ফেনীর সোনাগাজী সদর ইউনিয়নের মুন্সি খুরশীদ আলম বালিকা বিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণার প্রতিবাদে স্মারকলিপি ও মানববন্ধন কর্মসূচী পালন করেছে শিক্ষার্থীরা। রোববার সকাল সাড়ে দশটায় সোনাগাজী পৌর শহরের জিরোপয়েন্টে (শূন্য রেখায়) মানববন্ধন কর্মসূচী পালন করে ছাত্রীরা। মানববন্ধন শেষে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, নির্বাহী কর্মকর্তা এএম জহিরুল হায়াত ও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের নিকট স্মারকলিপি দিয়েছে ছাত্রীরা।
শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা জানায়, ওয়াসিল উদ্দিন মুহরী বাড়ির বাসিন্দা, লন্ডন প্রবাসী ব্যারিস্টার নুরুল হক ও আনোয়ারা বেগম নি:সন্তান দম্পতি ২০১৫ সালে দাতব্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি প্রতিষ্ঠা করেন। পূর্ব তুলাতুলি গ্রামে গড়ে ওঠা এই দাতব্য প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সম্পূর্ণ বিনা খরচে বৃত্তি সহকারে পড়ার সুযোগ পেয়েছিল ঝরে পড়া দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মেয়েরা। পর্যায়ক্রমে পূর্ণাঙ্গ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে রূপ নেয়ায় এলাকায় নারী শিক্ষায় শুরু হয়েছিল এক নতুন দিগন্তের। প্রতিষ্ঠাতা ব্যরিস্টার নুরুল হক দম্পতি গ্রামবাসীকে আশ্বাস দিয়েছিলেন তারা মারা গেলেও প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ হবে না। তাদের মৃত্যুর পরও খরচ বহনের জন্য পর্যাপ্ত সম্পদ ও অর্থ রেখে যাবেন যারা। কোন খরচ বহন করতে হবে না শিক্ষার্থীদেরকে। সম্পূর্ণ খরচ বহণ করবেন তারা।
তাদের এই আশ্বাসে আস্থা রেখেছিল গ্রামবাসী। পাঁচ বছরে দুই শতাধিক শিক্ষার্থী ভর্তি হয়ে সকল সুযোগ সুবিধা নিয়ে পড়ালেখা করে আসছেন। গত দুই বছরে এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছিল দুটি ব্যাচ। এবারও এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল ১৫জন শিক্ষার্থী। ৬ষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত ১৬৪জন শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত রয়েছে। নয় জন শিক্ষক ও একজন অফিস সহকারি কর্মরত রয়েছেন বিদ্যালয়টিতে। হঠাৎ শিক্ষকদের ডেকে নিয়ে রহস্যজন কারণে আগামী ৩১ডিসেম্বর থেকে বিদ্যালয়টি বন্ধ ঘোষণা করেন সভাপতি আহমদ আল আক্তার টিপু। তিনি প্রতিষ্ঠাতা ব্যারিস্টার নুরুল হকের ভাতিজা। বিদ্যালয়টি হঠাৎ বন্ধ ঘোষণা করায় শিক্ষার্থী, অভিভাবক এবং শিক্ষকরা বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন। তাই শিক্ষার্থীরা বাধ্য হয়ে বিদ্যালয়টি চালু রাখার দাবীতে এসব কর্মসূচী পালন করেছেন। ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সোহেল কামাল সিদ্দিক বলেন, ব্যারিস্টার নুরুল হক দম্পতি অসুস্থ্য থাকায় তার ভাতিজা টিপু স্কুল বন্ধ করে সম্পত্তি আত্মসাতের পাঁয়তারা করছেন। তবে বিদ্যালয়টিতে শিক্ষার গুণগতমান ও ফলাফল অত্যান্ত সন্তোষজনক। হঠাৎ দৃশ্যমান কোনো কারণ ছাড়া বিদ্যালয়টি বন্ধের ঘোষণা করায় শিক্ষক মন্ডলী ও শিক্ষার্থীদেরকে মর্মাহত করেছে। মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন, দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী বিবি ফাতেমা মাহি, জেসমিন আক্তার, মোরশেদা তামান্না, রোজিনা আক্তার, বিবি কুলসুম, নাসরিন আক্তার ও নাজমুন নাহার প্রমুখ।
এসময় শিক্ষার্থীরা বলেন, ৬ষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত এখানে পড়ছি। কিছুদিন পর আমাদের পরীক্ষা। হঠাৎ স্কুল বন্ধের ঘোষণা কোন মতেই মেনে নিতে পারছিনা। বিনামূল্যে পড়ানোর কথা বলে বাড়ি থেকে ডেকে এনে ভর্তি করিয়ে আমাদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তার মুখে ঠেলে দিয়েছে ওরা। বিদ্যালয়েরর সভাপতি আমাদের সাথে প্রতারণা করেছেন। বিদ্যালয়টি চালু রাখতে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন কোমলমতি শিক্ষার্থীরা।
এ ব্যাপারে বিদ্যালয়ের সভাপতি আহমদ আল আক্তার টিপু মুঠো ফোনে বলেন, প্রতিষ্ঠাতা দম্পতি গুরুত্বর অসুস্থ্য থাকায় বিদ্যালয়টি বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। নি:সন্তান দম্পতির সম্পত্তি কুক্ষিগত করার জন্য বিদ্যালয়টি বন্ধ ঘোষণা করেছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি মন্তব্য করতে রাজি নয় বলে লাইন কেটে দেন।
আহসানুজ্জামান সোহেল/অননিউজ24।।