দিনাজপুরের হিলিতে অধিকাংশ জমির বোরো ধান পেকে যাওয়ায় কৃষকরা ইতোমধ্যেই মাঠ থেকে ধান কর্তন শুরু করে দিয়েছেন। এতে করে এই ধান উঠানো ও শুকানোর জন্য ব্যবহৃত নেটের চাহীদা অনেকটাই বেড়ে গেছে। কৃষকরা তাদের চাহীদামত আকারের নেট তৈরি করে নিতে দর্জিদের নিকট ভিড় করছেন। এতে করে কাজ বেড়ে যাওয়ার কারনে দৈনন্দিন আয় বাড়ায় দারুন খুশি তারা।
বৃহস্পতিবার সরেজমিন হিলি বাজারের কাপড়পট্টি ঘুরে দেখা গেছে, সেখানে অবস্থানরত ৮জন দর্জি সকাল থেকে শুরু করে সন্ধ্যা পর্যন্ত কৃষকদের চাহীদামত নেট তৈরি করে দিতে ব্যাস্ত সময় পার করছেন। কোন কোন দর্জি বাড়তি আয়ের জন্য রাত পর্যন্ত কাজ করছেন। হিলিসহ আশেপাশের বিভিন্ন অঞ্চলের কৃষকরা এসে তাদের চাহীদামত সাইজের নেট তৈরি করে নিয়ে যাচ্ছেন।
হিলি বাজারে নেট তৈরি করতে আসা কৃষক জাহাঙ্গির হোসেন বলেন, চলতি মৌসুমে ৭ বিঘা জমিতে বোরো ধান রোপন করেছি। ইতোমধ্যেই আমার জমির অধিকাংশ ধান পেকে গিয়ে তাই ধান কাটার প্রস্তুতি নিয়েছি। কিন্তু ধান কেটে নিয়ে যেখানে রাখবো বা মাড়াই করবো সেরকম আশেপাশে চাতাল বা খলা নেই। যার কারনে সড়কের পার্শ্বে ধান কেটে নিয়ে এসে রেখে মাড়াই করতে হবে। আর শুধু মাটির উপর ধান রাখলে অনেক ধান মাটিতে ঝড়ে পড়ে নষ্ট হয়। তাই বাজার থেকে নেট কিনে তা দর্জির নিকট নেট বানিয়ে নিতে এসেছি। এটিতে ধান রাখলে কোন ধান নষ্ট হবেনা। তারপরে মাড়াই শেষে এই নেটেই ধান শুকানোর কাজ করা যায়। দোকান থেকে প্রতিটি নেট ১হাজার ২শ টাকা থেকে দেড়হাজার টাকা করে ক্রয় করে পছন্দমত সাইজের নেট সেলাই করে নিচ্ছি। আমার মত অনেক কৃষক ধান কাটার আগে ভাগে এসে এসব কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। তবে এবারে নেটের দাম যেমন বেড়ে গেছে তেমনি নেট বানানোর মজুরি অনেকটা বেড়ে গেছে।
হিলি বাজারে নেট সেলাইরত দর্জি আনোয়ার হোসেন বলেন, কয়েকদিন হলো হিলিতে বোরো ধান কাটা মাড়াই শুরু হয়েছে। যার কারনে কৃষকরা ধান উঠানো ও শুকানোর কাজে ব্যবহারের জন্য নেট বানিয়ে নিতে ভিড় করছেন। সকাল থেকে শুরু করে সন্ধ্যা পর্যন্ত কাজ করে আমরা তাদের পছন্দমত সাইজের নেট তৈরি করে দিচ্ছি। নেট তৈরির এত চাপ যে অন্য কাজ করার সময় পাচ্ছিনা। কয়েকদিন ধরেই এমন অবস্থা এতে করে আমাদের আয় রোজগার ভালোই হচ্ছে।
অপর দর্জি আব্দুর রাজ্জাক বলেন,গতকয়েকদিন ধরেই ধান শুকানোর জন্য নেট বানানোর কাজের বেশ চাপ বেড়েছে। দিনে ৪/৫টি করে নেট তৈরি করে নেওয়ার চাহীদা থাকলেও সারাদিন কাজ করে সর্বোচ্চ ২টি নেট সেলাই করতে পারছি। কেউ কেউ সন্ধ্যার পর পর্যন্ত কাজ করে ৩টি পর্যন্ত নেট সেলাই করছে। তবে গতবছর এসব নেট বানানোর মজুরি ছিলো আড়াইশো থেকে তিনশো টাকা করে। কিন্তু এবারে সুতার দাম বেড়ে যাওয়ায় প্রতিটি নেট আকারভেদে ৪শ থেকে সাড়ে ৪শ টাকা নেওয়া হচ্ছে। একসপ্তাহের বেশী সময় ধরে কাজের বাড়তি চাপ রয়েছে এতে করে আমাদের দর্জিদের আয় রোজগার ভালোই হচ্ছে। আগামী আরো একসপ্তাহের বেশী সময় ধরে কাজের এমন চাপ থাকবে।