হাত বেঁধে নির্যাতন, ২২ ঘণ্টা পর ছাড়া পেলেন যুবক

অনলাইন ডেস্ক।।

বাগেরহাটের রামপাল উপজেলায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার জন্য এক যুবকের হাত বেঁধে নির্যাতনের ২২ ঘণ্টার পর ফাঁকা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর রেখে নির্যাতনের বিষয়টি কাউকে না জানানোর শর্তে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে ফেসবুকে ওই নির্যাতনের একটি ভিডিও ভাইরাল হলে তৎপর হয় পুলিশ।

বুধবার (২৯ মার্চ) ভুক্তভোগীর মা খালেদা বেগম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। ভুক্তভোগী ব্যক্তি বাগেরহাট সদর উপজেলার মুন্সিগঞ্জ এলাকার শেখ গফুরের ছেলে শেখ আব্দুল্লাহ।

সোমবার ফেসবুকে ২ মিনিট ৪৭ সেকেন্ডের ভিডিওতে দেখা যায়, এক যুবকের হাতে রশি পেঁচিয়ে গাছে বাঁধা হয়। পাশে কয়েকজন দাঁড়িয়ে আছেন। খালি গায়ে লুঙি পরিহিত এক ব্যক্তি ভুক্তভোগী যুবককে গাছ থেকে ছাড়িয়ে মাটিতে শুইয়ে দেন। এ সময় আরেকজন এসে ভুক্তভোগীর পায়ের ওপর পা রেখে চাপতে থাকেন। কিছু সময় পর খালি গায়ের ব্যক্তি একটি লাঠি দিয়ে যুবকের পায়ের তালুতে মারতে থাকেন। যুবকের পাশাপাশি নারীর কান্নার শব্দও শোনা যায়।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত বৃহস্পতিবার দুপুরে অটোরিকশায় বাগেরহাট আসার পথে রামপাল উপজেলার চাকশ্রী এলাকা থেকে শেখ আব্দুল্লাহকে তুলে নিয়ে যান শেখ হাসান আলী ও ইউপি চেয়ারম্যান ফকির আব্দুল্লাহর ভাগনে আবু সালেহসহ কয়েকজন। পরে অটোরিকশা চুরির অপবাদ দিয়ে ২২ ঘণ্টা নির্যাতনের পরে গত শুক্রবার দুপুর ১২টায় তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। বর্তমানে ভুক্তভোগী বাগেরহাট সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

ভুক্তভোগী আব্দুল্লাহ জানান, ‘পূর্ব পরিচিত হওয়ায় শেখ হাসান আলীকে আমি এক লাখ ২৭ হাজার টাকা ধার দেই। তবে তিনি আমাকে টাকা না দিয়ে ঘোরাতে থাকেন। পরে টাকা বাবদ আলী তার অটোরিকশাটি আমার কাছে বিক্রি করেন। প্রতিদিন ২০০ টাকা ভাড়ায় আলী অটোরিকশাটি চালাতে থাকে। কিন্তু কয়েকদিন দেওয়ার পর টাকা দেওয়া বন্ধ করে দেন তিনি। তাই জানুয়ারি মাসে আমি অটোরিকশাটি অন্য জায়গায় বিক্রি করে দেই। হঠাৎ গত বৃহস্পতিবার দুপুরে চাকশ্রী এলাকা থেকে শেখ হাসান আলী ও চেয়ারম্যানের ভাগ্নে আবু সালেহসহ কয়েকজন আমাকে ধরে নিয়ে যায়। আলীর বাড়িতে নিয়ে আমাকে নির্যাতন করে। সন্ধ্যায় আমার বন্ধু প্রাইভেটকারচালক আল আমিনকে চাকশ্রী আসার জন্য আমাকে দিয়ে ফোন করায়। আল আমিন এলে তাকেও বেঁধে রাখে হাসান ও আবু সালেহরা। সারারাত আমাকে বেঁধে নির্যাতন করেছে তারা। শরীরে সিগারেটের ছেঁকা ও আঙুলের মধ্যে খেজুরের কাটা ঢুকিয়েছে। চোখ উঠিয়ে ফেলার হুমকি দিয়েছে। পরে ফাঁকা স্ট্যাম্পে আমার ও মায়ের স্বাক্ষর এবং তিন লাখ টাকা দেওয়ার স্বীকারোক্তি নিয়ে ছেড়ে দিয়েছে।’

প্রত্যক্ষদর্শী ভুক্তভোগী শেখ আব্দুল্লাহর বন্ধু প্রাইভেটকারচালক আল আমিন জানান, বন্ধুর ফোন পেয়ে চাকশ্রী বাজারে গেলে হাসান ও আবু সালেহ আমাকে বেঁধে রাখে। পরে সারারাত আব্দুল্লাহকে নির্যাতন করে। পরে গত শুক্রবার দুপুরে আমাদের ছেড়ে দেয়। এ বিষয়ে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফকির আব্দুল্লাহ বলেন, ‘আমার সামনে কোনো নির্যাতন হয়নি। আবু সালেহ আমার ভাগনে নয়।’

পুলিশ সুপার কে এম আরিফুল হক জানান, ইতোমধ্যে নির্যাতনের ভিডিওটি আমরা দেখেছি। এ ঘটনাটি নিয়ে তদন্ত চলছে। অপরাধীদের শনাক্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ফরহাদ/অননিউজ

আরো দেখুনঃ