ফেনীর সোনাগাজীতে একটি সমবায় প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। প্রতিষ্ঠানটির নাম তাকিয়া বাজার রূপায়ণ বহুমুখী সমবায় সমিতি লিমিটেড। যার রেজিস্ট্রেশন নং- ২৩/০৯। সংস্থাটির পরিচালক চরমজলিশপুর ইউনিয়নের চরদবরপুর গ্রামেের এয়াকুব আলীর ছেলে মোমিনুল হক, চেয়ারম্যান একই গ্রামের শফি উল্যাহর ছেলে আনোয়ার হোসেন ভূট্টু এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক বগাদানা ইউনিয়নের পাইকপাড়া গ্রামের আবদুর রউফের ছেলে আবু শাহাদাৎ দুলাল। বগাদানা ইউনিয়নের তাকিয়া বাজার অনিক-মেহেদী মার্কেটের নীচ তলায় অফিসটির অবস্থান হলেও প্রতারক চক্র টাকা হাতিয়ে পালানোর পর ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকরা তালা ঝুলে দিয়েছেন। সরেজমিনে গিয়ে অফিসটি বন্ধ পাওয়া গেছে।
ক্ষতিগ্রস্ত এক গ্রাহক বগাদানা ইউনিয়নের নদোনা গ্রামের মাস্টার আবুল খায়েরের ছেলে নিজাম উদ্দিন বাদী হয়ে গত ১০ ফেব্রুয়ারি ফেনীর সিনিয়র জুড়িসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তিনজনের নাম উল্লেখ করে মামলা করেছেন। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে সোনাগাজী মডেল থানার ওসিকে মামলাটি রুজু করে আসমিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের আদেশ দিয়েছেন। মোমিনুল হক, আনোয়ার হোসেন ভূট্টু ও আবু শাহাদাৎ দুলাল সহ জড়িতদের গ্রেফতার করতে হন্য হয়ে খুঁজছে পুলিশ। গ্রাহকদের কাছ থেকে পাওয়া অভিযোগের হিসেবে প্রায় দশ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে উধাও হয়ে গেছে এ প্রতারক চক্রটি। এ নিয়ে এলাকাবাসী ও ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে চরম অসন্তোষ বিরাজমান।
ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকরা ও এলাকাবসী জানায়, মোমিনুল হক,আবু শাহাদাৎ দুলাল ও আনোয়ার হোসেন ভূট্টু সহ ২০ জনের একটি প্রতারক চক্র গত কয়েক বছর পূর্বে রূপায়ণ বহুমুখী সমবায় সমিতি লিমিটেড নামের সংস্থাটি চালু করেন। বিভিন্ন শ্রেণি পেশার গ্রাহকদের থেকে আমানত ও সঞ্চয় সংগ্রহ করেন চক্রটি। রিকশা চালক, দিনমজুর, প্রবাসী ও ব্যবসায়ী সহ প্রায় পাঁচ শতাধিক গ্রাহক রয়েছে সংস্থাটির। তাদের প্রত্যেকের কাছ থেকে এক লাখ থেকে ৫০ লাখ টাকা করে হাতিয়ে নিয়েছেন প্রতারকের দল। ফেব্রুয়ারি মাসের শুরুর দিকে অফিস বন্ধ করে চক্রটি লাপাত্তা হয়ে যায়। প্রতি মাসে এক লাখে এক হাজার একশ' টাকা লাভ দেওয়ার কথা বলে সদস্যদের কাছ থেকে আমানত সংগ্রহ করেন। সমিতির সদস্য নদোনা গ্রামের নিজাম উদ্দিনের কাছ থেকে ১৫ লাখ, সাইফুল ইসলামের কাছ থেকে তিন লাখ, রিয়াদের কাছ থেকে সাত লাখ, পাইকপাড়া গ্রামের মাঈন উদ্দিনের কাছ থেকে পাঁচ লাখ, চরবদরপুর গ্রামের কাওছার হোসেনের কাছ থেকে আট লাখ ৮৫ হাজার, রিকশা চালক আবদুল ওহাবের কাছ থেকে এক লাখ, আবুধাবী প্রবাসী নিজাম উদ্দিনের কাছ থেকে ২৫ লাখ, আবুধাবী প্রবাসী জহির উদ্দিনের দুই লাখ, তার ভাই নিজাম উদ্দিের কাছ থেকে ৩৬ লাখ, আলা উদ্দিনের আট লাখ, তার ভাতিজি তানহা-তানিজার এক লাখ চল্লিশ হাজার, এবাদুল হকের সাড়ে তিন লাখ এবং ব্যবসায়ী একএএম মাসুমের দশ লাখ টাকা সহ অসংখ্য গ্রাহকের কাছ থেকে প্রায় দশ কোটি টাকা হাতিয়েছেন প্রতারকরা।
স্বামীর অজান্তে টাকা রাখায় বেশ কয়েকজন গৃহবধূর সংসার ভাঙার উপক্রম হয়েছে। নিজেদের কষ্টার্জিত টাকা হারিয়ে গ্রাহকরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। বিচার পেতে থানায় ও আদালতে ঘুরছেন ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাকরা। প্রতারণার শিকার গ্রাহকদের দাবি প্রতারকরা নিজেদের নামে ফেনী ও ঢাকায় ফ্লাট বাড়ি কিনে বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার পাঁয়তারা করছেন। বিভিন্ন নাম্বার থেকে মুঠোফোনে ফোন করে ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকদের ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন চক্রটি। তারা যেন এসব বিষয়ে প্রতিবাদ না করেন। প্রতিবাদ করলে ক্ষতিগ্রস্ত নিজাম উদ্দিনকে অজ্ঞাতস্থান থেকে হত্যার হুমকিও দিচ্ছেন প্রতারকরা।
মামলার বাদী নিজাম উদ্দিন বলেন, প্রতারকরা যেন দেশ ছেড়ে পালাতে না পারে সেজন্য র্যাব-পুলিশের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
এ ব্যপারে সোনাগাজী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্ত (ওসি) সুদ্বীপ রায় জানান, কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে প্রতারকরা পালিয়ে যেতে পারেন। আদালতের আদেশে মামলাটি রুজু করা হয়েছে। আসামিদের গ্রেফতারে পুলিশ হন্য হয়ে খুঁজছে। এ ব্যপারে জানার জন্য সরেজমিনে গিয়েও সংস্থার পরিচালক মোমিনুল হক, চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন ভূট্টু এবং আবু শাহাদাৎ দুলালকে পাওয়া যায়নি। তাদের ব্যবহৃত মুঠোফোন গুলোও বন্ধ পাওয়া যায়।
এফআর/অননিউজ