ফেনীর সোনাগাজী উপজেলায় গত আড়াই মাসে আমন মৌসুমে কৃষকের কাছ থেকে ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রার এক মুঠো ধানও সংগ্রহ হয়নি। উপজেলায় ১ হাজার ৫৫ মেট্রিক টন ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। ২৮ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার কৃষকের কাছ থেকে ধান সংগ্রহের শেষ দিন পর্যন্ত ২ মাস ২০ দিনে এক মুঠো ধানও সংগ্রহ হয়নি। উপজেলার হাটবাজারগুলোতে ধানের দাম বেশি হওয়াসহ নানা কারণে গত আড়াই মাসে কৃষকেরা ধান সরকারি খাদ্যগুদামে বিক্রি করেননি।
উপজেলার প্রান্তিক কৃষকেরা জানান, সরকারিভাবে প্রতি মণ ধানের ক্রয়মূল্য ১ হাজার ১২০ টাকা ধরা হয়েছে। অথচ বাড়ি থেকে ওই ধান খাদ্যগুদামে নিতে ৪০০-৫০০ টাকা গাড়ি ভাড়া লেগে যায়। কৃষকের কথা চিন্তা করে সরকারিভাবে ধানের দাম আরও বাড়াতে হবে, তা না হলে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে না।বাজারে এখন ধানের দাম ১ হাজার থেকে দেড় হাজার টাকার বেশি। আবার অনেক ব্যাপারী কৃষকের বাড়িতে গিয়ে ধান কিনে নেন। সেখানে কৃষকের কোনো খরচ হয় না। এ ছাড়া কৃষি কার্ড নিয়ে অনলাইনে আবেদন, ব্যাংক চেকের মাধ্যমে দাম পরিশোধ, আদ্রতা মাপা, পরিবহন খরচসহ নানা ঝামেলার কারণে তারা খাদ্যগুদামে ধান বিক্রি করতে চান না।
উপজেলার চরচান্দিয়া এলাকার কৃষক আবুল খায়ের বলেন, প্রতিকুল পরিস্থিতিতেও উপজেলায় আমন ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। ধানের বাজার এখন ঊর্ধ্বগতির দিকে যাচ্ছে। ধানের দাম আরও বাড়বে বলে মনে করে অনেক কৃষক ধান বিক্রি না করে ঘরে মজুত করছেন।
উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় সূত্র জানায়, উপজেলায় সরকারি গুদামে ধান বিক্রি করতে শতাধিক কৃষক অনলাইনে আবেদন করেছেন। উপজেলায় এবার আমন ধান ক্রয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ১ হাজার ৫৫ মেট্রিক টন। প্রতি কেজি ধান ২৮ টাকা দরে ও প্রতি মণ ধান ১ হাজার ১২০ টাকা দরে কৃষকদের কাছ থেকে সংগ্রহ করার জন্য সরকারি নির্দেশনা ছিল। প্রত্যেক কৃষক সর্বোচ্চ তিন টন ধান গুদামে বিক্রি করতে পারবেন।
উপজেলা খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানায়, গত বছরের ৯ ডিসেম্বর থেকে এই উপজেলায় খাদ্যগুদামে ন্যায্যমূল্যে ধান সংগ্রহ কার্যক্রম শুরু হয়। ২৮ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার ছিল ধান সংগ্রহের শেষ দিন। ধান সংগ্রহ শুরুর পর থেকে উপজেলায় কোনো ধান সংগ্রহ হয়নি। হাটবাজারে ধানের দাম বেশি পাওয়ায় কৃষকেরা গুদামে ধান নিয়ে আসছেন না।
উপজেলা খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপক মঞ্জুর আহমেদ বলেন, উপজেলার হাটবাজারে ধানের দাম সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি থাকায় ধান সংগ্রহ কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। এই বাজারদর অব্যাহত থাকলে খাদ্যগুদামে সরকারিভাবে নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জন কোনোভাবেই সম্ভব নয়। আমন মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রার মাত্র এক কেজি ধানও সংগ্রহ হয়নি। এই নিয়ে পর পর চার মৌসুমে ধানের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি। তবে এবারই প্রথম লক্ষ্যমাত্রার এক শতাংশ ধানও সংগ্রহ হয়নি। তবে ধান সংগ্রহের দিন আরো বাড়ানো হতে পারে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা ধান সংগ্রহ পর্যবেক্ষণ কমিটির সভাপতি কামরুল হাসান বলেন, উপজেলায় এবার ২০ হাজার ৯৭৫ হেক্টর জমিতে আমন ধানের আবাদ হয়েছে। ফলনও বেশ ভালো হয়েছে। সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে হাটবাজারগুলোতে কৃষকেরা ভালো দামে ধান বিক্রি করতে পারছেন। ফলে খাদ্যগুদামে ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন ব্যাহত হয়েছে।
প্রধান সম্পাদক: হুমায়ুন কবির রনি
মোবাইল: ০১৭১৬-৫৩০৫১৪
ইমেইল: onnews24@gmail.com
www.onnews24.com