ফেনীর সোনাগাজীতে দেশের সর্ববৃহৎ অর্থনৈতিক অঞ্চল 'বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্প নগর'র জন্য ভূমি অধিগ্রহণে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। এ ব্যপারে ভূমি মালিক ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে। কৃষি জমিকে লায়েক পতিত দেখিয়ে মৌজার দর কম দেখিয়ে বেজা ও ভূমি অধিগ্রহণে কর্মরত কতিপয় অসাধু কর্মকর্তা পরস্পর যোগসাজসে এমন অনিয়মের আশ্রয় নিয়েছে বলে ভূমি মালিক, কৃষক ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের অভিযোগ।
প্রাপ্ত অভিযোগে জানা গেছে, বঙ্গবন্ধু শিল্প নগরের জন্য সোনাগাজী ও মীরসরাই উপজেলায় প্রায় ৩০ হাজার একর ভূমি অধিগ্রহণের প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এর মধ্যে কয়েকটি মৌজার ভূমি অধিগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। সোনাগাজীর ১০২নং চরএলেন মৌজায় ১ হাজার ২৫৫একর জমি অধিগ্রহণের প্রস্তাব পেশ করা হয়। প্রতিশতক জমির ক্ষতি পূরণ বাবদ মালিকদের মাত্র ৩৫০টাকা হারে তিনগুণ মূল্য নির্ধারণ করে ১০৫০টাকা প্রদানের নোটিস করা হয়। তাহলে প্রতি একর জমির মূল্য বাবদ ক্ষতিপূরণ হিসেবে ভূমি মালিকরা পাবেন ৩৫ হাজার টাকা। এর মধ্যে অধিগ্রহণ অফিস অঘোষিতভাবে অফিস খরচ বাবদ কেটে নিচ্ছেন ১৫ শতাংশ টাকা। উৎসকর ও ভ্যাট নিচ্ছেন ৫ শতাংশ।
এভাবে খরচ বাদ দিলে ভূমি মালিকরা প্রতি একরে পাচ্ছেন নামে মাত্র টাকা। তাই রাগে ক্ষোভে এ অধিগ্রহণের টাকা তুলছেননা ভূমি মালিকরা। তাদের দাবি বেজা কর্তৃপক্ষ ও অধিগ্রহণে নিয়োজিত ফেনীর কতিপয় অসাধু কর্মকর্তা পরস্পর যোগসাজসে ভূমি মালিকদের ঠকাতে কৃষি ও নাল জমিকে লায়েক পতিত জমি দেখিয়ে নাম মাত্র মূল্য নির্ধারণ করেছে। এ ব্যপারে তারা সরকারি বিভিন্ন দফতরে লিখিত অভিযোগ দিয়ে কোন প্রতিকার না পেয়ে সর্বশেষ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। তারা অধিগ্রহণ কর্তৃপক্ষের নোটিস পাওয়ার পরও অধিগ্রহণের টাকা উত্তোলন করছেননা। তারা আরো বলেন, একই এলাকার পাশের মীরসরাই উপজেলার ৬৬নং ইছাখালি মৌজার প্রতি একর জমির মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ১২ লাখ ৩০ হাজার ১৭৮ টাকা। এছাড়া সোনাগাজীর ৯২নং পূর্ব বড়ধলী মৌজার প্রতি একর জমির মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৬ লাখ ২২ হাজার ৭১৭ টাকা।
অথচ চর এলেন মৌজায় প্রতি একর জমির মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে মাত্র ৩৫ হাজার টাকা। এ নিয়ে কৃষক, ভূমি মালিক ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মাঝে চরম ক্ষোভ ও অসন্তোষ বিরাজমান। বীর মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার সৈয়দ নাসির উদ্দিন জানান, সোনাগাজী উপজেলার ১০২ নং চর এলেন মৌজায় ১ হাজার ২৫৫একর জমি রয়েছে। ১৯৮৮-৮৯ সালে সরকার বাহাদুর ফেনী সদর, ফুলগাজী, পরশুরাম, ছাগলনাইয়া ও সোনাগাজী উপজেলার প্রায় তিন শাতাধিক বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে কৃতিত্বের জন্য প্রায় ৬০০একর জমি বন্দোবস্ত দেন। এ ছাড়াও সিএস এবং এম আর ও আর, দিয়ারা ও বিএস মূলেও মালিক রয়েছেন প্রায় আরো ৩ শতাধিক ব্যক্তি। ভূমি মালিকরা নিয়মিত ভূমি উন্নয়ন করও পরিশোধ করে আসছেন। কিন্তু জমিগুলো অধিগ্রহণে নাম মাত্র মূল্য নির্ধারণ করে ভূমি মালিক ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি অসম্মান দেখানো হয়েছে। জমিগুলোর অধিগ্রহণ মূল্য পূণ:নির্ধারণ না করলে ভূমি মালিক ও বীর মুক্তিযোদ্ধারা টাকাও গ্রহণ করবেননা, ভূমিও ছাড়বেননা।
প্রয়োজনে রাজপথে আন্দোলনে নেমে তাদের দাবি আদায় করবেন। তারা আরো দাবি করেন, তাদের আবেদনের প্রেক্ষিতে সোনাগাজীর প্রাক্তন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সোহেল পারভেজ, সাব রেজিস্ট্রার জয়নাল আবেদীন ও সার্ভেয়ার আবু হানিফ জমি ক্রয়-বিক্রয়ের দলিল পর্যালোচনা করে প্রতিশতক জমির মূল্য ৯ হাজার টাকা নির্ধারণ করে অধিগ্রহন কর্তৃপক্ষ ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) বরাবার প্রস্তাব ও প্রতিবেদন পেশ করেছেন। কিন্তু বেজা ও অধিগ্রহণ কর্তৃপক্ষ তাও আমলে নেয়নি। তাদের মনগড়া মূল্য নির্ধারণ করে ভূমি মালিকদের ঠাকানোর পাঁয়তারা করছেন।
ছাগলনাইয়া উপজেলার বীর মুক্তিযোদ্ধা একরামুল হক বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধে কাজের স্বীকৃতি সরূপ দেড় একর জমি তার নামে বন্দোবস্ত দিয়েছেন সরকার। কিন্তৃ দূর্মূল্যের বাজারে এই প্রতি শতক জমির মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে মাত্র ৩৫০টাকা। যেটা আমাদেরকে অসম্মানের শামিল। এর আগে প্রতিকার চেয়ে ফেনী জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করলে জেলা প্রশাসক মৌখিকভাবে আমাদেরকে বেজার চেয়ারম্যানের সাথে দেখা করতে বলেন। কিন্তু আমরা নিষ্কন্টক ভূমির মালিক হয়েও বেজার চেয়ারম্যানের কাছে কেন যাবো? তাই আমরা আমাদের শেষ ভরসা বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার দ্বারস্থ হয়েছি। তিনি আমাদের দুঃখ বুঝবেন।
ভূমি মালিক মো. গিয়াস উদ্দিন ও আবদুল বারী বলেন, আমরা চাই অর্থনৈতিক অঞ্চল হোক। কিন্তু আমাদের ন্যায্য মূল্য না দিয়ে কোনভাবেই সেখানে আমাদের জমি অধিগ্রহন করতে দেয়া হবেনা। প্রয়োজনে জান দেবো, তবুও নাম মাত্র মূল্যে অধিগ্রহণকৃত জমির দখল ছাড়বোনা, টাকাও উত্তোলন করবনা। তারাও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপে জমির ন্যায্য মূল্য পেতে চান।