খরার কারনে ধান রোপন করতে না পারলেও সম্প্রতি কয়েকদিনের বৃষ্টিতে দিনাজপুরের হিলিতে আমন ধান রোপনে ব্যাস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা। কিন্তু এরই মধ্যে দেখা দিয়েছে পটাশ সারের সংকট চাহীদামত না মেলার অভিযোগ কৃষকদের। দোকানীরা সার রেখে কৃতিম সংকট দেখিয়ে বাড়তি দাম নিচ্ছেন বলে অভিযোগ তাদের। এতে করে উৎপাদন খরচ বাড়ায় ধান চাষাবাদ করে লোকশানের দুশ্চিন্তায় পড়েছেন কৃষকরা। এদিকে নির্ধারীত মুল্যের চেয়ে বাড়তি দামে কেউ যাতে সার বিক্রি করতে না পারে সেবিষয়ে সতর্ক রয়েছে কৃষি বিভাগ।
উপজেলা কৃষি অফিস সুত্রে জানা গেছে, চলতি আমন মৌসুমে বৃষ্টিপাত বিলম্বিত হওয়ায় আমন ধান রোপন বিলম্ব হয়েছে। বর্তমানে পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত হওয়ায় কৃষকরা জোরেশরে ধান রোপনে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। চলতি আমন মৌসুমে উপজেলায় ৮হাজার ১৫৫ হেক্টর জমিতে আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। এ পর্যন্ত ৫৫ভাগ জমিতে আমন ধান রোপন সম্পুর্ন হয়েছে। এসপ্তাহের মধ্যেই সম্পুর্ন জমিতে ধান রোপন সম্পুর্ন হবে বলে আশাবাদ কৃষি বিভাগের।
হিলির ইসমাইলপুরের কৃষক আসলাম হোসেন বলেন, এতদিন আকাশের বৃষ্টিপাত ছিলোনা যার কারনে মাঠ ফেটে চৌচির হয়ে গিয়েছিল খরার কারনে আমরা ধান রোপন করতে পারিনি। কিন্তু গত তিন চার দিন ধরে বৃষ্টিপাত হওয়াতে মাঠে চাহীদামত পানি জমায় এখন আমরা ধান রোপন শুরু করে দিয়েছি। কিন্তু ধান রোপন করতে গিয়ে বর্তমানে সার নিয়ে নতুন সংকটের মধ্যে পড়ে গিয়েছি পটাশ সার পাওয়া যাচ্ছেনা। যে পরিমান জমিতে পটাশ সার প্রয়োজন সেই মোতাবেক সার পাওয়া যাচ্ছেনা। আর যে পরিমান সারের দাম তাতে করে কিভাবে আবাদ করবো সেটি নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়ে গেছি। যে সার সাড়ে ৭শ টাকা বস্তা ছিল সেই সার এখন হয়ে গেছে ১হাজার ৩শ টাকা এতদাম দিয়ে আমরা তো সার কিনতে পারছিনা। বিঘা প্রতি ৫ কেজি করে পটাশ সার সিলিপের মাধ্যমে নিতে হচ্ছে সেই সিলিপ নিয়েও মারামারির মত অবস্থা সিলিপ নিয়েও সার পাওয়া যাচ্ছেনা। আমরা যদি জমিতে পটাশ সার দিতে না পারি তাহলে আবাদ করবো কিভাবে। পটাশ সার যেন আমরা চাহীদামত ও সরকারি মুল্যে পাই সেই ব্যবস্থা গ্রহনের দাবী জানাচ্ছি।
একই এলাকার কৃষক ইব্রাহিম শেখ বলেন, বর্তমানে সবকিছুর দাম বেশী হয়ে গেছে যে ধান আমরা পুর্বে লাগাচ্ছিলাম ৮শ টাকা করে বিঘা কিন্তু এই কয়েকদিন ধরে অনাবৃষ্টির কারনে খরায় অনেক জমিতে ধান লাগাতে পারেননি কৃষকরা। বর্তমানে বৃষ্টিপাত হওয়ায় একসাথে সবকৃষকরা জমিতে ধান রোপন শুরু করে দিয়েছেন যার কারনে চাহীদামত শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছেনা। এই সুযোগে শ্রমিকরা তাদের মজুরি বাড়িয়ে দিয়েছেন বর্তমানে ১হাজার ২শ টাকা নিচ্ছেন ধান লাগানো। এতে করে আমাদের ধানের উৎপাদন খরচ বেড়ে যাচ্ছে কিন্তু সেই তুলনায় আমরা ধানের দাম তো পাচ্ছিনা।
ছাতনি গ্রামের কৃষক তসলিম উদ্দিন বলেন, আমাদের কৃষকদের অবস্থা খুব খারাপ আমরা সময়মত সার পাচ্ছিনা। দোকানদারগন সার রেখে দিয়ে বেশী দামে অন্যত্র বিক্রি করে দেয় আর আমাদেরকে বলে সার নেই চাহীদামত পাচ্ছিনা এরকম নানা সমস্যা দেখায়। সারের যে সরকারি মুল্য সেই মুল্যে যদি আমরা পটাশ সার পাইতাম ও আমাদের চাহীদামত সার পেতাম তাহলে আমাদের জন্য সুবিধা হতো।
স্থানীয় সারের দোকানী আজগর আলী বলেন, সব সারেরই দাম ও সরবরাহ ঠিক রয়েছে শুধুমাত্র পটাশ সার পাওয়া যাচ্ছেনা সেই সাথে এর দামটাও বেশী। সরকার দিচ্ছে বিঘা প্রতি ৫ কেজি করে কিন্তু কৃষকদের প্রয়োজন ১০ কেজি করে যার কারনেই আমাদের নিকট থেকে বাড়তি মুল্য দিয়ে সার কিনছেন কৃষকরা। যার কারনে আমরা বাহির থেকে বাড়তি দাম দিয়ে ক্রয় করে বাড়তি দামে বিক্রি করছি। পটাশ সারের দাম কিনতেই বেশী কখন কি দাম হচ্ছে বলা যাচ্ছেনা কয়েকদিন আগে ১হাজার ১৮০টাকা ক্রয় করলেও বর্তমানে ১হাজার ২শ টাকা বস্তা কিনতে হচ্ছে। তারপরেও চাহীদামত পাওয়া যাচ্ছেনা ১বস্তা বা ২ বস্তা করে পটাশ সার দিচ্ছে।
হাকিমপুর উপজেলা কৃষি অফিসার ড.মমতাজ সুলতানা বলেন, আমরা যে পরিমানে পটাশসহ অন্যান্য সারের বরাদ্দ পেয়েছি তা আমাদের নিবিড় মনিটরিং এর মাধ্যমে প্রত্যেকটি কৃষককে তার জমি যাচাই বাছাই করে তাদেরকে সেই পরিমান সার দেওয়ার ব্যবস্থা করছি। আমাদের সহকারী কৃষি কর্মকর্তাগন সার্বক্ষনিক মাঠে তদারকি করছেন। যার কারনে কৃষকরা সুষমভাবে সার পাচ্ছেন এতে করে উপজেলায় এখন পর্যন্ত ৩৪টন পটাশ সার মজুদ রয়েছে। সেই সাথে চলতি মাসের বরাদ্দকৃত সার তো রয়েছে। আমরা আশা করছি আমাদের উপজেলাতে সার নিয়ে কোন সমস্যা হবেনা। এছাড়া সরকার নির্ধারীত দামের চেয়ে বাড়তি মুল্যে যদি কেউ সার বিক্রি করে থাকে সেই ক্ষেত্রে আমরা কঠোর ভাবে ব্যবস্থা গ্রহন করবো। আমরা এবিষয়ে খুব জোরালোভাবে মনিটরিং করছি যাতে কেউ সরকারি দামের চেয়ে বাড়তি দামে কোন সার বিক্রি করতে না পারে।
প্রধান সম্পাদক: হুমায়ুন কবির রনি
মোবাইল: ০১৭১৬-৫৩০৫১৪
ইমেইল: onnews24@gmail.com
www.onnews24.com