এই শহরটিতে ঘুরতে গেলে দেখতে পাবেন বাংলার পুরনো কিছু পুরাকীর্তি যা যে কারোর মন কেড়ে নেবে। এখানে গেলে দেখতে পাবেন সুলতানি ও বারো ভুঁইয়াদের শাসনামলের তৈরি পুরনো কিছু ভবন, রাস্তাঘাট।
নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁয়ে অবস্থিত প্রাচীন বাংলার ঐতিহ্যবাহী প্রাচীন শহর পানাম নগর। ১৫ শতকে ঈসা খাঁ বাংলার প্রথম রাজধানী স্থাপন করেছিলেন এই সোনারগাঁয়ে। কয়েক শতাব্দী পুরনো অনেক ভবন সমৃদ্ধ এই পানাম নগর যদিও এখন ধ্বংসের প্রহর গুনছে।
ঈশা খাঁর আমলে পুরনো সোনারগাঁও ছিল বাংলার রাজধানী। এই সোনারগাঁয়েরই একটি এলাকার নাম পানাম। স্থানটি পুরনো রাজ-রাজরাদের আমলে প্রসিদ্ধ এলাকা ছিল। পরে ইংরেজ শাসনামলে এখানে অভিজাত হিন্দুদের আবাস গড়ে ওঠে। ইউরোপীয় স্থাপত্যরীতিতে তৈরি এখন পর্যন্ত টিকে থাকা ইমারতগুলো মূলত সে সময়েই তৈরি। অসাধারণ কারুকার্যময় এবং সুবিন্যস্ত একটি প্রাচীন নগরী হিসেবে পানাম এখনও সবার মন কাড়ে। এটি পৃথিবীর ১০০টি ধ্বংস প্রায় ঐতিহাসিক শহরের মধ্যে অন্যতম। ২০০৬ সালে ‘ওয়ার্ল্ড মনুমেন্ট ফান্ড’ পানাম নগরকে এই তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে। বৃটিশ শাসনামল এ অঞ্চলের শিল্প-বাণিজ্যের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র পানাম স্থাপত্বশৈলীতে রয়েছে তৎকালীন আধুনিকতার ছোঁয়া। দু’পাশে সারি সারি একতলা দু’তলা ভবন, মাঝ দিয়ে পথ। এই পথেই তৎকালীন লোকজন চলাচল করতো।
বহুবছর পুরনো পানাম নগরের পরিকল্পনায় ছিল আধুনিকতার ছোঁয়া। নগরে পানি সরবাহের জন্য দু’পাশে ছিল ২টি খাল ও ৫টি পুকুর। খাল ২টি ও পুকুরগুলো এখনো আছে। সুপেয় পানির জন্য পানাম নগরের প্রতিটি বাড়িতেই ছিল কূপ বা ইঁদারা। এসব কূপই ব্যবহার করতো তৎকালীন বাসিন্দারা।
এখন পানাম নগর ঘুরে দেখতে পাবেন নিখুঁত নকশা কাটা পুরনো সব দালানকোঠা, যা পুরনো হলেও স্থাপত্যশৈলীতে একবোরে আধুনিক। তবে সময় প্রবাহে আর প্রয়োজনীয় তদারকি ও যতেœর অভাবে ক্রমশ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে পানাম নগরের সৌন্দর্য। এই অভিজাত নগরের মূল বাসিন্দারা দেশভাগের পর পানাম ত্যাগ করেন। এখন অনেকেই অস্থায়ীভাবে সেখানে বসবাস করছেন। পানাম নগর তথা সোনারগাঁয়ের পূর্বে মেঘনা আর পশ্চিমে শীতলক্ষ্যা নদী। এই নদী পথেই বিলেত থেকে আসতো থানকাপড়। আর এদেশ থেকে বিদেশ যেত মসলিন।
শান্ত/অননিউজ