সোনাগাজী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ভবন নির্মাণে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ, দুইবার জরিমানা দিয়ে মেয়াদ বৃদ্ধি করেও শেষ হয়নি নির্মাণ কাজ

জাবেদ হোসাইন মামুন, সোনাগাজী (ফেনী) প্রতিনিধি।।

ফেনীর সোনাগাজী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ভবন নির্মাণে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে।দু’বার জরিমানা দিয়ে মেয়াদ বৃদ্ধি করেও শেষ হয়নি নির্মাণ কাজ। নির্মাণ কাজ সম্পর্কে খোদ কিছুই জানেননা বলে জানালেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. উৎপল দাস। কার্যাদেশ সহ কোন প্রকার নথিপত্র দেওয়া হয়নি তাকে। তাই নির্মাণ কাজের গুণগত মান ও পরিধি নিয়েও অন্ধকারে রয়েছেন তিনি। তার দাবি কার্যাদেশের একটি ফাইল তার কাছে জমা দিলেও সেটি কিছুদিন পর স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের লোকজন নিয়ে গেছেন। তিনি আরো দাবি করেন রহস্যজনক কারণে কার্যাদেশের প্রায় এক বছর পর হাসপাতালটির নির্মাণ কাজ শুরু করেন সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান।

২০২৩ সালে তিন তলা ভবনের নির্মাণ কাজ শেষ করার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত ২০২৪ সালের সাত মাস অতিবাহিত হলেও এক তলার ছাদ ঢালাইয়ের কাজও শেষ হয়নি। স্বাস্থ্য প্রকৌশল আধিদপ্তরের নিয়মিত তদারকি না থাকায় যথেচ্ছভাবে কাজ করে যাচ্ছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানটি।

স্থানীয়দের অভিযোগ, নিন্মানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার করে রাতের আঁধারে ঢালাইয়ের কাজ করা হয় ভবন নির্মাণে। এক থেকে দুই মাস পরপর কাজ দেখা বা তদারকির জন্য ঘটনাস্থলে যান স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নোয়াখালী জোনের সহকারি প্রকৌশলী মেহেদি হাসান। ফেনীর এক সিণ্ডিকেট নেতাকে ৬শতাংশ চাঁদা দিয়ে কাজ শুরু করতে দেরী হয়েছে বলে তিনি দাবি করেন। কাজের মান ঠিক আছে দাবি করে তিনি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের পক্ষে সাফাই গাইলেন। জনবল সংকটের কারণে নিয়মিত সাইট ভিজিটে অপারগতা প্রকাশ করেন তিনি। হাসপাতালের সামনে স্থানীয় ব্যবসায়ী ছায়েদুল হক জানান, হাসপাতালটির নির্মাণ কাজে অতি নিন্মমানের ইট, নিন্মমানের শুভপুরের বালু, স্বল্প গ্রেডের রড, নিন্মমানের পাথর, সিলেকশন বালুর পরিবর্তে ভিটি বালু, জং পড়া রড দিয়ে ঘূর্ণিঝড় রিমালের দিনও রাতের আঁধারে ঢালাইয়ের কাজ করা হয়েছে। লোকচক্ষু আড়াল করতে প্রায় সময় দিনে কাজ না করে রাতেই কাজ করা হয়। নির্মাণ কাজ স্থলে সাঁটানো হয়নি কোন সিটিজেন সার্টার। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানটির ধীরগতির কাজ ও দীর্ঘ সূত্রতার কারণে রোগীরা পোহাচ্ছেন অবর্ননীয় দুর্ভোগ। হাসপাতালের সিড়ি ও বারান্দায় বিচানা ও বেড পাতিয়ে নিতে হচ্ছে চিকৎসা সেবা। বৃষ্টির পানি ও ধুলোবালিতে সীমাহীন কষ্টের শিকার হচ্ছেেন রোগী সাধারণ।

স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, সোনাগাজী ৫০ শয্যা হাসপাতালের ৩১ শয্যা বিশিষ্ট ছয় তলা ফাউণ্ডেশনের তিন তলা ভবন নির্মাণের জন্য ৯ কোটি ৬৯ লাখ ৫২৫টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। উক্ত বরাদ্দের মধ্যে আরো রয়েছে দ্বিতীয় তলার ড্রাইভার কোয়ার্টার, এক তলার বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য সাব স্টেশন, আভ্যন্তরীণ সড়ক ও ড্রেন নির্মাণ, গভীর নলকূপ এবং ১৯ শয্যার তিন তলা পুরাতন ভবনের সংস্কার কাজ। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স মনির এণ্ড জেএইচএম জেবি ১১মাসের মধ্যে উক্ত কাজগুলো সম্পাদনের শর্তে ২০২২ সালের ৬ জুন কার্যাদেশ পান। দু’বার মেয়াদ বৃদ্ধির পর গত ৩১মে দ্বিতীয় দফার মেয়াদও শেষ হয়ে যায়। নাম প্রকাশ না করা শর্তে স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা বলেন তৃতীয় দফা জরিমানা দিলে হয়তোবা ৩১ডিসেম্বর পর্যন্ত কাজের মেয়াদ বাড়াতে পারেন।

এর পর আর মেয়াদ বাড়ানোর সম্ভাবনা নেই। যার ফলে চুক্তি মোতাবেক কাজ সম্পাদন নিয়ে তিনি গভীর সংশয় প্রকাশ করেছেন। বর্তমানে তৃতীয় মেয়াদে সময় বৃদ্ধি না করা হলেও খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে ভবন নির্মাণ কাজ চলছে। এ কাজকে অনেকটা অবৈধও বলা চলে। তার দাবি কাগজে কলমে এখনো তৃতীয় দফার মেয়াদ বৃদ্ধির কোন আদেশ দেওয়া হয়নি। স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের যথাযথ তদারকি যদি থাকত, তাহলে নির্ধারিত মেয়াদেই ভবন নির্মাণ সম্পাদন হত বলে তিনি দাবি করেন। স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নোয়াখালী জোনের সহকারি প্রকৌশলী মেহেদী হাসাননির্ধারিত সময় কাজ সম্পাদনের বিষয়ে সংশয় প্রকাশ করে বলেন, এ ক্ষেত্রে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটির জামানত সহ ২৮শতাংশ বিল আটকানো আছে। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানটি দেউলিয়া হলে ওই টাকা দিয়ে সরকারি নিয়মে কাজ শেষ করা হবে। তিনি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানটির কাজের মান সঠিক বলে দাবি করে আরো বলেন, কাজ শুরুর আগেই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানটি মোটা অংকের চাঁদা দিয়ে কাজ শুরু করতে হয়েছে।

চেয়ারে বসে অনেক বিষয়ে মুখ খুলতে পারিনা। তবে নির্ধারিত সময়ে কাজ সমাপ্ত করানোর চেষ্টা করবো। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানটির নিয়োগকৃত সাইট প্রকৌশলী এমরান হোসেন বলেন, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ সম্পাদনের চেষ্টা করা হচ্ছে। কাজের গুণগত মানও সঠিক বলে তিনি দাবি করেন। সোনাগাজী হাসপাতালের ১৯ শয্যা বেডের পুরাতন ভবনে ভর্তি থাকা রোগী মিজানুর রহমান বলেন, রোগী ও তাদের স্বজনদের সীমাহীন দুর্ভোগে দম বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। রোগীদের ব্যবহার করার গণশৌচাগারের দরজাগুলো ভেঙে চুরমার হয়ে গেছে।

অনেকে নিরুপায় হয়ে লোকলজ্জা উপেক্ষা করে প্রাকৃতিক কাজ সারাচ্ছেন। স্থান সংকুলান না হওয়ায় নারী-পুরুষ একাকারে বহু কষ্টে চিকিৎসা সেবা নিচ্ছেন। এ বিষয়ে জানার জন্য ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক মো. তামিমের ব্যবহৃত মুঠোফোনে বারবার ফোন দিলেও ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।

আরো দেখুনঃ