ফেনীর সোনাগাজীতে মাঠের পর মাঠ সরিষার আবাদ করেছেন কৃষকরা। যেদিকে চোখ যায় বিস্তীর্ণ হলুদের সমারোহ। যেন দিগন্ত ছুঁয়েছে সরিষা ফুলের হলুদ আভা। সরিষা ফুলের গন্ধে প্রাণ জুড়িয়ে আসে। সরিষার ফুলে ফুলে মৌমাছিরা ভনভন করছে। মধু সংগ্রহ করে বিক্রি করছেন পেশাদার মধু ব্যবসায়ীরা। সরিষার যেমন বাম্পার ফলন, মধু ব্যবসায়ীদেরও বাম্পার ব্যবসা। মধু হুজুর হিসেবে পরিচিত উপজেলার বাদামতলী এলাকার মাও. হারুনুর রশিদ বলেন, এ বছর সরিষার যেমন বাম্পার ফলন হয়েছে, তেমনি আলহামদুলিল্লাহ মধু সংগ্রহেও আমাদের ব্যাপক লাভ হচ্ছে। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে আরও প্রচুর মধু সংগ্রহ করে বাজারজাত করতে পারতাম।
সোনাগাজীতে শীতের সকালে কুয়াশাচ্ছন্ন হলদে ফুলের মনমাতানো মৌ-মৌ গন্ধ আর অপরূপ দৃশ্য আকৃষ্ট করে যে কাউকে। প্রতিদিন হলুদ মাঠে দাঁড়িয়ে ছবি তুলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট দিয়ে প্রকৃতি প্রেমিকরা জানান দিচ্ছেন। ফেনী জেলার সর্ববৃহৎ উপজেলা সোনাগাজী। তিন দিকে নদী বেষ্ঠিত এ উপকূলীয় উপজেলাটির চরাঞ্চলে মাঠের পর মাঠ সরিষার আবাদ করা হয়েছে। সরকারি ও ব্যক্তি সহায়তায় প্রায় এক হাজার হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ করা হয়েছে। এখন সরিষার ফুল ধরার সময়। অপরুপ এ দৃশ্য দেখে মনে হয় কৃষকরা যেন তাদের জমিতে রাশি রাশি সোনা ছড়িয়ে রেখেছে।
উপজেলার সোনাগাজী সদর, চরমজলিশপুর, বগাদানা, মঙ্গলকান্দি, মতিগঞ্জ, চরদরবেশ, চরচান্দিয়া, আমিরাবাদ ও নবাবপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় সরিষার আবাদ হয়েছে চোখে পড়ার মতো। ১৫-২০ দিনের মধ্যে কৃষকের ঘরে উঠবে সরিষা। সোনাগাজীর ফসলি জমিতে এ বছর সরিষার বাম্পার ফলনের সম্ভবনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় কৃষকরা। চরসাহাপুর গ্রামের কৃষক আবদুল মুনাফ বলেন, এবারে সরিষার বাম্পার ফলন হয়েছে। ভোজ্য তেলের উর্ধ্বমুখী বাজারে নিজের উৎপাদিত সরিষার তেলে বছর পার করার আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।
কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, এবার প্রতি একর জমিতে মাঘী সরিষা ৮-১০মণ এবং বারি সরিষা ১০-১২ মণ পর্যন্ত উৎপাদন হয়। মাঘী সরিষা ৬৫-৭০ দিন এবং বারি সরিষার জাত ৮০-১০০দিনের মধ্যে ঘরে তোলা যায়। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এবং এবার দাম ভালো পেলে আগামীতে কৃষকেরা সরিষা চাষে আরও বেশি আগ্রহী হবে। শুধু বীজ উৎপাদনের জন্য প্রচলিত জাতগুলো থেকেও উন্নত জাতের বেশ কিছু প্রদর্শনী প্লট করা হয়েছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাজ্জাদ হোসেন মজুমদার জানান, সোনাগাজীতে সরকারি হিসাব মতে ৪৬০ হেক্টর জমিতে এবার মাঘী, বারি১৪, বারি ১৫/৮৫, বারি ১৭/৬৫, বিনা ৯/২৫ জাতের সরিষা আবাদ করা হয়েছে। ব্যক্তি কৃষক পর্যায়ে বিভিন্ন ধরনের জাত মিলিয়ে প্রায় এক হাজার হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ করা হয়েছে। অনুকূল আবহাওয়া থাকলে এবার সরিষার বাম্পার ফলন হওয়া সম্ভাবনা রয়েছে। তিনি আরও বলেন, আমরা আগামীতে এই অঞ্চলের ভোজ্য তেলের চাহিদা পূরণের জন্য সরিষার পাশাপাশি তিল, তৃষিসহ অন্যান্য তেল বীজ আবাদের জন্য কৃষকদের আগ্রহ সৃষ্টির উদ্যোগ হাতে নিয়েছি। সরকারিভাবে প্রণোদনা হিসেবে ৪৫০জন কৃষককে সার ও বীজ প্রদান করা হয়েছে।
প্রধান সম্পাদক: হুমায়ুন কবির রনি
মোবাইল: ০১৭১৬-৫৩০৫১৪
ইমেইল: onnews24@gmail.com
www.onnews24.com