দিনাজপুরের হিলিতে বৃষ্টির ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই আলুর ক্ষেতে দেখা দিয়েছে পচারি রোগ। এতে করে আলুর গাছ শুকিয়ে মরে যাচ্ছে কোন ঔষধ প্রয়োগেই কাজে আসছেনা দাবী কৃষকদের।এতে করে আলুর উৎপাদন ব্যহতের সাথে সাথে উৎপাদন খরচ না উঠার দুশ্চিন্তায় পড়েছেন আলু চাষীরা। এই রোগ থেকে পরিত্রানের লক্ষ্যে কৃষকদের সবধরনের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। সে মোতাবেক ব্যবস্থা নিলে সমস্যা হবেনা দাবী কৃষি অফিসের।
লাভজনক হওয়ায় দিন দিন হিলিতে আলুর চাষাবাদ বাড়তে থেকে।এরই ধারাবাহিকতায় চলতি মৌসুমে ৯৪৫হেক্টর জমিতে আলুর চাষাবাদ করা হয়।আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় আলুর গাছ বেশ ভালো হয়েছিল তাতে ভালো ফলনের পাশাপাশি লাভের স্বপ্ন দেখছিলেন কৃষকরা। কিন্তু আলু তোলার আগ মুহুর্তে হঠাৎ করে মাঘের বৃষ্টিতে কৃষকের সেই স্বপ্ন ভেঙ্গে যায়। উপজেলার ২৫০ হেক্টর আলুর ক্ষেত পানিতে নিমজ্জিত হয়। পরবর্তীতে কৃষি অফিসের পরামর্শ মোতাবে সেই অবস্থা থেকে কাটিয়ে উঠলেও নতুন করে পচারি রোগ দেখা দেওয়ায় দুশ্চিন্তায় কৃষকরা।
হিলির ইসমাইলপুর গ্রামের কৃষক গিয়াস উদ্দিন বলেন, আলুর অবস্থা লাগানোর পর থেকে ভালোই ছিল। মাঘের হঠাৎ বৃষ্টিতে গোটা আলুর ক্ষেত ডুবে চলে গেলো। আমরা কষ্ট করে ক্ষেত থেকে দ্রুত পানি সেচ দিয়ে বের করে দিলাম। মনে করলাম পানি যেহেতু বের করে দিলাম তাতে করে আলু ভালো থাকবে কিন্তু এখন দেখতেছি আলুতে পচারি রোগ দেখা দিয়েছে যার কারনে আলুর সম্পুর্ন গাছ মরে শেষ হয়ে যাচ্ছে। বাড়তি কোন ওষধপত্র প্রয়োগ করেও এ থেকে আমরা কোন লাভবান হতে পারছিনা। আলুর গাছ শেষ জমিতে আলু পচে শেষ যার কারনে আমরা হিসেব করে দেখছি যে লাভের আশায় আমরা আলু আবাদ করলাম সেটি আমাদের বিফলে যাচ্ছে বহুত টাকা আমরা লোকশানের মধ্যে থাকবো।
হিলির বৈগাম গ্রামের কৃষক জামিরুল ইসলাম বলেন, বৃষ্টি হওয়ার আগে আমাদের আলুর গাছ ভালোই ছিল কিন্তু হঠাৎ বৃষ্টির কারনে আমাদের অনেক আলু পচে গেছে। কিছু জমি থেকে পানি বের করে দিয়ে ঠেকিয়ে রেখেছিলাম কিন্তু এখন তাতে আবার নতুন করে পচারি ধরে শেষ হয়ে যাচ্ছে স্প্রে করার পরেও কোন কাজ হচ্ছেনা। এতে করে আমাদের আলু চাষীদের লোকশানের মাত্রা বেশী হচ্ছে। এর উপর বাজারে আলুর দাম নেই যে দ্রুত তুলে বাজারে বিক্রি করে কিছুটা ঘাটতি মেকাপ দিবো সেটি হচ্ছেনা যার কারনে লোকশানের ভাগই বেশী যার কারনে আমাদের খরচের টাকাই উঠবেনা।
একই গ্রামের কৃষক মাইনুল হোসেন বলেন, আমরা মানুষের কাছ থেকে ধারদেনা করে সুদের উপর টাকা দিয়ে বাড়তি লাভের আশায় আলু লাগিয়েছিলাম। আমরা ঠিক যেসময় আলু তুলবো তুলবো ভাব এমন সময় হঠাৎ বৃষ্টিতে আমাদের এক ধাক্কায় লোকশান গুনতে হয়েছে। আমরা এখনো জমি থেকে পানি সেচ দিয়ে তাতে কীটনাশক স্প্রে করছি কিন্তু এই পচারি যে রোগটি ধরেছে সেটি থামছেনা। আলুতে পচারি ধরে আলু পচে শেষ কিছু আলু পেলেও কিছু কিছু জমিতে আলু আমরা পাবোনা। এখন জমি আলাকে কি আলু দিবো আর আমরাইবা নিজে কি আলু নিবো। আমাদের একবিঘা জমিতে আলু আবাদ করতে ২০/২৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে।এর উপর বৃষ্টির কারনে সেচ দেওয়া ও কীটনাশক প্রয়োগে আরো বাড়তি টাকা খরচ হয়েছে। কিন্তু এখন যে আলুর অবস্থা তাতে করে আলু বিক্রি করে ১০হাজার টাকা পাবো কিনা সেই দুশ্চিন্তায় পড়ে রয়েছি আমরা।বাকি এই খরচের টাকা কোথায় থেকে উঠাবো আর কোথায় থেকে পরিশোধ করবো।
হাকিমপুর উপজেলার অতিরিক্ত কৃষি অফিসার আরজেনা বেগম বলেন, সাম্প্রতিক মাঘের বৃষ্টিতে হিলিতে কিছু আলুর জমিতে পানি জমে ছিল। যা কিনা বৃষ্টি বন্ধের সাথে আমাদের কৃষি অফিসের পরামর্শ মোতাবেক দ্রুত এসব আলুর জমি থেকে নিষ্কাশন নালার মাধ্যমে পানি নিষ্কাশনের জন্য।সে মোতাবেক চাষীরা ব্যবস্থা নেওয়ায় সেটি থেকে কাটিয়ে উঠছে কৃষকরা। তবে সম্প্রতি আলুর ক্ষেতে পচারি রোগ দেখা দিয়েছে এ থেকে পরিত্রানের জন্য আমরা কৃষকদের মিক্সড গ্রুপের কিটনাশক ব্যবহারের পরামর্শ দিচ্ছি। সেক্ষেত্রে সিকিউর ও মেলোডোডিও নামের ওষধ পাওয়ার স্প্রে দিয়ে দ্রুত স্প্রে করার পরামর্শ দিচ্ছি। তাতে করে আলুর ক্ষেতে পানি জমে থাকলে যে দাদরোগ হয় সেটি থেকে আলুকে সুরক্ষিত করতে পারবো।
প্রধান সম্পাদক: হুমায়ুন কবির রনি
মোবাইল: ০১৭১৬-৫৩০৫১৪
ইমেইল: onnews24@gmail.com
www.onnews24.com