যৌন নিপীড়নের প্রতিবাদ করায় আগুন সন্ত্রাসের শিকার আলোচিত সোনাগাজীর সেই মাদরাসা ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফির তৃতীয় মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে তার ছোট ভাই রাশেদুল হাসান রায়হান নিজের ফেসবুকে এক আবেগঘন স্ট্যাটাস দিয়েছেন। তা হুবহু তুলে ধরা হলো-
একদিন দুদিন করে করে আজ তিনটি বছর প্রিয় বোন নুসরাত জাহান রাফি আমাদের মাঝে নেই। প্রতিটি দিনই বছরের চাইতেও বেশি মনে হয়, চারপাশ যেনো অন্ধকারাচ্ছন্ন। এত এতো আলো দিন প্রহরে, তবুও যেনো অন্ধত্বতেই আছি। কেননা আমার বোন ছিলো আমার আলো। সেই আলোই নিবিয়ে দিলো কতক হিংস্র জানোয়ারের দল। হাতছানি দিতেই যেন স্পর্শ পাই আপুর। নাকে ঘ্রাণ আসে আদর মাখা ডাকের। এখনো জীবন্ত আপুর রেখে যাওয়া প্রতিটি স্মৃতি।
৩ বছর! আমি আপনাকে মিস করছি আপু।
আমার অনুভূতি আচ্ছন্ন করে আপনি আছেন, শুধু শারীরিক উপস্থিতিটাই নেই। আপনার শূন্যতা কেউ কখনোই প্রতিস্থাপন করতে পারেনি আপু। আপনার মতো কেউ ভালোবাসতেও পারেনি। সদাসর্বদা মনের অন্তঃস্থিত আপনার দেয়া সব নিঃস্বার্থ ভালোবাসা।
আজও আপনার ক্ষতবিক্ষত দেহে বাঁচার আকুতি, আমাদের অসহায়ত্ব সবকিছুই ঘিরেই যেন প্রাণহীন একটি দেহ নিয়ে চলছি ফিরছি। কিন্তু আপনার হত্যাকারীরা ও তাদের প্রেতাত্মারা রীতিমতো স্বাভাবিক জীবন যাপন করছে। প্রতিনিয়ত আমাদের পরিবারকে কোনঠাসা করে রাখতে, চুপছে যেতে কতই না কিছু করছে।
আমি আজ সরকারের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি। অতিদ্রুত আমার বোন হত্যাকারী হিংস্র নরপশুদের রায় কার্যকর করে দৃষ্টান্ত মূলক ব্যবস্থা নিতে। যাতে আমার মতো করে আর কোন ভাই বা পরিবার ফুস্পুটিত হবার আগেই কোন গোলাপফুলকে না হারায়।
পবিত্র মাহে রমজানে সকল ধর্মপ্রাণ মুসলমান শুভাকাঙ্ক্ষী ভাইবোনের নিকট আমার শহীদা বোন নুসরাত জাহান রাফির আত্মার শান্তির জন্য দোয়া চাই।
উল্লেখ্য; নুসরাত জাহান রাফি সোনাগাজী পৌর এলাকার উত্তর চরচান্দিয়া গ্রামের মেঝ মৌলভী বাড়ির একেএম মুসা মানিকের কন্যা। ২০১৯সালের ২৭ মার্চ সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ-দৌলাহর যৌন নিপিড়নের শিকার হন রাফি। ওই ঘটনায় তার মা শিরিন আক্তার বাদি হয়ে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। মামলা তুলে না নেয়ায় ৬এপ্রিল আলিম পরীক্ষার কক্ষ থেকে ডেকে নিয়ে মাদরাসা ভবনের ছাদে হাত-পা বেঁধে সহপাঠীরা তার শরীরে অগ্নিসংযোগ করে। ১০এপ্রিল টিকিৎসাধীন অবস্থায় ঢাকা মেডিক্যালের বার্ন ইউনিটে সে মৃত্যুবরণ করে। এ ঘটনায় ৮এপ্রিল তার বড় ভাই মাহমুদল হাসান বাদি হয়ে একটি মামলা দায়ের করেন। ৬১ কার্যদিবসে ৮৭জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ ও যুক্ততর্ক শেষে একই বছরের ২৪ অক্টোবর মামলার অভিযোগপত্রে অন্তর্ভূূক্ত ১৬ আসামির সবাইকে মৃত্যুদন্ড দেন ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মামুনুর রশিদ। পাশাপাশি প্রত্যেক আসামিকে একলাখ টাকা করে অর্থদন্ড করেন।
দন্ডপ্রাপ্তরা হলেন- সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদরাসার তৎকালীন অধ্যক্ষ এসএম সিরাজ উদ-দৌলা (৫৭), উপজেলা আওয়ামীলীগ সাবেক সভাপতি ও মাদরাসার গভর্নিং কমিটির তৎকালীন সহ সভাপতি রুহুল আমিন, মাদরাসার শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি শাহাদাত হোসেন শামীম (২০), কাউন্সিলর ও সোনাগাজী পৌর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাকসুদ আলম (৫০), নুরউদ্দিন (২৩), সাইফুর রহমান মোহাম্মদ জোবায়ের (২১), জাবেদ হোসেন ওরফে সাখাওয়াত হোসেন (১৯), হাফেজ আব্দুল কাদের (২৫), প্রভাষক আবছার উদ্দিন (৩৩), কামরুন নাহার মনি (১৯), উম্মে সুলতানা পপি (১৯), আব্দুর রহিম শরীফ (২০), ইফতেখার উদ্দিন রানা (২২), ইমরান হোসেন মামুন (২২), মহিউদ্দিন শাকিল (২০) ও মোহাম্মদ শামীম (২০)। ২৯ অক্টোবর আসামিদের মৃত্যুদন্ডাদেশ অনুমোদনের জন্য (ডেথ রেফারেন্স) মামলার যাবতীয় কার্যক্রম হাইকোর্টে পৌঁছে।
আসামিদের পক্ষ থেকে আপীল করা হয়েছে। করোনার কারণে আপীল শুনানীর জন্য গঠিত বেঞ্চ ভেঙে গেলে থমকে যায় শুনানী। বর্তমান প্রধান বিচারপতি বেঞ্চ গঠন করে দিলে দ্রুত আপীল শুনানীর কার্যক্রম শুরু হওয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন মামলার বাদি মাহমুদুল হাসান নোমান ও বাদি পক্ষের আইনজীবী শাহজাহান সাজু।
প্রধান সম্পাদক: হুমায়ুন কবির রনি
মোবাইল: ০১৭১৬-৫৩০৫১৪
ইমেইল: onnews24@gmail.com
www.onnews24.com