হাসপাতালে সাংবাদিকদের প্রবেশ কিংবা ছবি বা ভিডিও করতে মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নিতে হবে বলে জানিয়েছেন গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমেদ মেডিকেল কলেজ এন্ড হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো. আমিনুল ইসলাম। হাসপাতালটির বাইরে ফুটেজ নিতে গেলে আনসার সদস্যদের বাধার মুখে পরে তার সাথে যোগাযোগ করা হলে ‘মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নিতে হবে’ বলে জানান তিনি।
ঘটনা সূত্রে জানা যায়, মঙ্গলবার পেশাগত দায়িত্ব পালনে হাসপাতালে যান বাংলা টিভির গাজীপুর প্রতিনিধি মোঃ শহিদুল ইসলাম ও দৈনিক দেশেরপত্রের গাজীপুর প্রতিনিধি মোঃ আশিকুর রহমান। এ সময় টেলিভিশনের লোগো দেখে আপত্তি জানান হাসপাতালের নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলার দায়িত্বে থাকা আনসার সদস্যরা। আনসার সদস্যরা সাংবাদিকদের হাতে থাকা টেলিভিশন চ্যানেলের লোগো ব্যাগের ভিতরে ঢুকানোর জন্য চাপ সৃষ্টি করে হাসপাতালের পরিচালকের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, হাসপাতালে অবস্থানকালে কোন টেলিভিশন চ্যানেলের লোগো হাতে রাখা যাবে না। সাংবাদিক হিসেবে নয় বরং সাধারণ রোগী হিসেবে প্রবেশ করতে পারবে বলে জানান তারা।
এ বিষয়ে হাসপাতালের বাইরে থেকে পরিচালক ডা. মো. আমিনুল ইসলামকে ফোন করা হলে তিনি মুঠোফোনে বলেন, হাসপাতালে সাংবাদিকদের প্রবেশের জন্য মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিতে হবে। এমনকি ছবি ধারণের ক্ষেত্রেও নিতে হবে মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন। তিনি জানান, বাইরে থেকেও হাসপাতালের কোন ধরনের ছবি উঠানো যাবেনা।
বাইরে থেকে ফুটেজ নিতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বাইরে থেকে কেন? কোনো দিক থেকেই ফুটেজ নিতে পারবেন না। ফুটেজ নেওয়া যাবে না এরকম কোনো আইন হয়েছে কি না -এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি অনেকটা উত্তেজিত কণ্ঠে বলেন, ‘আপনার সাথে এমন কথা বলার আমার তো কোনো দরকার নাই। আপনি পাশ করে নিয়ে আসেন।
এ বিষয়ে সিনিয়র আইনজীবী ও মানবাধিকারকর্মী মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, সাংবাদিকতা একটি মহান পেশা। বাংলাদেশ সংবিধান আর্টিকেলের ৩৯ এর ২(ক ও খ), মানবাধিকারের সার্বজনীন ঘোষণাপত্র ১৯৪৮ সহ বিভিন্ন আর্টিকেলে স্পষ্ট লেখা আছে- সাংবাদিকরা তাদের সাংবাদিকদের পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে যেকোনো জায়গায় প্রবেশ করতে পারবে। গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমেদ মেডিকেল কলেজ এন্ড হাসপাতালে সাংবাদিক তার দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে পরিচালক তাকে বাধাপ্রদান করেছেন। যা অত্যন্ত দুঃখজনক ও ন্যক্কারজনক। স্বাধীন পেশা হিসেবে সাংবাদিককে তিনি বাধা দিতে পারেন না। যদি তিনি বাঁধা দিয়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই তার ইনিশিয়াল পানিশমেন্ট হওয়া দরকার।
তিনি আরও বলেন, যদি কর্মকর্তারা এভাবে বাঁধা দিতে থাকে তাহলে সাংবাদিকরা সত্যের পক্ষে, ন্যায়ের পক্ষে কাজ করতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে। দেশ আস্তে আস্তে রসাতলে চলে যাবে। পরিচালক সাহেব যে কাজ করেছেন তার তদন্ত হওয়া দরকার।
এ ব্যাপারে মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রী ও হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি আ ক ম মোজাম্মেল হক এমপি বলেন, হাসপাতালে সাংবাদিকদের দায়িত্ব পালনে কোনো পারমিশন লাগে না। পরিচালক বললে সেটা তিনি অন্যায় কথা বলেছেন। বাইরে থেকে সাংবাদিকরা ছবি তুললে বা ভিডিও করলে তিনি নিয়ন্ত্রণ কীভাবে করবেন? তিনি আরও বলেন, এই কথা বলার কারোই অধিকার নাই। সাংবাদিকরা দায়িত্ব পালন করবে। এটায় বাধা দেওয়ার কারও ক্ষমতা নাই।
গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন মেডিকেল কলেজ এন্ড হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে যাওয়া অনেকেই জানান নানান অনিয়মের কথা। জানা যায়, গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন মেডিকেল কলেজ এন্ড হাসপাতালটি ‘দুর্নীতির আঁতুড়ঘর’ হিসেবে গাজীপুরবাসীর কাছে বেশ পরিচিত। কিছুদিন আগে এ হাসপাতালের নানান অনিয়ম আর দুর্নীতির সংবাদ বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রচার করা হয়। সংবাদ প্রচারের পরিপ্রেক্ষিতে হাসপাতালে অভিযান পরিচালনা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এরপর থেকেই সংবাদকর্মী নিয়ে কঠোর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
গত এপ্রিলে পরিচালিত দুদকের অভিযানে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগের সত্যতা পাওয়ার কথা জানিয়েছিল দুদক। সে অভিযানে হাসপাতালে খাবার সরবরাহের টেন্ডার, আউটসোর্সিং নিয়োগের টেন্ডার, ওষুধ সরবরাহ, অনুমোদন ছাড়াই আসবাবপত্র ক্রয়, অবকাঠামো নির্মাণের আগেই বেশি দামে যন্ত্রপাতি ক্রয়সহ নানা অভিযোগের সত্যতা পায় সংস্থাটির সমন্বিত জেলা গাজীপুর কার্যালয়ের কর্মকর্তারা।
সূত্রঃ বিডি24লাইভ
একে/অননিউজ24