সৌদিতে অগ্নিকান্ডে বাগমারার নিহত ৪ শ্রমিকের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম

বাগমারা, রাজশাহী প্রতিনিধি।।
সৌদিতে অগ্নিকান্ডে নিহত রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার বারুইপাড়া গ্রামের রুবেল হোসাইন মোবাইল ফোনে প্রেম করে ভিডিও কনফারেন্সে বিয়ে করলেও সাক্ষাতে প্রিয়তমা স্ত্রীর মুখ দেখা হল না তার। স্বামীর অনাকাঙ্খিত মৃত্যু কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না রুবেলের নববিবাহিতা স্ত্রী মরিয়ম আক্তার। তিনি বলেন, তিন বছর আগে সৌদি আরব যান রুবেল। তারপর থেকেই মোবাইল ফোনে কথা বলতে বলতে রুবেলের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল তার। সেই প্রেম বাস্তবে রুপ দিতে চার মাস আগে ভিডিও কনফারেন্সে পারিবারিকভাবে তাদের বিয়ে হয়। আর মাত্র এক মাস পর বাড়িতে এসে তাকে স্ত্রীর মর্যাদা দিয়ে ঘরে নেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সেই আশা আর পুরন হলনা তাদের।

মরিয়ম আক্তার বলেন, সর্বশেষ বৃহস্পতিবার রাতে মোবাইল ফেনে ভিডিও কলে ৪৫ মিনিট স্বামী রুবেলের সঙ্গে কথা হয়েছে তার।

এদিকে বাবার অবাবের সংসারে স্বচ্ছলতা ফেরাতে রুবেলের সঙ্গে তিন বছর আগে সৌদি আরব যান আরিফ হোসেন। তার বাবা শাহাদত হোসাইন বলেন, সর্বশেষ বৃহস্পতিবার ছেলের সঙ্গে কথা হয়েছে তার। সেখানে সে ভাল আছে বলে জানিয়েছিল। কিন্তু পরের দিনই ছেলে মর্মান্তিক মৃত্যুর সংবাদ পান তিনি। মৃত্যুর খবর বাড়িতে পৌঁছালে নেমে আসে শোকের ছায়া।

তিনি বলেন, শুক্রবার ঘটনার পরপরই ছেলের মৃত্যুর খবর পেয়েছিলেন। তবে নিশ্চিত হতে পারেননি। শনিবার সাকালে সেখান থেকে ফোন করে বিষয়টি নিশ্চত করা হয়েছে।

সৌদি আরবের রিয়াদ থেকে প্রায় ৩৫০ কিলোমিটার দূরে মদিনা আল খলিল এলাকার একটি ফার্নিসার (সোফা) কারখানায় ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের ঘটনায় নিহতদের মধ্যে চারজনই রাজশাহীর বাগমারা উপজেলায় যোগীপাড়া ইউনিয়নের বারুইপাড়া ও বড় মাধাইমুড়ি কাতিলা গ্রামের বাসিন্দা। নিহতরা হলেন- বারুইপাড়া গ্রামের জফির উদ্দিনের ছেলে রুবেল হোসাইন, একই গ্রামের জমির উদ্দিনের ছেলে মোহাম্মদ সাজেদুল ইসলাম ও শাহাদৎ হোসাইনের ছেলে আরিফ হোসেন এবং বড় মাধাইমুড়ি কাতিলা গ্রামের আনিসুর রহমান সরদারের ছেলে ফিরোজ আলী সরদার। তারা কেউ ছয় মাস আগে, আবার কেউ তিন বছর ও আট বছর আগে শ্রমিক হিসাবে সৌদিতে গিয়েছিলেন। মৃত্যুর খবর পাওয়ার পর তাদের বাড়িতে এখন চলছে শোকের মাতম।

রোববার সরেজমিনে নিহত ফিরোজ আলীর বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় সেখানে চলছে স্বজন ও প্রতিবেশিদের শোকের মাতম। সবাই বাকরুদ্ধ। তার এক ছেলে ও এক মেয়ে আছে। বাবার মৃত্যুর খবর পাওয়ার পর থেকেই তারা কাঁদছে। ফিরোজের বাবা আনিসুর রহমান বলেন, তিন বছর আগে তার ছেলে সৌদিতে গিয়েছিল। কিন্তু সেখানে গিয়ে তার একমাত্র ছেলের এভাবে মৃত্যু হবে তা তিনি কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না। তিনি ছেলের লাশ ফেরৎ চান। নিজ এলাকায় ছেলের লাশ দাফন করতে চান। এ জন্য সরকারের কাছে দ্রæত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন তিনি। সাজেদুল ইসলাম আট বছর ধরে সৌদিতে আছেন। তিনিও মারা গেছেন। তারা সবাই এক সঙ্গে থাকতেন। সাজেদুলের হাত ধরে একই কোম্পানিতে চাকরি নিয়েছিলেন আরিফ, রুবেল ও ফিরোজ। সাজেদুল ইসলামের মৃত্যুও খবর বাড়িতে পৌঁছার পর থেকেই তার মা, স্ত্রী ও ছেলে-মেয়ের কান্না কিছুতেই থামছে না। এদিকে ঘটনার পর থেকেই জেলা প্রশাসক ও উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিহতদের পরিবারের সঙ্গে এবং সৌদিতে বাংলাদেশ দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করা হয়েছে।

এ বিষয়ে বাগমারা উপজেলা সহকারি কমিশনার (দায়িত্বপ্রাপ্ত ইউএনও) সুমন চৌধুরী জানান, নিহতদের পরিবারকে সরকারিভাবে সব ধরণের সহযোগীতা করা হবে। লাশ দ্রæত দেশে আনার জন্য নিহতদের কাগজপত্র ও তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে।

এফআর/অননিউজ

আরো দেখুনঃ