নৌপথে বিদেশ থেকে গম আমদানি বন্ধ থাকায় দেশের বাজারে গমের চাহীদা মেটাতে দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দর দিয়ে পর্যাপ্ত পরিমানে গম আমদানি হচ্ছে। তবে দেশের বাজারে গমের বাড়তি চাহীদাকে পুজি করে ভারতীয় ব্যবসায়ীরা দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন এতে করে দেশের বাজারে পণ্যটির আমদানি বাড়লেও দাম কমার পরিবর্তে উল্টো বাড়ছে।
তবে গত একমাস ধরে একইরকম দাম রয়েছে। এদিকে গমের আমদানি বাড়ায় আয় বেড়েছে বন্দরে কর্মরত শ্রমিকদের।আমদানিকৃত এসব গম দেশের বিভিন্ন ময়দার মিলে সরবরাহ করা হচ্ছে। হিলি স্থলবন্দরে কর্মরত শ্রমিক মেহেদুল ইসলাম বলেন, হিলি স্থলবন্দর দিয়ে বেশীরভাগ পাথর আমদানি হয় যা মেশিনের মাধ্যমে লোড আনলোড হয়।
এর উপর বন্দর দিয়ে বেশ পরিমানে চাল আমদানি হলেও সম্প্রতি সেটিও বন্ধ হয়ে যায়। অন্যান্য পণ্য তেমন আমদানি না হওয়ায় আমাদের কাজ তেমন একটা ছিলনা। তবে এখন বন্দর দিয়ে প্রচুর পরিমানে গম আমদানি শুরু হওয়ার কারনে আমাদের আগের তুলনায় কাজ বেড়েছে তেমনি আমাদের আয় বেড়েছে। এতে করে যা আয় হচ্ছে তাই দিয়ে অন্তত ভালোভাবে পরিবার পরিজন নিয়ে ডালভাত খেতে পারছি।
হিলি স্থলবন্দরের গম আমদানিকারক সারোয়ার হোসেন বলেন, দেশের বিভিন্ন স্থানে অবস্থিত ময়দার মিলগুলোতে পুর্বে ইউক্রেন ও রাশিয়া থেকে চট্টগ্রাম নৌবন্দর দিয়ে আমদানিকৃত গম দিয়ে সেই চাহীদা মেটানো হতো। কিন্তু গমের উৎপাদন কম হওয়ায় সেখান থেকে এবছর গম রফতানিতে সেই দুই দেশের সরকার গম রফতানির উপর শুল্ক আরোপ করেছে যার কারনে পড়তা না থাকায় গম আমদানি বন্ধ রয়েছে। কিন্তু আমাদের দেশে যে পরিমান গম উৎপাদন হয় তা দিয়ে আমাদের চাহীদা মেটানো সম্ভব নয়।
দেশের বাজারে গমের চাহীদা মেটাতে বন্দর দিয়ে ভারত থেকে গম আমদানি করা হচ্ছে ভারতের উত্তর প্রদেশ, বিহার রাজ্য থেকে এসব গম আমদানি করা হচ্ছে। কিন্তু একমাস আগে যে গম ভারত থেকে ৩০৫মার্কিন ডলার মুল্যে প্রতিটন গম আমদানি করা হচ্ছিল। দেশের বাজারে বাড়তি চাহীদাকে পুজি করে সেই গমের দাম ভারতীয় ব্যবসায়ীরা বেড়ে ৩৩২ডলার নির্ধারন করে দিয়েছে।
বর্তমানে গম বিক্রি হচ্ছে ২৯টাকা ২০পয়সা দরে, এই দাম কিছুদিন আগে ৩০টাকায় উঠে গিয়েছিল।তবে একমাস আগে এই গমের দাম ২৮টাকা ৬০ পয়সা ছিলো ভারতীয় ব্যবসায়ীরা দাম বাড়ার কারনে সেই থেকে আবারো গমের দাম কিছুটা বাড়ছে।
হিলি স্থলবন্দরে গম কিনতে আসা পাইকার ইসরাফিল আলম বলেন, বাজারে দেশীয় গমের সরবরাহ নেই বললেই চলে যার কারনে ময়দার মিলগুলোতে ভারতীয় গমের চাহীদা বেড়েছে। হিলি স্থলবন্দর দিয়ে পর্যাপ্ত পরিমানে গম আমদানি হচ্ছে সে কারনে আমরা এই বন্দরে এসেছি গম কিনতে। তবে গত সপ্তাহে যে দামে বন্দর থেকে গম ক্রয় করেছি তার চেয়ে কেজি প্রতি ১০/২০পয়সা করে বেড়ে গেছে।
তারপরেও চাহীদার কারনে গম কিনে ময়দার মিলগুলোতে সরবরাহ করছি। প্রতিদিন হিলি স্থলবন্দর থেকে ৫/১০ট্রাক গম ক্রয় করে বিভিন্ন স্থানে ময়দার মিলে সরবরাহ করি।এসব গম বিশেষ করে পঞ্চগড়, ঠাকুরগাও, গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, পাবনা, ঈশ্বরদি, কক্সবাজার, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে অবস্থিত ময়দার মিলগুলোতে এসব গম সরবরাহ করা হচ্ছে।
হিলি স্থল শুল্ক স্টেশনের রাজস্ব কর্মকর্তা এস এম নুরুল আলম খান বলেন, হিলি স্থলবন্দর দিয়ে বর্তমানে বেশ পরিমানে ভারত থেকে গম আমদানি হচ্ছে। গড়ে প্রতিদিন বন্দর দিয়ে ৬০ থেকে ৭০ট্রাক গম আমদানি হচ্ছে। তবে গমের আমদানি পর্যায়ে শুল্ক আরোপ না থাকায় শুল্ক মুক্ত পণ্য হিসেবে এই পণ্য আমদানি হচ্ছে।
তবে আমদানিকৃত গম দ্রুত যেন দেশে বাজারজাত করতে পারে আমদানিকারকগন সেজন্য কাস্টমসের সকল প্রক্রিয়া দ্রুত সম্পুর্ন করে তা ছাড়করন দেওয়া হচ্ছে। বন্দর দিয়ে চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের জুলাই থেকে ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত ১লাখ ৫৩হাজার ৭৩৩টন গম আমদানি হয়েছে।
আয়েশা আক্তার/অননিউজ24