সোনারগাঁয়ে জামদানি কারিগরেরা ঈদ সামনে রেখে ব্যস্ত সময় পার করছেন
নজরুল ইসলাম শুভ, সোনারগাঁ ( নারায়ণগঞ্জ)।।
বাঙালি নারীর প্রধান পোশাক হলো শাড়ি। শাড়ি ছাড়া তাদের সৌন্দর্য ফুটে ওঠে না যেন। যেকোনো উৎসবে-পার্বণে নারীর প্রথম পছন্দ হলো শাড়ি। শাড়ির আবার আছে অনেক ধরন। তার মধ্যে অন্যতম হলো জামদানি। এই শাড়ি আমাদের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির অংশ।
ঈদ সামনে রেখে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলার ৪৫টি গ্রামে জামদানি শাড়ির কারিগরেরা দিনরাত ব্যস্ত সময় পার করছেন। গ্রামগুলোতে মহাজন ও খুচরা ক্রেতারাও ভিড় করছেন।
কারখানার মালিক ও কারিগরদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, উপজেলার জামপুর, সাদিপুর ও কাঁচপুর ইউনিয়নের ৪৫টি গ্রামের ছয় শতাধিক পরিবার জামদানি শাড়ি তৈরির সঙ্গে জড়িত। বর্তমানে এ পেশায় নিয়োজিত কারিগরদের মধ্যে ৭০ ভাগ নারী ও ৩০ ভাগ পুরুষ।
গতকাল শুক্রবার সাদিপুর ইউনিয়নের বাইশটেকী, বারগাঁও, কাজিপাড়া, শিংলাব, আন্দারমানিক, জামপুর ইউনিয়নের হাতুড়াপাড়া, তালতলা, কাঁচপুর ইউনিয়নের সুখেরটেক ও বেহাকৈর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, কারিগরেরা ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী অর্ডার নিতে এবং তৈরি শাড়ি পাইকারদের বুঝিয়ে দিতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন।
বাইশটেকী গ্রামের জামদানির কারিগর মালা আক্তার, শাহানা বেগম, কবির হোসেন ও শিল্পীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পবিত্র রমজান মাসে তাঁরা সবচেয়ে বেশি ব্যস্ত সময় কাটান। শৌখিন ক্রেতারা পছন্দমতো নকশা করা শাড়ির অর্ডার কয়েক মাস আগেই দিয়ে রাখেন। এসব অর্ডারের শাড়ি ঈদের আগেই ক্রেতাদের কাছে সরবরাহ করতে হয়। তা ছাড়া ঈদে এ শাড়ির চাহিদা বেশি থাকায় অনেক কারিগর তাঁদের পুরো বছর ধরে তৈরি করা শাড়ি জমিয়ে রেখে মূল্য বেশি পাওয়ার আশায় এ মাসে বিক্রি করে থাকেন।
কাজিপাড়া গ্রামের কারিগর রিনা বেগম বলেন, প্রতিটি শাড়ি তাঁরা তিন হাজার থেকে শুরু করে আট হাজার টাকায় বিক্রি করেন। নকশাভেদে একেকটি শাড়ি তৈরিতে এক সপ্তাহ থেকে শুরু করে দুই মাস পর্যন্ত লেগে যায়।
শিংলাব গ্রামের কারিগর মো.খালেক বলেন, ‘বাপদাদার আমল থেকে আমরা এ পেশার সঙ্গে জড়িত। বর্তমানে রেশমের দাম বেড়ে যাওয়ায় উৎপাদন খরচ বেড়ে গেছে। তা ছাড়া কারিগরদের বেতন-ভাতা বাড়ানো যাচ্ছে না বলে অনেকে নতুন করে এ পেশায় যুক্ত হতে চাচ্ছেন না।’
জামদানি শাড়ির ব্যবসার সঙ্গে জড়িত কয়েকজন ব্যবসায়ী বলেন, সোনারগাঁ ও রূপগঞ্জ—এ দুই উপজেলায় বর্তমানে এ শাড়ি সবচেয়ে বেশি তৈরি হচ্ছে। প্রতি শুক্রবার ডেমরায় এ শাড়ির হাট বসে। এখান থেকে রাজধানীসহ বিভিন্ন জেলার ব্যবসায়ীরা পাইকারি দরে শাড়ি কিনে থাকেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জামদানি শাড়ি সোনারগাঁও কারুপল্লী ও কারুশিল্প দোকান মালিক বহুমুখী সমবায় সমিতি লিঃ এর সভাপতি মো. আব্দুল হালিম বলেন, ‘মসলিনের পর আমাদের দেশের বয়নশিল্পের গৌরব ধরে রেখেছে জামদানি। এ শাড়ি কার্পাস তুলা দিয়ে তৈরি করে থাকেন কারিগরেরা।’