হিলিতে ইফতারি ও সেহরি নিয়ে গরীব অসহায় দুস্থ্য ছিন্নমুল মানুষদের পাশে দাড়িয়েছে তারুন্য শক্তি

হিলি প্রতিনিধি

শুধু নয় ইফতার নিশ্চিত হোক দুবেলার আহার এমন স্লোগানে দিনাজপুরের হিলিতে ইফতারি ও সেহরি নিয়ে গরীব অসহায় দুস্থ্য ছিন্নমুল মানুষদের পাশে দাড়িয়েছে তারুন্য শক্তি নামের একটি সেচ্ছাসেবী সংগঠন। প্রতিদিন এসব মানুষদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে সংগঠনটির সদস্যরা ইফতার ও সেহরি দিয়ে আসছেন। এদিকে বিনামুল্যে ইফতারি ও সেহরি পেয়ে দারুন খুশি গরীব অসহায় দুস্থ্য ছিন্নমুল হতদরিদ্র মানুষজন।

প্রথম রমজানের শুরু থেকেই এই কার্যক্রম চালিয়ে আসছেন তারা। প্রতিদিন ১টি করে পরিবারকে এই সহায়তা দিচ্ছেন তারা।পুরো রমজান মাস জুড়েই এমন কার্যক্রম চলবে তাদের। প্রত্যেকটি পরিবারকে ইফতারির সাথে সাথে ৭ কেজি করে চাল, ১ কেজি মশুরের ডাল, ১ কেজি ছোলা, ৫০০গ্রাম খেজুর, ১ কেজি চিনি, ৩ কেজি আলু, ২লিটার সয়াবিন তেল ও ৫টি করে ট্যাং দেওয়া হচ্ছে। পুরো রমজানের ৩০দিনে ৩০টি পরিবারকে এই খাদ্য সহায়তা দেওয়া হবে।

হিলির উত্তর বাসুদেবপুরের ছিন্নমুল সখিনা বিবি বলেন, আমার স্বামীর মৃত্যুর পর আজ তিনবছর ধরে দুই সন্তান নিয়ে কোনরকম করে চলছি। আমি সারাদিন বিভিন্ন স্থানে পড়ে থাকা ময়লা আবর্জনার ভেতর থেকে ভাংগারি সংগ্রহ করি। দিন শেষে এসব থেকে প্লাষ্টিক ও লোহাসহ যা সংগ্রহ হয় তা ভাংগারি দোকানে বিক্রি করে যা টাকা পায় তাই দিয়ে কোনরকম করে ছেলে মেয়ে নিয়ে খেয়ে না খেয়ে চলি। যার কারনে আর ইফতারি কেনা বা বাড়িতে তৈরি করা হয়ে উঠেনা যার কারনে কোন ইফতারি খাওয়া হয়না। বাড়িতে যা থাকে তাই দিয়ে ইফতারি করে থাকি। কিন্তু তারুন্য শক্তি নামের একটি সংগঠন থেকে আমাদের ইফতার দিয়ে গেছে সেই সাথে সেহরির জন্য চাল ডাল থেকে শুরু করে সবকিছু দিয়েছে। এতে করে ছেলে মেয়ে নিয়ে সবাই আজ ইফতারি করতে পারলাম। সেই সাথে আগামী কয়েকদিন সেহরিতে কি খাবো সেই নিয়ে দুশ্চিন্তা থাকলোনা। আমাদের যারা ইফতারি ও সেহরির জন্য এসব দিলো আল্লাহ তাদের ভালো করুক।

হিলির মাঠপাড়া গ্রামের দিনমজুর আসলাম হোসেন বলেন, একেতো বয়স হয়েছে যার কারনে ঠিকমতো কাজ কর্ম করতে পারিনা। এর উপর গতকয়েকদিন ধরে তীব্র গরমের কারনে বর্তমানে তেমন কাজো জোটেনা যার কারনে আয় রোজগার তেমন একটা না থাকায় খুব কষ্ট করে ছেলে মেয়েকে নিয়ে দিন কাটছে। যার কারনে রমজানে ইফতারি বলে আমাদের বাড়তি কোন কিছু নেই বাড়িতে যা ডাল ভাত বা মুড়ি কিংবা যাই থাকে তাই দিয়ে কোনরকম করে ইফতারি করা হয়। সেই থেকে কিছু বাচিয়ে অথবা ভর্তা ভাত খেয়ে সেহরি করা হয়। সাধারনত এইভাবেই চলে আমাদের তার উপর যে হারে জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে তাতে করে আরো সমস্যা আমাদের। কিন্তু স্কুল কলেজ পড়–য়া ছেলেরা আমাকে ইফতারি দিয়েছে সেই সাথে সেহরি করার জন্য চাল ডাল তেল দিয়েছে। এতে করে আমার খুব উপকার হয়েছে আগামী কিছুদিন অন্তত খাওয়া নিয়ে আর দুশ্চিন্তায় থাকতে হবেনা।

তারুন্য শক্তির প্রচার সম্পাদক আব্দুর রহিম মিথুন বলেন, দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে অধ্যায়নরত হিলির ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে গড়া আমাদের এই স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন তারুন্য শক্তি। আমাদের নিজেদের পড়ালেখার খরচ থেকে বাচানো অর্থ দিয়ে সম্পুর্ন বিনামুল্যে আমরা বিভিন্ন সামাজিক কার্যক্রম চালিয়ে আসছি। গতদুবছর করোনা কালীন সময়ে আমরা মানুষকে খাদ্যসহায়তাসহ করোনা থেকে বাচতে নানারকম সচেতনতামুলক কার্যক্রম চালিয়ে আসছি। এরই ধারাবাহিকতায় ইফতার ও সেহরি বিতরনের কার্যক্রম নিয়েছি। যেহেতু এবছর চাল, ডাল,তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মুল্যবৃদ্ধির কারনে চরম দুর্ভোগে পড়েছে গরীব অসহায় দুস্থ্য ছিন্নমুল মানুষজন। তাই এসময়ে খাদ্যসহায়তা নিয়ে তাদের পাশে দাড়াতে শুধু নয় ইফতার নিশ্চিত হোক দুবেলার আহার এমন স্লোগানে আমাদের এই কার্যক্রম শুরু করেছি। তাদেরকে ইফতারি বিতরনের পাশাপাশি যে পরিমান সামগ্রী দেওয়া হচ্ছে তাতে করে একসপ্তাহ নিশ্চিতে পার হয়ে যাবে।

আরো দেখুনঃ