সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদে একটি সোফা কারখানায় অগ্নিকান্ডে নিহত শ্রমিক বাগমারার সাইদুর রহমানের লাশ দেখতে চান পরিবারের সদস্যরা। এ জন্য দ্রæত লাশ দেশে ফেরত পাঠানোর জন্য বাংলাদেশ ও সৌদি আরব দুতাবাস কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানিয়েছেন নিহত শ্রমিক সাইদুর রহমানের বৃদ্ধ বাবা-মা ও একমাত্র ছেলে আবু বাক্কার। গত বুধবার (৩ জুলাই) সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদের ছোমাতি অঞ্চলের মুসাছানাইয়ায় সোফা কারখানায় অগ্নিকান্ডে বাংলাদেশী চার শ্রমিক নিহত হন। তাদের মধ্যে একজনের বাড়ি রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার যোগীপাড়া ইউনিয়নের বারুইহাটি গ্রামে। তার নাম সাইদুর রহমান। তার বাবার নাম মেহের আলী সরদার। তার পাসপোর্ট নম্বর বিএক্স- ০৩২০৭৩৯।
গতকাল বুধবার বিকেলে বারুইহাটি গ্রামে নিহত শ্রমিক সাইদুর রহমানের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, নিহতের বৃদ্ধ বাবা মেহের আলী সরদার বাড়ির বারান্দায় নির্বাক হয়ে পড়ে আছেন। এ সময় সাংবাদিকদের দেখে তিনি হাউমাউ করে কাঁদতে শুরু করেন। এ সময় এই প্রতিবেদককে জড়িয়ে ধরে তিনি বলতে থাকেন, ‘দয়া করে তোমরা আমার ছেলের লাশ এনে দাও’। এ সময় নিহত শ্রমিক সাইদুর রহমানের বোন মেনুকা বিবি, চাচা নজরুল ইসলাম এবং মামা আজিজার রহমানসহ উপস্থিত প্রতিবেশি ও স্বজনরাও একই দাবি করেন।
নিহতের বোন মেনুকা বিবি ও চাচা নজরুল ইসলাম জানান, প্রায় ২৫ বছর আগে সাইদুর রহমান সৌদি আরবে গিয়েছিলেন। তিনি সৌদি আরবের রিয়াদের মুসাছানাইয়া এলাকায় একটি সোফা কারখানায় কাজ করতেন। দুই বছর আগে তার স্ত্রী মারা গেলে তিনি দেশে এসেছিলেন। তার একমাত্র ছেলে আবু বকর পাশর্^বর্তী আত্রাই উপজেলার বিয়াম ল্যাবরেটরী স্কুলের দশম শ্রেনীর শিক্ষার্থী। দুই বছর আগে মাকে হারানোর পর এবার একমাত্র ভরসা বাবাকে হারিয়ে এতিম আবু বাক্কারও বাবার শোকে বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন। বাবার মরদেহ ফেরত পেতে সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।
নিহত সাইদুর রহমামের ছেলে আবু বাক্কার জানান, গত বুধবার তার বাবাসহ ১৬ জন শ্রমিক ওই কারখানায় কাজ করছিলেন। এ সময় অনাকাঙ্খিতভাবে ওই কারখানায় আগুন লাগে। এতে তার বাবাসহ বাংলাদেশের চারজন শ্রমিক আগুনে পুড়ে মারা যান। আগুনে বেঁচে যাওয়া তারা বাবার সহযোগী শ্রমিক আত্রাইয়ের বাবুল হোসেন প্রথমে মুঠোফোনে বিষয়টি তাকে জানায়। এরপর বৃহস্পতিবার রাতে সৌদি আরব দুতাবাস থেকেও বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে।
এ বিষয়ে বাগমারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহাবুবুল ইসলাম বলেন, নিহতের লাশ দ্রুত দেশে ফেরত পাঠানোর জন্য সৌদি আরবের দুতাবাসের সঙ্গে সার্বক্ষনিকভাবে যোগাযোগ করা হচ্ছে। এছাড়া নিহতের পরিবারকে সরকারিভাবে প্রবাসী শ্রমিক হিসাবে প্রাপ্ত সকল প্রকার সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট সকল দপ্তরের সঙ্গে সার্বিকভাবে যোগাযোগ করা হচ্ছে। থানার ওসি অরবিন্দ সরকারও একই মন্তব্য করেন।