দিনাজপুরের হিলিতে পানের চাহীদা না থাকায় ও ক্রেতা সংকটের কারনে পানের দাম না পেয়ে পান বিক্রি করতে না পেরে হতাশ হয়ে পড়েছেন পান চাষীরা। লাভের আশায় পান চাষাবাদ করলেও পানে নানা ধরনের রোগ বালাইয়ের পাশাপাশি এখন পানের দাম না পেয়ে পুজি হারানোর শংকায় রয়েছেন তারা। এদিকে পানের দাম কমায় খুশি বাজারে পান কিনতে আসা পাইকারগন।
হিলির ভারত সীমান্তবর্তী এলাকা ঘাসুড়িয়া নন্দিপুর, মাধবপাড়া এলাকায় বিস্তির্ন এলাকা জুড়ে পানের বরজ গড়ে উঠেছে। এই এলাকার ৩৭ হেক্টর জমিতে ৩৬৫টি পানের বরজ রয়েছে, পুরো উপজেলার মধ্যে এই অঞ্চল শুধুমাত্র পান চাষের উপর নির্ভরশীল। স্থানীয় চাহীদা মেটানোর পাশাপাশি এই এলাকার পানের ব্যাপক চাহীদা রয়েছে দেশের বিভিন্ন এলাকায়। গতবছর যে প্রতি পোয়া (৪০বিরা) পানের দাম ছিল ৩হাজার ৬শ থেকে ৪ হাজার ২শ টাকা ছিল সেই পান এখন বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার টাকা থেকে শুরু ১হাজার ৪শ টাকা পর্যন্ত ভালো মানের পান। আর চিকন পান ১শ থেকে ২শ টাকা, অনেকে পানের ক্রেতা না থাকায় বিক্রি করতে না পারায় অনেকে পান ফেলেও দিচ্ছে।
হিলির পানহাটিতে পান কিনতে আসা পাইকার আনিসুর রহমান বলেন, গতহাটের চেয়ে এই হাটে পানের দাম একটু কম। গতহাটে যে পান কিনেছিলাম ২০টাকা বিরা আজ সেই পান ১০টাকা বিরা। আর পানের দাম কম হলে আমাদের জন্য একটু সুবিধা হয়। আমরা বেশী বেশী করে পান কিনতে পারি তা দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠাতে পারি এতে করে লাভের পরিমানটা একটু বেশী হবে।
পান কিনতে আসা অপর পাইকার আব্দুল মান্নান বলেন, এই হাটে পানের বাজার একটু কম গতহাটের পানের বাজার বেশী ছিল বেশী দামের কারনে আমরা পান কিনতে পারিনাই আজকে দাম একটু কমের কারনে একটু বেশী পরিমান কিনেছি। এরকম দাম থাকলে আমাদের জন্য একটু সুবিধা তেমনি ক্রেতাদের সুবিধা হয়। বর্তমানে পানের দাম কম মুলত বরজে পচারিসহ পানের বিভিন্ন রোগ দেখা হওয়ায় পানের মান খারাপ হওয়ার কারনে আগে দেশের বিভিন্ন স্থানে এই পান গেলেও এখন চাহীদা কমের কারনে পানের দাম কমছে।
পান বিক্রি করতে আসা ধরঞ্জয় বর্মন বলেন, পানের বাজার দিন দিন খারাপ হচ্ছে, গতহাটের চেয়ে এই হাটে পানের দাম পোয়া (৪০বিরা) প্রতি ৪ থেকে ৫শ টাকা নেই। আবহাওয়ার কারনে পানের বরজে গোড়ায় পচন ধরায় ও পাতা পচা রোগ ধরায় পানে দাগ ধরছে পান ঝড়ে পড়ছে এতে করে আমরা ক্ষতির মুখে পড়ছি। আবার পানের গুনগত মান খারাপ হওয়ায়, বাজারে পানের দাম পাচ্ছিনা। বাজারে পানের আমদানি বেশী হওয়ায় ও চাহীদা না থাকায় আমরা পানের ন্যায্যমুল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছি। পানের বরজ করতে বাশ সরঞ্জাসহ অন্যান্য উপকরনের দাম বাড়লেও পানের দাম নেই এতে করে আমরা আর্থিক ক্ষতির মধ্যে পড়ে যাচ্ছি। একবিঘা মাটির একটি বরজ করতে এক থেকে দেড় লাখ টাকার মতো খরচ হয় আর আমরা এখন পান বিক্রি করছি মাত্র ৬০ থেকে ৮০ হাজার টাকার মতো এতে করে আমাদের লাভ তো দুরে থাকলো ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকার মতো লোকশান হচ্ছে আমাদের।
অপর পান বিক্রেতা চন্দন কুমার ও আশরাফুল ইসলাম বলেন, আমরা পান চাষ করে এখন যে অবস্থা দাড়িয়েছে যা বলার মত নয়। হাটে পান বেচাকেনা নেই বললেই চলে, সকাল থেকে পান নিয়ে হাটে এসে ৩ থেকে ৪ঘন্টা বসে থাকলেও পান বিক্রি হচ্ছেনা। আবহাওয়ার কারনে না কি কারনে আমাদের পান একেবারেই চলছেনা বাজারে পানের আমদানি বেশী কিন্তু ক্রেতা নেই এতে করে আমাদের পানচাষীদের খুব সমস্যার মধ্যে পড়তে হচ্ছে। এই পান কি আমাদের চলবে কি চলবেনা, লাভের আশায় পানের বরজ করে এখন তো পান আমাদের জন্য গলার কাটা হয়ে দাড়িয়েছে। এক পোয়া চিকন পান বাজারে বিক্রি করতে হচ্ছে ১শ থেকে ২শ টাকা অথচ সেই এক পোয়া পান বরচ থেকে তুলতে আমাদের খরচ হচ্ছে ২শ টাকা সেই টাকাও উঠছেনা।
হাকিমপুর উপজেলা কৃষি অফিসার ড.মমতাজ সুলতানা বলেন, আসলে করোনা কালীন সময়ে বাজার সেভাবে না চলার কারনে কৃষকরা তাদের পানগুলো বরজ থেকে না উঠিয়ে বরজেই রেখে দিয়েছিলেন। বর্তমানে একসাথে সকল কৃষকরা তাদের বরজ থেকে পান উত্তোলন করার কারনে একসাথে অনেক পান বাজারে আসার কারনে হয়তোবা পানের দামটা কমে গেছে। আমরা আশা করতেছি এটাও খুব দ্রæত স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসবে। আমাদের এই অঞ্চলে পান সংরক্ষনের কোন ব্যবস্থা নেই তবে কৃষকদের দরকার হলে তারা গাছেই তাদের পানগুলো বেশি দিন রেখে সংরক্ষন করে থাকেন।
আহসানুজ্জামান সোহেল/অননিউজ24।