পেয়াজ আমদানি করে ক্রেতা সংকটের কারনে বিক্রি করতে না পেরে বিপাকে পড়েছেন দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দরের আমদানিকারকরা। ইতোমধ্যেই অতিরিক্ত গরমে গুদামে মজুদকৃত পেয়াজে পচন ধরছে গজিয়ে যাচ্ছে গাছ এতে করে অনেক পেয়াজ ফেলে দিতে হচ্ছে। যার কারনে বাধ্য হয়ে খানিকটা কম দামে পেয়াজ বিক্রি করতে হওয়ায় লোকশানে পড়েছেন বন্দরের আমদানিকারকগন। এদিকে কম দামে পেয়াজ কিনতে পেরে খুশি পাইকাড়সহ নিন্ম আয়ের মানুষজন। তবে আইপি না থাকায় বর্তমানে হিলি স্থলবন্দর দিয়ে পেয়াজ আমদানি বন্ধ রয়েছে।
হিলি বাজারে পেয়াজ কিনতে আসা সবুজ হোসেন বলেন, কিছুদিন আগে পেয়াজের দাম ছিল ১৪/১৫টাকা কেজি এতে করে আমাদের মতো সাধারন মানুষদের পেয়াজ কিনা বেশ ভালোই ছিল। কিন্তু বর্তমানে পেয়াজের দাম বেড়ে ২৫/২৬ টাকায় উঠে গিয়েছে ভালো মানের পেয়াজের দাম এর উপরে উঠে গেছে। একেতো সবজিনিসের দাম বেশী এর উপরে পেয়াজের দাম বাড়ায় আমাদের মতো মানুষদের বেশ সমস্যার মধ্যে পড়তে হচ্ছে। আমরা তো গরীব মানুষ দামটা কমায় দিলে আমাদের জন্য ভালো হয়। এখন দাম বৃদ্ধির কারনে আগে যেখানে ১ কেজি পেয়াজ কিনতাম এখন সেখানে হাফকেজি কিনতেছি।
হিলি বাজারের পেয়াজ বিক্রেতা মনিরুল আলম বলেন, বন্দর দিয়ে পেয়াজ আমদানি বন্ধের কারনে বাজারে ভারতীয় পেয়াজের উপর কিছুটা চাপ পড়েছে। যার কারনে আগে কম থাকলেও বর্তমানে ছোট আকারের পেয়াজ ২৪ থেকে ২৬টাকা বড় আকারে পেয়াজ ৩০ থেকে ৩৫টাকা বিক্রি হচ্ছে। বর্তমানে বাজারে দেশীয় পেয়াজের পর্যাপ্ত সরবরাহ রয়েছে যার কারনে দামো কম রয়েছে। প্রকারভেদে ১৬ টাকা থেকে ৩২টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে দেশীয় পেয়াজ যার কারনে ভারতীয় পেয়াজের বিক্রি তেমন নেই বললেই চলে।
হিলিতে আমদানিকারকদের গুদামে পেয়াজ কিনতে আসা আব্দুল মান্নান বলেন,আমি পার্শ্ববর্তী উপজেলার শালাইপুর থেকে হিলিতে গুদামে পেয়াজ কিনতে এসেছি। বাজারে তো ভালো পেয়াজের দাম বেশী যার কারনে গুদামে কম দামে পেয়াজ কিনতে এসেছি। তো এখানে গুদামে অনেক পেয়াজ পচে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে এগুলোর মধ্যে কিছু কিছু বাছাই করে ক্রয় করে নিয়ে যাচ্ছি। এর পর এগুলো বাড়িতে নিয়ে বাছাই করে ভালোগুলো নিব আর খারাপগুলো ফেলে দিবো। ভালোগুলোর মধ্যে কিছু বাসায় খাওয়ার জন্য রাখবো আর কিছু স্থানীয় বাজারে বিক্রি করবো।
হিলি স্থলবন্দরের পেয়াজ আমদানিকারক শাহরিয়ার আলম বলেন, সরকার ৫মে থেকে পেয়াজ আমদানির অনুমতি না দেওয়ায় বন্দর দিয়ে ওই দিন থেকে পেয়াজ আমদানি বন্ধ হয়ে যায় যা এখন পর্যন্ত অব্যাহত রয়েছে। তবে মে দিবস, ঈদুল ফিতুর ও সাপ্তাহিক ছুটির কারনে ১লা মে থেকে ৬ মে পর্যন্ত হিলি স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি রফতানি বন্ধের কারনে ৩০ শে এপ্রিল পর্যন্ত পুর্বের অনুমতি পাওয়া এলসির মাধ্যমে পর্যাপ্ত পরিমানে পেয়াজ আমদানি করেন আমদানিকারকগন। কিন্তু সেই তুলনায় ক্রেতা না থাকায় মোকামগুলোতে পেয়াজের তেমন চাহীদা না থাকার কারনে পেয়াজ বিক্রি না হওয়ায় আমদানিকারকদের গুদামে পর্যাপ্ত পরিমানে পেয়াজের মজুদ রয়েছে। এদিকে গতকয়েকদিন ধরে প্রচন্ড গরম আবার কখনো বৃষ্টির কারনে ইতোমধ্যেই গুদামে মজুদকৃত পেয়াজে পচন ধরে পেয়াজ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে আবার অনেক পেয়াজে গাছ গজিয়ে যাচ্ছে। ফ্যান দিয়ে শুকিয়ে তারপরে শ্রমিক লাগিয়ে পেয়াজ বাছাই করে ভালোমানের পেয়াজ পাইকাড়িতে ২৫/২৬টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। অল্প খারাপ পেয়াজ ১০/১২টাকা আর বেশী খারাপ পেয়াজ ৪/৫টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। কিছু পেয়াজ কমদামে বিক্রি করতে পারলেও অনেক পেয়াজ পচে নষ্ট হয়ে যাওয়ায় ফেলে দিতে হচ্ছে। কেউ কেউ অবশ্য এসব পেয়াজ ২/৩টাকা কেজি দরে বিক্রি করছে। বাড়তি দামে পেয়াজ আমদানি করে কমদামে বিক্রি করায় লোকশান গুনতে হচ্ছে আমাদের।
হিলি স্থলবন্দরের জনসংযোগ কর্মকর্তা সোহরাব হোসেন বলেন, হিলি স্থলবন্দর দিয়ে সর্বশেষ ৩০শে এপ্রিল ৬৮টি ট্রাকে ১হাজার ৯০২টন পেয়াজ আমদানি হয়েছিল। এর পর থেকে বন্দর দিয়ে পেয়াজ আমদানি সম্পুর্নরুপে বন্ধ রয়েছে। আইপি না থাকার কারনে বন্দর দিয়ে পেয়াজ আমদানি করছেননা বলে ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জেনেছি। পেয়াজ আমদানি বন্ধ থাকায় সরকারের রাজস্ব যেমন কমেছে তেমনি বন্দর কতৃপক্ষ ও শ্রমিকের যে দৈনন্দিন আয় সেটিও কমেছে।