যে মানববন্ধন, সভা-সমাবেশসহ নানা কর্মসূচি পালনও করেছেন।
সেন্টমার্টিনের হোটেল সি প্রবালের পরিচালক আবদুল মালেক জানান, প্রতিবছর অক্টোবর মাসের শুরু থেকে সেন্টমার্টিন পর্যটকে সমারহ থাকে। কিন্তু এ বছর কোনো কোলাহল নেই। হোটেল-রিসোর্ট খালি পড়ে আছে। লোকসান দিতে হচ্ছে প্রতিদিন।
ট্যুর অপারেটর ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব কক্সবাজারের সভাপতি রেজাউল করিম রেজা জানান, টেকনাফ-সেন্টমার্টিন রুটে জাহাজ চলাচল বন্ধ থাকায় চরম অনিশ্চয়তায় পড়েছে দ্বীপের হাজারো মানুষ। অনেকেই বেকার হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্টদের চিন্তা করা উচিত বলে মনে করছি। না হয় কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ করা মানুষগুলোর অবস্থা বেহাল হবে।
ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন অব কক্সবাজার (টুয়াক) সভাপতি আনোয়ার কামাল জানান, প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনে বসবাস করে প্রায় ১১ হাজার মানুষ। আর এই দ্বীপে পর্যটন মৌসুমে চার থেকে পাঁচ মাস পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচলের অনুমতি দেয় প্রশাসন। কিন্তু এ মৌসুমে সরকার কেবল কক্সবাজার-সেন্টমার্টিন রুটে একটি জাহাজ চলাচল করার অনুমতি দিয়েছে। এতে হাজারো পর্যটন-সংশ্লিষ্ট শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছেন। তারা মানবেতর জীবনযাপন করছেন। বিষয়টি পুনরায় বিবেচনা করে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন রুটে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল করার অনুমতি দেওয়া উচিত।
প্রসঙ্গত, পর্যটন মৌসুমে সাধারণত ১০-১২টি জাহাজ এবং ৮-৯টি ছোট বোটসহ মোট ২০-২১টি নৌযান টেকনাফ-সেন্টমার্টিন রুটে চলাচল করত। কিন্তু এবার একটিও চলাচল করছে না।
সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান জানান, দ্বীপের ৯৫ ভাগ মানুষ পর্যটনের ওপর নির্ভরশীল। বিষয়টি পুনরায় বিবেচনা করে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন রুটে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল করার অনুমতি দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
সম্প্রতি টেকনাফ-সেন্টমার্টিন বিকল্প রুট হিসেবে টেকনাফ সৈকতের সাবরাং পয়েন্ট পরিদর্শন করেছেন বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তারা।
এই পয়েন্ট থেকে হলেও দ্রুত জাহাজ চলাচলের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পর্যটন ব্যবসায়ী ও প্রবাল দ্বীপবাসী আকুতি জানিয়েছেন সরকারের প্রতি।
এ ব্যাপারে টেকনাফের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পারভেজ চৌধুরী জানান, এক সপ্তাহ হলো তিনি এখানে এসেছেন। তিনি ব্যবসায়ীদের দাবি-দাওয়ার বিষয়ে জেলা প্রশাসককে জানিয়েছেন। জেলা প্রশাসক বিষয়টি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে জানাবেন বলে তাকে জানিয়েছেন।