ফেনীর সোনাগাজীতে দিনে দুপুরে স্বর্ন ব্যবসায়ী অর্জুন ভাদুরী (৫২) কে কুপিয়ে হত্যা ও ডাকাতির ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তার ও শাস্তি দাবিতে মানববন্ধন কর্মসূচী পালন করেছে ফেনী জেলা জুয়েলারী এসোসিয়েশন। এছাড়াও রোববার সকাল থেকে দুপুর একটা পর্যন্ত জেলার সকল জুয়েলারী দোকান বন্ধ রেখে প্রতিবাদ কর্মসূচী পালন করেন তারা।
রোববার সকাল ১০টায় ফেনী কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার চত্ত্বরে ফেনী জেলা জুয়েলারী সমিতির সভাপতি ইসমাল হোসেন খোকনের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম ফারুক বাচ্চুর সঞ্চালনায় জেলা জুয়েলারী এসোসিয়েশনের উদ্যোগে মানববন্ধন করা হয়। এছাড়া বেলা ১১টার দিকে সোনাগাজী পৌর শহরের জিরোপয়েন্টে (শূন্য রেখায়) উপজেলা জুয়েলারী এসোসিয়েশনের সভাপতি বেলায়েত হোসেনের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন সহ-সভাপতি লিটন চন্দ্র বণিক, সহ-সম্পাদক সুদ্বীপ ধর ও দপ্তর সস্পাদক ওয়াসিম শাহা প্রমুখ। পৃথক মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, অভিলম্বে অর্জুন চন্দ্র ভাদুরীকে হত্যা ও ডাকাতির ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তার করতে হবে। এ নৃশংস ঘটনায় জড়িতদের কে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় এনে ফাঁসি নিশ্চিত করতে হবে। অন্যথায় জুয়েলারী এসোসিয়েশন বৃহত্তর আন্দোলন দিতে বাধ্য হবে। এদিকে চট্রগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ময়না তদন্ত শেষে শনিবার রাতে উত্তর চরচান্দিয়া গ্রামের পারিবারিক শ্মশানে নিহত অর্জুন ভাদুরীর অন্ত্যোষ্ঠতক্রিয়া সম্পন্ন হয়। রোববার সকাল থেকে তার কাছে বন্দকী সোনার মালিকরা তার বাড়িতে ভীড় জমান।
উল্লেখ্য; গত ৩০ অক্টোবর রোববার দুপুরে দুটি মোটর সাইকেল যোগে ছয় জনের সশস্ত্র ডাকাতদল চরচান্দিয়া ইউনিয়নের জমাদার বাজারস্থ অর্জুন জুয়েলার্সে ঢুকে ব্যবসায়ী অর্জুন চন্দ্র ভাদুরীর কাছে লাকারের চাবি দাবি করেন। ডাকাতদেরকে চাবি দিতে অস্বীকৃতি জানালে তাকে উপর্যুপরি কুপিয়ে দোকানের শো'কেইস ভাঙচুর করে এবং জোরপূর্বক চাবি ছিনিয়ে নিয়ে লকারে থাকা বিপুল পরিমাণ স্বর্ন ও নগদ টাকা লুটে নেয়। এসময় ডাকাতদলের সদস্যরা কয়েকটি হাত বোমা নিক্ষেপ করে আতঙ্ক সৃষ্টি করেন। শহীদুল ইসলাম নামে স্থানীয় এক বাসিন্দা ডাকাতদের ব্যবহৃত মোটর সাইকেলের গতি রোধ করতে চাইলে তাকে লক্ষ্য করে হাত বোমা নিক্ষেপ করলে তিনিও আহত হন। অর্জুন চন্দ্র ভাদুরীকে স্থানীয়রা উদ্ধার করে প্রথমে সোনাগাজী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। সেখান থেকে ফেনী জেনারেল হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে চট্রগ্রাম ইম্পেরিয়াল অ্যাপোলো হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ঘটনার ১২ দিন পর শুক্রবার দিবাগত রাত ২টা ৪২মিনিটে চট্রগ্রাম ইম্পেরিয়াল অ্যাপোলো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করেন। তিনি চরচান্দিয়া ইউনিয়নের উত্তর চরচান্দিয়া গ্রামের বীরেন্দ্র চন্দ্র ভাদুরীর ছেলে ও চার কন্যা সন্তানের জনক।
ডাকাতির ঘটনায় অর্জুন চন্দ্র ভাদুরীর মেয়ের জামাই রনি বণিক বাদী হয়ে গত ৩ নভেম্বর অজ্ঞাতনামা ছয়জন ডাকাতের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন। সোনাগাজী মডেল থানার ওসি মুহাম্মদ খালেদ হোসেন দাইয়্যান বলেন, ঘটনার সাথে জড়িত সন্দেহে তিনজনকে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। ঘটনায় জড়িত ডাকাতরা হ্যালমেট ও মাস্ক পরিহিত থাকায় সিসিটিভির ফুটেজে অস্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। একাধিক সিসিটিভির ফুটেজ সংগ্রহ করে তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে ডাকাতদের গ্রেফতারের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।