সোনাগাজীতে নদী ভাঙনে মানচিত্র ছোট হয়ে আসছে

জাবেদ হোসাইন মামুন, সোনাগাজী (ফেনী) প্রতিনিধি,

অব্যাহত ভাঙনের ফলে তিন দিকে নদী বেষ্টিত ফেনী জেলার সোনাগাজী উপজেলার মানচিত্র দিন দিন ছোট হয়ে আসছে। ফসলি জমি, ঘরবাড়ি, রাস্তা-ঘাট ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নদী গর্ভে বিলিন হয়ে যাচ্ছে। ভাঙন আতঙ্কে আনেকে ঘর-বাড়ি রেখে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে গেছেন। কেউ কেউ ভবন ভেঙে রড ও আসবাব পত্র সরিয়ে নিচ্ছেন। শুষ্ক মৌসুমে এ অবস্থা আর বর্ষা মৌসুমে কি ভয়াবহ অবস্থা হতে পারে এমন আতঙ্কে দিনাতিপাত করছেন উপকূলীয় জনপদের বাসিন্দারা। চরদরবেশ ইউনিয়নের দক্ষিণ চরদরবেশ, আদর্শগ্রাম, পশ্চিম চরদরবেশ, কাজীর স্লুইজ গেইট, আলামপুর, তেল্লার ঘাট, ইতালি মার্কেট, ধনী পাড়া, চরচান্দিয়ার সাহেবের ঘাট, মোল্লার চর, পশ্চিম চরচান্দিয়া, বগদানানার আলমপৃর,আউরারখিল, চরমজলিশপুর ইউনিয়নের চরবদরপুর, কুঠির হাট কাটা খিলা, কালি মন্দির, আমিরাবাদ ইউনিয়নের পূর্ব সোনাপুর, বাদামতলী, গুচ্ছগ্রাম সহ বেশ কয়েকটি গ্রামের ঘরবাড়ি নদী গর্ভে বিলিন হয়ে যাচ্ছে। ফেনী জেলা কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক চরচান্দিয়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান সামছুউদ্দিন খোকন বলেন, মুছাপুর রেগুলেটরটির নির্মাণ কাজ ২০০৫সাল থেকে শুরু হয়ে কাজ শেষ হয় ২০০৯ সালে। মুসাপুর ক্লোজার কাজ শেষ হয় ২০১৮ সালে। ভারতীয় বন্যার পানির চাপে ২০২৪ সালের ২৬ আগস্ট রেগগুলেটরটি নদী গর্ভে বিলিন হয়ে যায়। এতে নতুন করে সমস্যার সৃষ্টি হয়। মুছাপুর রেগুলেটরটি ভেঙে যাওয়ায় ফসলি জমি ও ঘরবাড়ি নদী গর্ভে বিলিন হয়ে যাচ্ছে। রেগুলেটরটি নির্মাণ ত্রুটিতে যে বা যারা জড়িত তাদের শাস্তিও দাবি করেন। তিনি আরো দাবি করেন অবৈধভাবে বালি উত্তোলনের কারণেও রেগুলেটরটি আজ নদীতে হারিয়ে গেছে। চরচদরবেশ ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ বলেন, মুছাপুর রেগুলেটর নদীতে হারিয়ে যাওয়ার ফলে দু’পাড়ের বাসিন্দাদের মাঝে নতুন আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। একের পর একে বাড়ি হারাচ্ছে এ জনপদের বাসিন্দারা। নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ ও ফেনীর সোনাগাজী উপজেলাকে বাঁচাতে হলে মুছাপুর রেগগুলেটরটি দ্রুত সময়ের মধ্যে নতুন করে নির্মাণ করতে হবে। চরবদরপুর গ্রামে শতশত ঘর বাড়ি ও ফসলি জমি ভাঙনের হুমকির মুখে রয়েছে দাবি করে চরবদরপুর জামে মসজিদের সেক্রেটারী আবুল কাসেম বলেন, মুসাপুর রেগুলেটর নির্মাণের পর থেকে এ জনপদের মানুষগুলো আশায় বুক বেঁধেছিল। নতুন নতুন দালান ঘর, পাকা মসজিদ নির্মাণ সহ রাস্তা-ঘাট পাকা করেছিল। আলামপুর মারিয়া দাখিল মাদ্রাসার সুপারিন্টেন্ডেন্ট মাও. আবদুল হাকিম বলেন নদী ভাঙনের ফলে সোনাগাজী উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নের গ্রামীণ জনপদ ও বিস্তির্ণ চরাঞ্চলে ছোট ফেনী নদীর ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করে। তেমনি আলামপুর গ্রামটিও নদী ভাঙনের হুমকির মুখে রয়েছে। ইতোমধ্যেই প্রধান সড়কটি নদীতে বিলিন হয়ে গেছে। মানুষের ঘরবাড়ি, দোকান-পাট, মসজিদ ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো পুরেই ভাঙনের হুমকিতে রয়েছেন। মুছাপুর রেগুলেটর প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়ন করে সড়ক, মানুষের ঘরবাড়ি, মসজিদ ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো রক্ষা করতে হবে। ফেনী নদীর ভাঙন আতঙ্কে সোনাগাজী উপজেলার লোকজন নির্ঘুম রাত যাপন করছেন। নদী তীরবর্তী লোকদের আহাজারি দেখার কেউ নেই। প্রতি দিন তীব্র থেকে তীব্র হচ্ছে নদী ভাঙন। সম্ভাবনাময় উপজেলাটি নদী গর্ভে হারিয়ে যাচ্ছে। সোনাগাজী উপজেলা জামায়াতের আমির মো. মোস্তফা বলেন, বাংলাদেশের মানচিত্রে সোনাগাজী ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলাকে বাঁচাতে হলে মুছাপুর রেগুলেটর পূণঃনির্মাণ এবং ভাঙন কবলিত এলাকায় নতুন প্রকল্প দিতে হবে। তবে স্থায়ী সমাধান করতে হলে রেগুলেটরটি দ্রুত পূণঃনির্মাণ করতে হবে। সোনাগাজী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কামরুল হাসান বলেন, নদী ভাঙনের বিষয়টি জেনেছি। পাউবো সহ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি অবগত করেছি। মুছাপুর রেগুলেটর নদীগর্ভে বিলিন হওয়ার পর দুই উপজেলার বাসিন্দারাই নদী ভাঙনের কবলে পড়েছেন। আগ্রাসী নদী ভাঙনের ফলে দুই উপজেলার বাসিন্দাদের মাঝে নতুন আতঙ্ক শুরু হয়েছে।

আরো দেখুনঃ