ফেনীর সোনাগাজী পৌরসভায় বর্জ্য অপসারণের নির্ধারিত জায়গা না থাকায় যত্রতত্র আবর্জনা স্তুপ করে রাখা হয়েছে। এতে চারদিকে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে।
মশা-মাছি ও পোকামাকড়ের উপদ্রবে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন পৌরবাসী। কেউ কেউ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে লাইভে এসে প্রতিকার চেয়েছেন। আবার কেউ কেউ কঠোর আন্দলনেরও হুমকি দিয়েছেন। এর ফলে পৌর নাগরিকদের মাঝে চরম ক্ষোভ আর অসন্তোষ বিরাজমান।
গত ৫ আগস্ট পৌর মেয়র ও উপজেলা আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. রফিকুল ইসলাম খোকন ভারতে আত্মগোপনে চলে যাওয়ার পর থেকে এ অচলাবাস্থার সৃষ্টি হয়েছে। পৌরকাসী, পৌর কর্তৃপক্ষ ও উপজেলা প্রশাসন জানান, ২০০৩ সালে সোনাগাজী পৌরসভা গঠিত হয়। এক বছর পৌর প্রশাসকের দায়ীত্ব পালন করেন তৎকালীণ ইউএনও কুদরত উল্যাহ মিয়া। ২০০৪ সালে নির্বাচনের মাধ্যে মেয়র নির্বাচিত হন বিএনপি নেতা জামাল উদ্দিন সেন্টু। তিনি পরপর দুই মেয়াদে মেয়র হিসেবে দায়ীত্ব পালন করেন। পরবর্তী দুই মেয়াদে মেয়র নির্বাচিত আ.লীগ নেতা অ্যাড. রফিকুল ইসলাম খোকন। গত ৫ আগস্ট বৈষম্য বিরোধী ছাত্রআন্দোলনে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পরপর আ.লীগ নেতা খোকন ভারতে পালিয়ে যান। প্রথমে তৃতীয় "গ" শ্রৈণির পৌরসভা হিসেবে চালু হলেও পরবর্তীতে দ্বিতীয় শ্রেণি অর্থাথ "খ" শ্রেণির পৌরসভায় উন্নীত করা হয়। বিগত আ.লীগ সরকারের আমলে এটি প্রথম শ্রেণির পৌরসভা হিসেবে স্বীকৃতি পায়। প্রথম শ্রেণির পৌরসভা ঘোষিত হলেও গ্যাস ও বর্জ্য অপসারণের নির্ধারিত স্থান পায়নি পৌরসভাটি। এক পর্যায়ে মেয়র তার নিজ ক্ষমতা বলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের জায়গায় সীমানা প্রাচীরের মধ্যেই বর্জ্য অপসারণ করতে থাকেন।
এ নিয়ে পরিবেশ অধিদপ্তর স্ব প্রণোদিত হয়ে মেয়রক। বিবাদী করে ফেনীর পরিবেশ আদালতে মামলা করেন। মামলাটি আদালতে এখনএ বিচারাধীন রয়ছে। ক্ষমতার পটপরিবর্তনের পরপর পাউবো'র নির্ধারিত স্থানের আশপাশের বাসিন্দারা পৌরসভা ঘেরাও করে কড়া ভাষায় পূর্বের নির্ধারিত স্থানে আবর্জনা ফেলতে নিষেধ করেন। পরিচ্ছন্নকর্মীদেরও কঠোর হুঁশিয়ারি দেন। পরিচ্ছন্ন কর্মীরা আবর্জনা ফেলানোর স্থান না পেয়ে বিগত প্রায় দুই মাস ধরে ড্রেনের ময়লা পরিষ্কার করে পাশ গলি কিংবা সড়কের ওপর রেখে দিচ্ছেন। বাসা-বাড়ির মালিকরা বর্জ্যগুলো নির্ধারিত ডাস্টবিনে বস্তায় ভরে ফেলে যাচ্ছেন।
এসব বর্জ্য পঁচে চারদিকে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। যার ফলে ময়লার শহরে পরিণত হয়ে সোনাগাজী পৌরসভা। পৌরসভার মালিকানাধীন নির্ধারিত বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও স্থান থাকায় পৌর কর্তৃপক্ষও দিশাহীন হয়ে পড়েছেন। বর্তমানে পৌর প্রশাসকের দায়ীত্ব পালন করছেন সোনাগাজী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. কামরুল হাসান অনেকটা অসহায়ত্ব প্রকাশ করে বলেন, বর্জ্য অপসারণের জন্য স্থান নির্ধারণ না করে পৌরসভা ঘোষণা করাই ঠিক হয়নি। এখন চাইলেও পৌর কর্তৃপক্ষ জমি ক্রয় করতে পারবেননা। পৌরবাসীর দুর্ভোগের কথা ভেবে খুব সহসাই জমি খুঁজতেছি। যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো ও জনবসতিহীন এলাকায় পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে বর্জ্যের ভাগাড় স্থাপনের চেষ্টা করছি। চার দিকের দুর্গন্ধে জনগণের দুর্ভোগের কথা উল্লেখ করে দু:খ প্রকাশ করেন।
সোনাগাজী বাজারের ব্যবসায়ী বেলায়েত হোসেন বলেন, এভাবে চলতে থাকলে সোনাগাজী পৌরসভা বসবাস অযোগ্য জনপদে পরিণত হবে। ১নং ওয়ার্ডের বাখরিয়া গ্রামের মাঈন উদ্দিন ডিলার বলেন, বর্জ্য অপসারণ করায় পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতির কারণে বাসাবাড়িতে নানা রোগও ছড়িয়ে পড়েছে। কাঁচা বাজার এলাকায় গলি ও ড্রেনে ময়লায় একাকার হয়ে গেছে। মাছ বাজারের অবস্থাও খুব খারাপ আকার ধারণ করেছে। দ্রুত জমি কিনে বর্জ্য অপসারণের দাবি জানিয়েছেন তিনি। সোনাগাজী পৌরসভার সাবেক মেয়র, উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জামাল উদ্দিন সেন্টু ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, পৌরসভার পক্ষ থেকে জমি ক্রয় করে দ্রুত বর্জ্য অপসারণের ব্যবস্থা করতে হবে। পৌরবাসী খুব কষ্টে দিন কাটাচ্ছে। পৌর প্রশাসক সঠিক দায়ীত্ব পালন করছে না।