হিলিতে কয়েকদিনের বৃষ্টি ও ঝড়ো বাতাসে হেলে পড়েছে বেশ কিছু জমির ধান
হিলি প্রতিনিধি।।
গতকয়েকদিনের টানা বৃষ্টি ও ঝড়ো বাতাসে দিনাজপুরের হিলিতে হেলে পড়েছে কয়েকশ বিঘা জমির ধান। এর উপর ধান ক্ষেতে বিভিন্ন পোকার আক্রমন দেখা দেওয়ায় ধানের উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার আশংকা। সেই সাথে ধানের উৎপাদন খরচ তোলা নিয়ে সংশয়ে পড়েছেন কৃষকরা। তবে বৃষ্টিপাত হওয়ায় ধান ক্ষেতে পোকার আক্রমন কমেছে জানিয়ে তেমন কোন সমস্যা হবেনা দাবী কৃষি বিভাগের।
শষ্যভান্ডারখ্যাত দিনাজপুরের হিলিতে চলতি আমন মৌসুমের শুরুতে আকাশের বৃষ্টিপাত না হওয়ায় একটু দেরীতে সেচের মাধ্যমে আমন ধান রোপন করতে হয়েছে কৃষকদের। পরে আকাশের পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত হওয়ায় ও জমিতে ঠিকমতো সার প্রয়োগ করায় ধানের গাছ হয়েছিল বেশ সুন্দর। কিন্তু পরবর্তীতে ধান ক্ষেতে দেখা দেয় বিভিন্ন ধরনের পোকা ও ইদুরের আক্রমন। পোকার আক্রমন ও গাছের গোড়া কেটে দেওয়ায় ধানের গাছ শুকিয়ে মরে যেতে শুরু করে। কৃষি অফিসের পরামর্শ মোতাবেক বেশ কয়েকবার সার ও কীটনাশক ব্যবহার করে কিছুটা অবস্থার উন্নতি হলেও সম্প্রতি কয়েকদিনের বৃষ্টি ও ঝড়ো বাতাসে হেলে পড়েছে বেশ কিছু জমির ধান।ইতমধ্যেই জমির ধান পাকতে শুরু করেছে কয়েকদিনের মধ্যে ধান কাটা শুরু হবে এমন অবস্থায় ধান হেলে পড়ায় ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে পড়েছেন কৃষকরা।
হিলির ইসমাইলপুরের কৃষক বাবুল হোসেন বলেন, এবছর ধান ক্ষেতে পোকার অত্যাচার খুব বেশী। স্থানীয় কৃষি অফিসের পরামর্শ মোতাবেক জমিতে তিন থেকে চারবার করে ওষধ প্রয়োগ করেছিলাম। পোকার আক্রমন থেকে বাচতে যে পরিমানে ওষধ প্রয়োগ করেছি তাতে করে ফল পাওয়া যাচ্ছেনা। এর পরেও অনেকটা ভালো অবস্থায় ফিরছিলো এর উপর যে মুহুর্তে ধান পাকবে সেই মুহুর্তে ঝড় বৃষ্টির কারনে ধানের গাছ মাটিতে পড়ে গেছে। এতে করে যে ধান হবে তা দিয়ে কৃষকের ধান কাটা মাড়াইয়ের টাকাই উঠবেনা এতে করে অনেক কৃষক ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে পড়েছে।
একই এলাকার কৃষক ইসরাফিল হোসেন বলেন, এবছর ধানের প্রচুর ক্ষতি, অন্যান্য বছরের তুলনায় এবছর কারেন্ট পোকার আক্রমনের হার বেশী। এর উপর লক্ষির গু খুব পরিমানে জমিতে দেখা দিয়েছে যার কারনে এবার কৃষকরা ধান নিয়ে খুব দুশ্চিন্তার মধ্যে পড়ে আছে। এর উপর ঝর বৃষ্টির কারনে অনেক জমির ধান পড়ে গিয়েছে হাওয়া বাতাশ ঢুকে যাওয়ার কারনে এই ধানের ফলন পাওয়া যাবেনা।
কৃষক আজমল হোসেন বলেন, এবারে ঠিক যখন ধান পাকবে সেই মুহুর্তে পানি আসায় আমাদের কৃষকদের প্রচুর ক্ষতি হয়ে গেলো। মাঠে বেশীরভাগ জমির ধান পাকে আসতিছে সেই ধান এখন কাটবো কিভাবে পানির মধ্যে। এর উপর বৃষ্টিপাত হওয়ায় অনেক জমির ধান হেলে পড়ে গিয়ে পানির মধ্যে ডুবে আছে এই ধানগুলোর ক্ষতি হয়ে গেছে। এবার আমাদের ধান চাষাবাদ করে কোন লাভ আসবেনা উল্টো অনেক ক্ষতি হবে। বিঘা প্রতি যে ধান পাওয়া যেত ২০ থেকে ২২মন করে এখন ধান হেলে পড়ায় পানিতে ডুবে যাওয়ায় ১০ থেকে ১২মন করে পাওয়া যেতে পারে। আমাদের ধান আবাদ করতে ১০হাজার টাকার মতো খরচ হয়েছে এখন ধানের যে অবস্থা তাতে করে হয়তো ৫/৬হাজার টাকা উঠবে এতে করে প্রতি বিঘাতে ৪/৫হাজার টাকা করে ক্ষতি হবে। এতে করে একদিকে যেমন উৎপাদনে ঘাটতি দেখা দিবে তেমনি আমাদের উৎপাদন খরচ উঠবেনা যা নিয়ে কৃষকরা দুশ্চিন্তায় পড়েছি।
হাকিমপুর উপজেলা কৃষি অফিসার ড.মমতাজ সুলতানা বলেন, চলতি মৌসুমে উপজেলায় ৮হাজার ১৫০হেক্টর জমিতে আমন ধান চাষাবাদ করা হয়েছে। বর্তমানে ধানের অবস্থা ভালো কয়েকদিন আগে তাপমাত্রা বেশী থাকায় পোকার আক্রমন যেভাবে ছিল এখন বৃষ্টিপাত হওয়ায় তাপমাত্রা কমে গিয়েছে। এতে করে পোকার যে বৃদ্ধির জন্য তাপমাত্রা দরকার সেটি তারা পাচ্ছেনা যার কারনে পোকার বৃদ্ধিপ্রাপ্তিটা কমে গিয়েছে যার কারনে ধানক্ষেতে পোকার আক্রমন কমে গিয়েছে। বর্তমানে ধান ক্ষেতে পোকার আক্রমন সহনীয় পর্যায়ে রয়েছে যেটা আমাদের ক্ষতিকর লেভেলে যাবেনা।বর্তমানে ধানের সার্বিক অবস্থা অনেক ভালো এতে করে ধানের উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ভালো ফলনের আশা করছি।