ফেনীর সোনাগাজীতে ভুল চিকিৎসায় ফেরদৌস আরা (৩৫) নামে এক প্রসুতি মৃত্যুর অভিযোগে হাসপাতাল ঘেরাও করে ভাঙচুর করেছে বিক্ষুদ্ধ জনতা। উপজেলার আমিরবাদ ইউনিয়নের ১০ শয্যা বিশিষ্ট মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রে শুক্রবার দুপুরে এ ঘটনা ঘটে। এলাকাবাসী, পুলিশ ও ভুক্তভোগী পরিবার জানায়, সোনাগাজী সদর ইউনিয়নের আশ্রয় কেন্দ্রের বাসিন্দা রিকশা চালক নিজাম উদ্দিনের স্ত্রী ফেরদৌস আরার প্রসব বেদনা উঠলে গত ৮ এপ্রিল রাত ১১টার দিকে সোনাপুর ১০ শয্যা বিশিষ্ট মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রে ভর্তি করা হয়। কর্তব্যরত নার্স কল্পনা রানীর আধীনে নরমাল ডেলিভারিতে রাত ২টার দিকে প্রসুতির পুত্র সন্তান ভূমিষ্ট হয়। নার্ভ কেটে নবজাতককে স্বজনদের কোলে দিতে নার্স কল্পনা রানী ডেলিভারি কক্ষের বাইরে গেলে প্রসুতির ফুল ভেতরে ঢুকে যায়। তিনি ফের ডেলিভারি কক্ষে ঢুকে হাত দিয়ে ফুল বের করার সময় ভুলবশত নাড়িভুড়ি বের হয়ে যায়। এসময় প্রসুতির অতিরক্ত রক্তক্ষরণ শুরু হলে তড়িঘড়ি করে তাকে ফেনী জেনারেল হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। সেখান থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। প্রসুতির সংকটাপন্ন অবস্থা দেখে কর্তব্যরত চিকিৎসক গ্রামে ধাত্রি দিয়ে এমন কাণ্ড ঘটিয়েছেন বলে প্রসুতির স্বজনদের বকুনি দেন। তারা সরকারি মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রে ডেলিভারিতে এমন হয়েছে জানালে প্রসুতিকে ভর্তি করান। পরবর্তীতে আইসিইউতে ১০ দিন যাবৎ ভর্তি থাকার পর ১৮ এপ্রিল রাত ২টায় প্রসুতি মৃত্যু বরণ করেন। ১৮ এপ্রিল বেলা ১১টায় জানাজা শেষে তাকে সামাজিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। পরে মিছিল নিয়ে বিক্ষুদ্ধ জনতা দুপুর ১২টার দিকে হাসপাতাল ঘেরাও করেন। এসময় হাপাতালের একটি কক্ষের গ্লাস ও একটি টেবিল ভাঙচুর করেন। হাসপাতালের নার্স কল্পনা রানী দাস বলেন, নরমাল ডেলিভারিতে সন্তান ভূমিষ্ট হয়। চিমটা দিয়ে নবজাতকের নার্ভ আটকানো অবস্থায় প্রসুতি হঠাৎ করে লাফ দিলে নার্ভ ছিড়ে যায় এবং ফুল ভেতরে ঢুকে যায়। ফুল সন্তান ভূমিষ্ট হওয়ার আধা ঘন্টার মধ্যে বের না করলে জরায়ু সংকুচিত হয়ে পরে প্রসুতির মারাত্মক ক্ষতি হয়। তাই আমি হাত দিয়ে ফুল বের করার সময় নাড়ি বের হয়ে ব্লেডিং হয়। প্রসুতিকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তার স্বজনরা চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে তিনি মারা গেছেন শুনেছি। আমি পঁচিশ বছরের অধিক সময় ধরে নার্স হিসেবে কর্মরত রয়েছি। এ ধরণের পরিস্থিতিতে কখনো পড়িনি। উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্ত ডা. এয়াকুব নবী জানান বিষয়টি আমি শুনেছি। এ বিষয়ে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের পক্ষ থেকে আবেদন করলে তদন্ত করে নার্সের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। সোনাগাজী মডেল থানার ওসি মো. বায়েজীদ আকন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করেছে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের পক্ষ থেকে লিখিত অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। প্রসুতির ভাই ফারুকুল ইসলাম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, আমার দশ দিনের ভাগ্নেকে কিভাবে লালন পালন করবো ভেবে কূল পাচ্ছিনা। এছাড়াও আমার বোনের আরো দুটি ৮ ও ৫ বছরের কন্যা সন্তান রয়েছে। তিনটি এতিম সন্তান কিভাবে লালন পালন করবো জানিনা। তাদের পিতাও একজন দরিদ্র রিকশা চালক। থাকেন সরকারি আশ্রয় কেন্দ্রে। এই মুহূর্তে আমরা এতিম তিনটি সন্তানের জন্য সবার দোয়া চাই