দেড় বছর পর স্কুল খোলার পর সোনাগাজী মোহাম্মদ ছাবের মডেল সরকারি পাইলট হাইস্কুলের শিক্ষক সংকট নিয়ে অভিভাবকরা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে। কোমলমতি শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার ভবিষ্যত নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন শিক্ষক ও অভিভাবকরা।
১৯৪৫ সালে প্রতিষ্ঠিত এই বিদ্যালয়টি ২০২০ সালের ৩১ আগস্ট চূড়ান্তভাবে সরকারি করণ করা হয়। যার ফলে মাত্র ৯জন সহকারি শিক্ষক সরকারি তালিকাভুক্ত হয়। সহকারি প্রধান শিক্ষকের পদটিও রয়েছে শূন্য। চাকরির মেয়াদ পূর্ণ ও খন্ডকালীণ হিসেবে কর্মরত ১৮জন শিক্ষক অবসরে যাওয়ায় এ সংকটের সৃষ্টি হয়।বর্তমানে এক হাজার দুইশ' শিক্ষার্থীর পাঠদানের জন্য সাধারণ শাখায় মাত্র ৭জন এবং কারিগরি শাখায় মাত্র ২জন শিক্ষক কর্মরত রয়েছেন। সাধারণ শাখায় আরো ২০ জন এবং কারিগরি শাখায় ৫ জন শিক্ষকের শূন্যপদ রয়েছে। মোট ২৫ জন শিক্ষক পদ শূন্য থাকায় বিদ্যালয়টি খোলার পর পাঠদানে শিক্ষকদের হিমসিম খেতে হচ্ছে। সরকারি করণের ফলে বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগ করার কথা থাকলেও সরকারি করণের এক বছর অতিবাহিত হলেও এ বিদালয়ে শিক্ষক নিয়োগ করা হয়নি। করোনাকালীণ সময়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় এর প্রভাব না পড়লেও বিদ্যালয় খোলার শুরুতেই পাঠদানে ব্যাপক প্রভাব পড়েছে। মানবিক বিভাগের শিক্ষক পড়াতে হচ্ছে বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীদের, আবার বাংলা বিষয়ের শিক্ষক পড়াতে হচ্ছে ইংরেজি বিষয়ের শিক্ষার্থীদের।
এভাবেই খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে শিক্ষার্থীদের শ্রেনি কার্যক্রম। বাংলা শিক্ষক ৪ জনের মধ্যে আছে মাত্র ১ জন, ইংরেজি শিক্ষকের ৪টি পদই শূন্য, গণিতে ৩টি পদের মধ্যে আছে ২ জন, সামাজিক বিজ্ঞান ২টি পদই শূন্য, ধর্ম ২টি পদের মধ্যে আছে ১জন, ভৌত বিজ্ঞান ২টির মধ্যে আছে ১টি, জীব বিজ্ঞান ২টি পদই শূন্য, ব্যবসায় শিক্ষা ৩টি পদই শূন্য, ভূগোল ১টি, চারু কলা ১টি, শারীরিক শিক্ষা ১টি ও কৃষি শিক্ষায় ১টি সহ ২০টি শিক্ষক পদ শূন্য রয়েছে। এছাড়া নৈশ প্রহরী পদটি শূন্য থাকায় অরক্ষিত হয়ে পড়েছে বিদ্যালয়ের স্থাপনা ও মূল্যবান কাগজপত্র। শেখ আবদুল হান্নান নামে এক অভিভাবক তাঁর ছেলের ভবিষ্যৎ নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, বড় আশা নিয়ে সরকারি স্কুলে ছেলেকে ভর্তি করিয়েছি। শিক্ষক সংকটের ফলে ছেলের মানসম্মত পড়ালেখা নিয়ে গভীর শঙ্কার মধ্যে আছি। মাস্টার ইসমাইল হোসেন নামে এক অভিভাবক বলেন, করোনার আতঙ্ক কেটে বড় আশা নিয়ে স্কুল খোলা হলেও সোনাগাজী সরকারি হাইস্কুলের শিক্ষার্থীদের জন্য মোটেই সুখকর নয়। শিক্ষক স্বল্পতার কারণে শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ পড়ালেখা নিয়ে অভিভাবকরা গভীর উদ্বেগের মধ্যে আছেন। গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোতে শিক্ষকদের শূন্যপদ থাকায় শিক্ষার্থীরা স্কুলে গিয়েও কোন সুফল পাচ্ছেননা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষক গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে এই প্রতিবেদককে বলেন, স্কুলটি বাঁচান, শিক্ষক সংকটে সহস্রাধিক শিক্ষার্থীর শিক্ষা জীবন বিপন্ন হয়ে যাবে। স্কুলটি এভাবে চলতে পারেনা। যে শিক্ষকগুলো কর্মরত রয়েছে, তারাও বদলি হয়ে অন্যত্র চলে যাওয়ার উপায় খুঁজছে। কিন্তু কোমলমতি শিক্ষার্থীদের কি হবে?
ওই বিদ্যালয়ের জয়নুল আবেদিন শিক্ষক সংকট ও অভিভাবকদের উদ্বেগের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, শূন্য পদগুলোতে শিক্ষক নিয়োগদানের জন্য গত ৭সেপ্টেম্বর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক বরাবর ডাকযোগে একটি লিখিত আবেদন পত্র প্রেরণ করা হয়েছে। সরকারি করণের এক বছরেও শূন্যপদগুলোতে শিক্ষক নিয়োগ না দেয়ায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে সোনাগাজী পৌরসভার মেয়র, উপজেলা আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রফিকুল ইসলাম খোকন বলেন, ১হাজার ২০০ শিক্ষার্থীর মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করতে দ্রুত সকল শূন্য পদে শিক্ষক নিয়োগ দিতে হবে। এক দিকে দীর্ঘ দেড় বছর শিক্ষার্থীরা চরম বিপর্যয়ে ছিল, অন্য দিকে নতুন করে শিক্ষক স্বল্পতার কারণে তাদের শিক্ষা জীবন নিয়ে অভিভাকরা চরম বিপাকে পড়েছে। অনেকেই তাঁর কাছে সহযোগিতা চেয়েছেন। তাই তিনি সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতরের প্রতি দ্রুত শিক্ষক নিয়োগের দাবি জানিয়েছেন।
ফেনী-৩ আসনের সাংসদ, জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম মেম্বার লে. জেনারেল অব. মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী শিক্ষক সংকটের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, দ্রুত সময়ে শূন্য পদগুলোতে শিক্ষক নিয়োগের জন্য ইতোমধ্যে তিনি সংশ্লিষ্ট দফতরে জোর সুপারিশ করেছেন।
আহসানুজ্জামান সোহেল/অননিউজ24