দেশের সর্ববৃহৎ ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের শুভ উদ্বোধন সোমবার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বশরীরে উপস্থিত থেকে এ বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি উদ্বোধন করবেন। পরে সেখানে একটি মতবিনিময় সভায় বক্তব্য রাখবেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রীর আগমনকে কেন্দ্র করে বর্নিল সাজে সজ্জিত হয়েছে সাগর কন্যা পটুয়াখালী। করোনা মহামারীর পর প্রধানমন্ত্রীর এ সফরে উচ্ছ্বসিত স্থানীয় সাধারণ মানুষ।
বাংলাদেশ-চায়না পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড (বিসিপিসিএল) সূত্র জানায়, ২০১৪ সালে বাংলাদেশ নর্থওয়েস্ট পাওয়ার কোম্পানি ও চায়না ন্যাশনাল মেশিনারি কর্পোরেশন(সিএমসি) এর মধ্যে পায়রা ১৩২০ মেগাওয়ার্ট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
২০১৬ সালের ১৪ অক্টোবর পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার ধানখালীতে কয়লা ভিত্তিক এ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
২০২০ সালের ১৫ মে প্রথম ৬৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন করে জাতীয় গ্রীডে সরবরাহ করতে সক্ষম হয় বাংলাদেশ চায়না পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড(বিসিপিসিএল)। পরে একই বছরের ৮ ডিসেম্বর আল্ট্রা সুপার প্রযুক্তি ব্যবহার করে দ্বিতীয় ইউনিটের ৬৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করে এ বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি।
এক হাজার একর জমির উপর নির্মিত এ বিদ্যুৎ কেন্দ্রেটির প্রথম ফেজ নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ২.৪৫ বিলিয়ান ডলার। প্রতিদিন এ কেন্দ্র চালু রাখতে প্রয়োজন হবে ১৩ হাজার মেট্রিক টন কয়লা। এ কেন্দ্রের দ্বিতীয় ফেজে থেকে ২০২৪ সাল নাগাদ ১৩২০ মেগাওয়াট অর্থাৎ ২৬৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হবে বলে আশাবাদী সংশ্লিষ্টরা।
পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট থার্মাল পাওয়ার প্লান্টের প্রকল্প পরিচালক শাহ মোহাম্মদ গোলাম মাওলা জানান, কভিড মহামারীর প্রতিকূলতার মধ্যেও কোন রকম ব্যয় বৃদ্ধি ছাড়া প্রথম ফেজে দুটি ইউনিটকে উৎপাদনে আনা সম্ভব হয়েছে। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে লাইনের কাজ শেষ হলে ১৩২০ মেগাওয়ার্ট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রীডে সরবরাহ করা সম্ভব হবে।
১৩২০ মেগাওয়াট উৎপাদনে সক্ষম হলেও সঞ্চালন লাইনের কাজ সমাপ্ত না হওয়ায় পুরো ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রীডে দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। পায়রা থেকে গোপালগঞ্জ পর্যন্ত সঞ্চালন লাইন নির্মাণ শেষ হলেও গোপালগঞ্চ থেকে আমিন বাজার পর্যন্ত লাইনের কাজ এখনও শেষ হয়নি বলে জানান প্রকল্প পরিচালক।
প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী রেদোয়ান আহমেদ জানান, প্রতিদিন পায়রা পাওয়ার প্লান্টে ১৩ হাজার মেট্রিক টন কয়লা প্রয়োজন হবে। বন্দর কর্তৃপক্ষ যদি তাদের ৮০ কিলোমিটার চ্যানেল ড্রেজিং করে সচল না রাখে তাহলে লাইটারেজ জাহাজে কয়লা মাদার ভ্যাসেল থেকে আনতে হয়। সেক্ষেত্রে কয়লার মূল্য বেড়ে যায়। চ্যানেল সচল রাখতে পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষের প্রতি অনুরোধ জানান তিনি।
এদিকে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বশরীরে পটুয়াখালী আসবেন এমন খবরে উচ্ছ্বসিত এখানকার সাধারণ মানুষ। তাঁকে বরণ করতে প্রস্তুত জেলাবাসী। ইতিমধ্যে তার আগমণকে কেন্দ্র করে বর্ণিল সাজে সজ্জিত হয়েছে পুরো জেলা। প্রধানমন্ত্রীকে বরণ করতে ২২০টি নৌকাকে সজ্জিত করা হয়েছে বর্ণিল সাজে।
রামনাবাদ নদীর মোহনায় এ নৌকা থেকে প্রধানমন্ত্রীকে অভিভাদন জানাবেন উপকূলের প্রায় এক হাজার একশ’ মানুষ।
পটুয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্জ কাজী আলমগীর জানান, তাদের প্রত্যাশা ছিল জননেত্রী শেখ হাসিনা পটুয়াখালীতে একটি জনসভা করবেন। প্রথমে কর্মসূচির মধ্যে এটি থাকলেও পরে তা বতিল করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর এই তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রকে ঘিরে দক্ষিণাঞ্চলটি তৃতীয় অর্থনৈতিক অঞ্চলে পরিণত হবে বলে দাবি করেন তিনি।
পুলিশ সুপার মোহাম্মদ শহিদুল্লাহ জানান, প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে সর্বোচ্চ নিরাপত্তার পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়েছে। এই পরিকল্পনার মধ্যে কোভিড প্রটোকলও রয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর কর্মসূচিতে যারা অংশগ্রহণের সুযোগ পাবেন তাদের অবশ্যই করোনা নেগেটিভ রিপোর্ট সাথে নিয়ে যেতে হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামাল হোসেন জানান, শুধু পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের উদ্বোধন নয়, ওই দিন প্রধানমন্ত্রী দেশের শতভাগ বিদ্যুতায়নের ঘোষণা করবেন। সেখানে একটি মতবিনিময় সভায় বক্তব্য প্রদান করবেন তিনি। এ সফরে চায়নাসহ বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত, মন্ত্রী পরষিদের সদস্য, সংসদ সদস্য, সরকারি কর্মকর্তাসহ পাঁচ শতাধিক সদস্য উপস্থিত থাকবেন।
প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে সব ধরনের প্রস্তুতি ইতিমধ্যে গ্রহণ করা হয়েছে বলেও দাবি করেন জেলা প্রশাসক।