নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ের বিভিন্ন এলাকায় পরিত্যক্ত প্লাস্টিক থেকে তৈরি হচ্ছে সুতা। এতে যেমন পরিচ্ছন্ন হচ্ছে এলাকা তেমনি দূষণমুক্ত হচ্ছে পরিবেশ। আর সৃষ্টি হচ্ছে কর্মসংস্থান, দূর হচ্ছে বেকারত্ব।
আর এ কারণেই সোনারগাঁ উপজেলায় ইতোমধ্যে ১০টি কারখানা গড়ে উঠেছে। এসব কারখানায় কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছে এখানকার প্রায় দুই শতাধিক অসহায় নারী-পুরুষ।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় , উপজেলার কাঁচপুর ও সনমান্দী ইউনিয়নে গড়ে উঠেছে সুতা তৈরির কারখানা। উপজেলার আনাচে-কানাচে পড়ে থাকা পরিত্যক্ত প্লাস্টিক সামগ্রী কুড়িয়ে আনে শ্রমিকরা। পরে মেশিনে টুকরো করে তা ধুয়ে পরিষ্কার করে রোদে শুকানো হয়। এরপর এই প্লাস্টিকের টুকরো গলিয়ে তৈরি করা হয় সুতা। যা স্থানীয় ‘কেঁকড়া’ নামে পরিচিত।
এতে করে পরিবেশ মুক্ত হচ্ছে দূষণের হাত থেকে। পাশাপাশি কর্মসংস্থান হচ্ছে বেকারদের। প্রতি কারখানায় কাজ করছেন প্রায় ১৫-২০ জন শ্রমিক।
বর্তমানে উপজেলায় এমন ১০ টি কারখানা রয়েছে। এই সুতা উপজেলা ছাড়াও আশপাশের বিভিন্ন জেলায়ও যাচ্ছে।
কাঁচপুর কারখানার শ্রমিকরা মো. শরিফ জানান, এখানে কাজ করে একেকজন মাসে ৮-১০ হাজার টাকা পায়। তা দিয়েই তাদের সংসার চলে।
তবে তারা দাবি করেন, কারখানায় সকাল ৮টার থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত কাজ করে। এতে পারিশ্রমিক হচ্ছে, তাই বেতন আরেকটু বাড়িয়ে দিলে ভালো হতো।
প্লাস্টিক কারখানার মহিলা শ্রমিকরা পারুল জানান, এই কারখানায় কাজ করে যে টাকা পান তা দিয়েই তাদের সংসার ও ছেলে-মেয়েদের পড়াশুনা চলে।
উপজেলার মদনপুর এলাকায় নাসির প্লাস্টিক কারখানার মালিক নাসির জানান, প্রায় এক বছর আগে নিজ বাড়ির পাশেই এই কারখানাটি গড়ে তোলেন। বিভিন্ন লোকের মাধ্যমে এসব পরিত্যক্ত প্লাস্টিক সংগ্রহ করার পর প্রক্রিয়াজাত করে তা থেকে সুতা তৈরি করা হয়। এই সুতা কৃষি কাজসহ বিভিন্ন কাজে ব্যবহৃত হয়।
তিনি আরও জানান, তাদের আর্থিক অবস্থা কম। তাই সরকারি কিংবা বেসরকারিভাবে ঋণ দেওয়ার দাবি জানান এই উদ্যোক্তা।
কাঁচপুর বিসিক শিল্প নগরী ফাহিম প্লাস্টিক ইন্ডাস্ট্রিজের ম্যানেজার নাদিম সরকার বলেন, প্লাস্টিক রিসাইকেলিং করে সুতা তৈরি করা হচ্ছে। এই সুতাটি আবার নির্দিষ্ট সময়ের পর এটা মাটির সঙ্গে মিশে যায়। কিন্তু প্লাস্টিকের বোতল মাটিতে মিশে যেতে দীর্ঘদিন সময় লাগে। আমরা যেহেতু শিল্পের প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করি।
আমরা অবশ্যই প্লাস্টিক শিল্পটিকে নিবন্ধনের আওতায় আনতে পারব। পাশাপাশি তাদের একটি সরল সুদে ঋণদানের ব্যবস্থা করতে হবে। এছাড়াও সরকারের পক্ষ থেকে যদি কারিগরি এবং প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয় তাহলে এই শিল্পের মাধ্যমে দেশে ব্যাপক কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হবে।