ফেনীর সোনাগাজীতে একটি এনজিওর কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। প্রতিষ্ঠানটির নাম ওপিডি সাপোর্ট প্রোগ্রাম। গত ২৫ জুন সোনাগাজী পৌর এলাকার সাত নাম্বার ওয়ার্ডের হাওয়াই রোডের মো. এয়াছিনের বাড়ির নীচ তলায় ভাড়া নিয়ে আটজন প্রতারক অফিস খুলে বসেন। এর আগে বিগত এক থেকে দেড় মাস পর্যন্ত উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের লোকদের মোটা অংকের ঋণ দেওয়ার কথা বলে সঞ্চয় সংগ্রহ করেন তারা। সর্বশেষ ১ জুলাই গ্রাহকদেরকে এক যোগে ঋণ দেওয়ার আশ্বাস দেন তারা। কিন্তু অফিস খুলে আসবাবপত্র সাজিয়ে লোভনীয় অপার দিয়ে প্রায় তিন কোটি টাকা হাতিয়ে নেন তারা। সংস্থাটির ব্রাঞ্চ ম্যানেজার ছিলেন জসিম উদ্দিন। তার ভিজিটিং কার্ডে প্রধান কর্যালয় লেখা ছিল ঢাকার কাকলী বনানীর মিলি সুপার মার্কেটের বিপরীতে দশ নাম্বার রোডের ৫৬০নাম্বার বাড়ির এনএস ভবনের দ্বিতীয় তলা। ১ জুলাই ঋণ দেওয়ার কথা থাকলেও ৩৫০-৪০০ গ্রাহক থেকে প্রায় তিন কোটি টাকা হাতিয়ে প্রতারকরা ২৭ জুন বৃহস্পতিবার অফিসে তালা ঝুলিয়ে ব্যবহৃত মুঠোফোনগুলো বন্ধ করে প্রতারকরা উদাও হয়ে যায়। প্রতারক চক্রের অফিস ও ফোনগুলো একযোগে বন্ধ রেখে টাকা হাতিয়ে পালানোর পর ক্ষতিগ্রস্ত বিক্ষুব্ধ গ্রাহকরা আরো একটি তালা ঝুলে দিয়েছেন। সরেজমিনে গিয়ে অফিসটি বন্ধ পাওয়া গেছে। কর্মকর্তাদের ব্যবহৃত মুঠোফোনগুলো বন্ধ পাওয়া যায়। কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে প্রতারক চক্রটি উধাও হয়ে যাওয়ায় ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে চরম ক্ষোভ ও অসন্তোষ বিরাজমান।
ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকরা ও এলাকাবসী জানায়, জসিম উদ্দিন নিজেকে ব্রাঞ্চ ম্যানেজার পরিচয় দিয়ে এবং অপরাপর সহযোগীরা অফিসের কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে গ্রাহকদের কাছ থেকে সর্ব নিন্ম ১৬ হাজার থেকে শুরু করে ৫৬ হাজার টাকা পর্যন্ত হাতিয়ে নেনন। তিনজন ব্যবসায়ীকে মোটা অংকের ঋণ দেওয়ার প্রস্তাব করে ছয় লাখ সহ চারশতাধিক গ্রাহক থেকে প্রায় তিন কোটি টাকা হাতিয়েছেন।
প্রায় এক থেকে দেড় মাস যাবৎ সহজ কিস্তিতে ঋণ, সন্তানদের লেখাপড়ার খরচের দায়ীত্ব, মৃত্যুর পর ঋণ মাফ, সঞ্চয়ের ওপর দ্বিগুন লাভ ও ঘর নির্মাণ করে দেওয়া সহ লোভনীয় অফার দিয়ে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার গ্রাহকদের থেকে আমানত ও সঞ্চয় সংগ্রহ করেন চক্রটি। রিকশা চালক, দিনমজুর, প্রবাসী ও ব্যবসায়ী সহ প্রায় চার শতাধিক গ্রাহক রয়েছে সংস্থাটির। সদস্য চরচান্দিয়া গ্রামের আয়েশা আক্তারের কাছ থেকে ২৪ হাজার ৫৫০, আসমা আক্তারের ৩৯ হাজার ৫০০, সুমি আক্তারের ৩৯হাজার ৫০০, মো. শাকিলের ৪৫ হাজার ৫৫০, নুর আলমের ১৬ হাজার, বেলায়েত হোসেনের ১৬ হাজার ৫৫০, আকলিমা আক্তারের ১৫ হাজার, টিপু সুলতানের ১৯ হাজার ৫৫০, নুর আলমের ১৬ হাজার ৫৫০, মো. ইসমাঈলের ১৬ হাজার ৫৫০, তামান্নার ২৭ হাজার টাকা ও সুজনের ৫৬ হাজার টাকা সহ অসংখ্য গ্রাহকের কাছ থেকে প্রায় তিন কোটি টাকা হাতিয়েছেন প্রতারকরা।
স্বামীর অজান্তে টাকা রাখায় বেশ কয়েকজন গৃহবধূর সংসার ভাঙার উপক্রম হয়েছে। নিজেদের কষ্টার্জিত টাকা হারিয়ে গ্রাহকরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। বিচার পেতে থানায় গিয়ে ঘুরছেন ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাকরা। দফায় দফায় বন্ধ অফিসটির সামনে গিয়ে বিক্ষোভ করছেন। প্রতারকদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনতে র্যাব-পুলিশের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন ক্ষতিগ্রস্তরা।
এ ব্যপারে সোনাগাজী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্ত (ওসি) সুদ্বীপ রায় জানান, বিষয়টি শুনেছি। ক্ষতিগ্রস্তদেরকে আদালতে শরনাপন্ন হওয়ার পরামর্শ দিয়েছি। এ ব্যপারে জানার জন্য সরেজমিনে গিয়েও সংস্থার ব্রাঞ্চ ম্যানেজার জসিম উদ্দিন ও তার সহকর্মীদেরকে পাওয়া যায়নি। তাদের ব্যবহৃত মুঠোফোন গুলো এবং অফিসটি বন্ধ পাওয়া যায়। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কামরুল হাসান বলেন, বিষয়টি শুনেছি। মানুষ কেন যেন লোভে পড়ে অনিবন্ধিত (আনরেজিস্ট্রার্ড এনজিওতে টাকা দিয়ে প্রতারিত হয়, সেটা বুঝতে পারছিনা। উপজেলা এনজিও কমিটির নিয়ামিত সভা ডেকে জনগণকে সচেতন করা হয়। প্রতারকদের ব্যপারেজনগকে সচেতন হতে হবে।