কুমিল্লার দেবীদ্বারে স্কুল ছাত্রীর শ্লীলতাহানির ঘটনায় প্রধান শিক্ষকের শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভকারীদের সাথে পুলিশের সংঘর্ষ ও গুলিবর্ষনে পুলিশসহ অর্ধশত আহত হওয়ার ৫ দিন পরও ওই এলাকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়নি। বিদ্যালয় খুললেও শিক্ষার্থীদের উপস্থিতির হার মাত্র ১৫%। হাটবাজার ও দোকান-পাট এখনো খুলেনি। মাশিকাড়া ও আশ-পাশের গ্রামগুলোতে কিশোর, যুবক ও মধ্য বয়সী লোকজন এখনো ফিরেনি। গ্রামের কিছু লোকজন দিনের আলোতে বাড়ি ফিরলেও সন্ধ্যার আগেই বাড়ি ত্যাগ করছেন বলে জানা গেছে।
সরেজমিনে রোববার দুপুরে ঘটনাস্থল উপজেলার মাশিকাড়া গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, ওই এলাকার রাস্তা-ঘাট একদম ফাঁকা। গ্রামে পুরুষের তেমন উপস্থিতি নেই। স্থানীয় বাজারে সাপ্তাহিক হাটবার থাকলেও খুলেনি দোকান-পাট, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। দুইদিন পর মাশিকাড়া উচ্চ বিদ্যালয় খুললেও শিক্ষার্থীর উপস্থিতি ছিল খুবই নগন্য। বিদ্যালয়টি ঘুরে দেখা যায় অভিভাবকদের সাথে নিয়ে কিছু শিক্ষার্থী বিদ্যালয়ে এসেছেন। এদের মধ্যে এসএসসি পরীক্ষার্থী ১২০ জনের মধ্যে ১১ জন ছাত্রী ক্লাশে উপস্থিত হলেও কোন ছাত্র উপস্থিত হয়নি। দশম শ্রেণীর ১১০ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ১৬ জন ছাত্রী ও ২ ছাত্রসহ ১৮ জন, নবম শ্রেণীর ১০০ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ৭ জন ছাত্রী ও ৫ জন ছাত্র সহ ১২ জন, অষ্টম শ্রেণীর ৮৬ শিক্ষার্থীর মধ্যে ৮ জন ছাত্রী ও ৭ জন ছাত্রসহ ১৫ জন, সপ্তম শ্রেণীতে ১০৫ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ১৫ জন ছাত্রী ও ৪ জন ছাত্রসহ ১৯ জন, ষ্ষ্ঠ শ্রেণীতে ১৪২ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ৭ জন ছাত্রী ও ৯ জন ছাত্রসহ ১৬ জন উপস্থিত ছিল।
ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. সিরাজুল ইসলাম জানান, এসএসসি পরীক্ষার্থীসহ মোট ৬৬৬জন শিক্ষার্থীর মধ্যে উপস্থিত ছিল ৯১ জন ছাত্র-ছাত্রী এবং অনুপস্থিত রয়েছে ৫৭৫ জন।
বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি মোঃ বাহারুল হক জানান, আমরা মাইকিং করে, ফোনে ফোনে যোগাযোগ করে, বিদ্যালয়ের নামে ও প্রত্যেক শিক্ষক ও কমিটির লোকদের ফেইসবুক আইডি থেকে ষ্ট্যাটাসে আহবান জানিয়ে, স্কুল পরিচালনা কমিটির সদস্য, শিক্ষক ও এলাকার গন্যমান্য লোকদের নিয়ে টিম ওয়ার্কের মাধ্যমে বাড়ি বাড়ি যেয়ে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের বুঝিয়ে অভয় দিয়ে বিদ্যালয়ে আসার আহবান জানাই। অভিভাবকদের সাথে শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে আসা শুরু করেছে। খুব শীঘ্রই শিক্ষার্থীদের পদভারে বিদ্যালয়ের আঙ্গীনা মুখর হয়ে উঠবে বলে আশা করছি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই এলাকার এক বিশিষ্ট ব্যাক্তি জানান, আমাদের এলাকাটি এখন মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ের পরিস্থিতিতে দাড়িয়েছে। জরুরী প্রয়োজনে বাজারে এসে ঔষধ কিনতে পারছিনা, গ্রেফতার আতঙ্কের ভয়ে দেবিদ্বারও যেতে পারছিনা। এ এলাকার নারীরা ধার্মিক, বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া বাড়ির বাহিরে যেতনা। কিন্তু এখন জীবনের প্রয়োজনে তারাই বাজারের পথে দাঁড়িয়ে গাভির দুধ ক্রয়-বিক্রয় করছেন।
এদিকে ভুক্তভোগী ওই ছাত্রীর নিকট আত্মীয় জানান, এলাকার কিছু প্রভাবশালী লোক প্রধান শিক্ষক কর্তৃক ছাত্রীর শ্লীলতাহানির ঘটনাটি মিথ্যা সাজিয়ে ধামা চাপা দেয়ার ষড়যন্ত্র করছে। আজ ৫ দিন হলেও বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির পক্ষ্য থেকে পরিস্থিতির উন্নয়নে কোন ধরনের সিদ্ধান্ত নেয়নি, তদন্ত কমিটি গঠন কিংবা শ্লীলতাহানির ঘটনায় জেল হাজতে থাকা প্রধান শিক্ষক মোকতল হোসেনের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়নি। একজন চরিত্রহীন শিক্ষকের অপকর্মের খেসারত দিচ্ছে কয়েক গ্রামের মানুষ।
উল্লেখ্য, গত বুধবার (১৫ মার্চ) দেবিদ্বার উপজেলার মাশিকাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কর্তৃক এক ছাত্রীর শ্লীলতা হানির ঘটনায় ছাত্র-জনতার সাথে পুলিশের সংঘর্ষ ও গুলিবর্ষনে পুলিশ সহ প্রায় ৫০জন আহত হয়। ঐ ঘটনায় দায়ের করা পৃথক দুই মামলায় প্রধান শিক্ষক সহ ১৭ জন বর্তমানে জেল হাজতে আছে।